হরিরামপুর চরে শীত মৌসুমে বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদ
হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন
আপন গতিশীলতায় নদীর বুকে অথবা মোহনায় পলি জমাট ঁেবধে জন্ম নেয় চর। সীমিত ভূ-ভাগের বাংলাদেশে দেশে গড়ে ওঠা চরগুলো প্রায়ই নতুন বসতি স্থাপনের এবং নতুন কৃষিজমি তৈরির সুযোগে করে দেয়। মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নটির চারপাশ ঘিরে পদ্মা নদী যা এই ইউনিয়নকে মূলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপচর পরিণত করেছে। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরেরও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এখানকার চরবাসী কৃষকরা শুরু করেছেন বৈচিত্র্যময় শস্য-ফসলের চাষাবাদ।
মানিকগঞ্জের নিম্নগঙ্গা প্লাবনভূমিতে পদ্মা নদী নিয়মিতভাবে বন্যার সময় ভাঙে এবং নতুন নতুন চরভূমি গঠনের মাধ্যমে তার গতিপথ পরিবর্তন করে। এমনিভাবে পদ্মা নদীর করালগ্রাসে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে লেছড়াগঞ্জ এক সময় পদ্ম্ার গর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে এই দ্বীপসহ অন্যান্য চরে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর শীত মৌসুমের শুরুতেই চরবাসী কৃষকরা এখন ফসলের মাঠে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন। নারী-পুরুষ মিলে এখানকার কৃষক-কৃষাণী ফসলের মাঠে কাজ করছেন। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা চাষাবাদ শুরু করেছেন। ডাল, তেল ও মসলা জাতীয় ফসলসহ গম, পায়রা, কাউন, চিনা সহ নানা রকম শীতকালীন শাকসব্জি যেমন লালশাক, ডাটা বেগুন, মরিচ, টমোটো, শিম, লাউ, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, রবরটি চাষ করছেন। খরিয়ার চরের কৃষক মো. ইসমাইল জানান, তিনি পিঁয়াজের সাথে করলার মিশ্র চাষবাদ করেছেন। পাশাপাশি ২০ শতক জমিতে মিষ্টি কুমড়াও চাষ করেছেন। পাটগ্রামচরের কৃষক মোচন মিয়া বলেন, ‘চরে কেউ নিজ জমি, কেউবা বর্গা কেউবা সনকরালি হিসাবে নিয়ে ফসল চাষ করছেন।’ তিনি নিজে ৬৬ শতক জমিতে টমেটো, ফুলকপি, বরবটি, বেগুন, আলু, লাউ, লালশাক, মুলা ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে কপি, ধনিয়াপাতা, লাউ মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার টাকার শাকসব্জি বিক্রি করেছেন, নিজে খেয়েেেছন এবং পাড়াপ্রতিবেশি ও আত্মীয়স্বজনদের দিয়েছেন।
পদ্মা নদীর চলার পথের বাঁকে বাঁকে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে প্রান্তিক মানুষেরা গড়ে তুলেছেন বসতি। পদ্মার ভাঙা-গড়ার প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয় দ্বীপচরের মানুষদের। এজন্য প্রকৃতিই যেন মানুষদের সংগ্রামী হিসাবে তৈরি করে। চরের প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানই তাদের জীবনধারনের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। বন্যায় বয়ে আনা পলি মাটির উর্বর বুকে ফসলের চাষ চরবাসীর জীবন জীবিকার অন্যতম উপায়। চরাঞ্চলে ভালো ফসল জন্মে, প্রয়োজন হয় না রাসায়নিক সার বিষের। তাই ফসল উৎপাদন খরচ কম হয় ।
পরিবেশ-প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, লোকায়তজ্ঞানও প্রাকৃতিক সম্পদে প্রান্তিক মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ে বেসরকারী উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ২০১০ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা দ্বীপচর ও মূল ভুখন্ডের প্রান্তিক গ্রামীণ, পেশাজীবী জনগোষ্ঠি, শিক্ষার্থী, যুব-তরুণ, সাংবদিক, নাগরিক সমাজের সাথে এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশগত সংকট, শস্যবৈচিত্র্য বাড়ানো ও চর জনগোষ্ঠীর দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নানাবিধ উদ্যোগে সহায়তা, পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে ‘জন-নেতৃত্বে উন্নয়ন’ পন্থায় বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।