পিরোজপুর উপকূলে অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের লবন পানিতে সাত উপজেলার কৃষি ও জনজীবনে বিপর্যয়
[su_slider source=”media: 50,49″]গত সপ্তাহ জুড়ে অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের লবন পানির প্লাবনে উপকূলীয় পিরোজপুরের সাত উপজেলার কৃষি ও জনজীবনে চরম বিপর্যস্ত অবস্থা বিরাজ করছে। এতে এলাকার হাজার হাজার মানুষ সাত দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলার তিন উপজেলার ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকে গত কয়েক দিনে জেলার অন্তত অর্ধশত গ্রামের কৃষি জমি লবন পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ইরি আবাদ ও আমন বীজতলা পচে নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলাসহ বিভিন্ন সময় নদীভাঙনের ফলে মঠবাড়িয়া, জিয়ানগর ও ভান্ডারিয়ায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। দির্ঘ দিনেও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় এখন বেড়িবাঁধের ওই সকল ভাঙা স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে বাড়িঘর প্লাবিত হচ্ছে। এতে কৃষি জমিতে অব্যহতভাবে লবন পানির আগ্রাসন ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রবল বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারে জেলার জিয়ানগর উপজেলার খোলপটুয়া, পূর্বচন্ডীপুর, পশ্চিম কলারোনসহ সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি মঠবাড়িয়া উপজেলার চর ভোলমারা, দক্ষিণ বড় মাছুয়াসহ ১৭টি গ্রাম, ভান্ডারিয়া উপজেলার ১০টি গ্রাম ও কাউখালী উপজেলার ১৮টি গ্রাম প্ল¬াবিত হয়।
অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে সদর উপজেলার শংকরপাশা, কলাখালী, শারিকতলা,কুমিরমারা আবাসন এলাকা ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে যাওয়ায় গ্রামের নিন্ম আয়ের মানুষ জন কাজে বের হতে না পারায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
ভান্ডারিয়া উপজেলায় গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভান্ডারিয়া শহরের দক্ষিণ ভান্ডারিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা। এর ফলে খেটে খাওয়া মানুষসহ স্কুলÑকলেজগামী শিক্ষর্থীরা পড়েছে বিপাকে। প্রতিদিনের কাজকর্মে নেমে এসেছে স্থবিরতা। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বেড় হচ্ছেনা। এদিকে, উপজেলার ফসলী জমিতে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই উপজেলার পুর্ব বন্দর হাটুজলে ভেসে উঠে এবং জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে দূর্ভোগের শিকার হয় ব্যাবসায়ী ও বাজারে আসা মানুষ। কঁচা ও পোঁনা নদীর পানি বৃদ্ধির কারনে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে আতংঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বন্দরের জনসাধারন বলেন, বন্দরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপরিকল্পিত ও নাজুক হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পরিবর্তে উল্টো নদীর পানি ড্রেনে প্রবেশ করে বন্দর প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে। ’
ভা-ারিয়ার ভিটাবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মৃধা জানান, ভিটাবাড়ীয়ার জেলেপল্লীসহ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে বিপদসীমায় পৌছেছে। এলাকার কৃষি জমিতে লবন পানি ঢুকে পড়ছে।
কাউখালী উপজেলার আমরাজুড়ি ইউপির চেয়ারম্যান কৃষ্ণ লাল গুহ জানান, আমরাজুড়ি ইউনিয়নের সোনাকুড়, হরিণধরা, আশোয়া গ্রামের চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধের চার থেকে পাঁচটি ভাঙা স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফয়জুল কবির বলেন, জোয়ারে জিয়ানগরের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। পানিতে আমন ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার চর ভোলমারা বেড়িবাঁধের জলকপাটের (স্লুইসগেট) ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ভেতরে ঢুকে পড়ায় চর ভোলমারা ও দক্ষিণ বড় মাছুয়া গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বড় মাছুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আশ্রাফ আলী বলেন, দুই বছর আগে চর ভোলমারা গ্রামের বেড়িবাঁধের ৫০০ মিটার ভেঙে গেছে। এতে ভোলমারা খালের জলকপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকছে।
দাউদখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস শুক্কুর তালুকদার জানান, খায়ের ঘটিচোরা গ্রামের বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া দুটি স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পিরোজপুর কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী উজ্জ্বল সেন সাংবাদিকদের বলেন, ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু বরাদ্ধ না পাওয়ায় বাধ গুলো সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছেনা।