দারিদ্রতা দূর হল আকলিমার দক্ষতায়

কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে আল্পনা নাফাক
নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের একটি গ্রাম বামনগাও। এই গ্রামের বাসিন্দা আকলিমা বেগম। বয়স ৪৫ বছর। পেশায় একজন গৃহিনী। কিন্তু গৃহিনী হওয়া সত্ত্বেও বাড়ির অন্যান্য কাজের পাশপাশি সেলাই কাজটি করে থাকেন। স্বামী কৃষি কাজ করেন। এক ছেলে ও তিন মেয়ে এ নিয়ে তার সংসার।
আকলিমা বেগমের বিয়ে হয়েছিল খুবই সাধারণ একটি পরিবারে। স্বামী জয়নাল মিয়ার জমি জমা আছে মাত্র ৩২ শতাংশ। নিজের জমি ও অন্যের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে তাঁর স্বামী কৃষিকাজ করেন, যা দিয়ে তার পরিবার কোন রকম চলে। তাঁর স্বামী কৃষি কাজের পর যে মৌসুমী ভিত্তিক বেকার সময়টা থাকে সে সময়ে তিনি ঢাকায় গিয়ে অন্য কোন কাজ করে সংসার চালান। এই ভাবেই চলতো আকলিমা বেগমের সংসার। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে যখন বড় হতে লাগল তখন সংসারের অভাব অনটন লেগেই থাকতো। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করা খুবই কষ্টের ছিল।

আকলিমা বেগম ২০০৭ সালে কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিন মাসের সেলাই প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি সেলাই শুরু করেন। গ্রামের নারীদের পোশাক তৈরি করেন। অভাবের কারণে বাড়িতে দোকানের মত কাপড় রেখে কাজ শুরু করতে পারছিলেন না। শুধু মাত্র সেলাই করতেন এবং সেলাই এর মজুরি নিতেন। নারীরা নতুন কাপড় বাজার থেকে এনে দিতেন তার কাছে জামা তৈরির জন্য। এমনিভাবে চলতে থাকে তাঁর সেলাই এর কাজ। আকলিমা বেগমের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাড়িেেত দোকানের মত কাপড় রেখে বিক্রি করতে পারছিলেন না। কারণ স্বামীর পাশাপাশি সেলাই করে যা টাকা পান তা দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ কোনভাবে চালাতেন।


কলমাকান্দা উপজেলায় ২০১২ সালে বারসিক এর কার্যক্রম শুরু হয়। আকলিমা বেগম বারসিক’র বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন সচেতনতামূলক আলোচনা ও প্রশিক্ষণে আগ্রহ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। তার দক্ষতা দেখে আকলিমা বেগমকে বারসিক এর পক্ষ থেকে গজ কাপড় সহযোগিতা করা হয় ২০১২ সালে।
আকলিমা বেগম সেই কাপড় বিক্রি ও সেলাই এর টাকা মিলে বেশ ভালো টাকা আয় করতে শুরু করেন। বাড়িতে যখন দোকানের মত কাপড় রাখা শুরু করেন তখন থেকে গ্রামের নারীরা তার কাছ থেকে কাপড় কিনে সেলাই করতেন। প্রতিবেশী হাজেরা বেগম বলেন, “বাড়ির কাছে এহন কাপড় ও সেলাই করা দুইদাই পাই তাই বাজারে যাওয়ন লাগে না”।


প্রতিবেশী নাজনীন বেগম বলেন, “আকলিমা বেগম নারীদের সব করমের জামা সেলাই করতে পারেন তাই এহেন এলাকার নারীরা তার কাছেই সব রকমের জামা সেলাই করে নেয়”।


আকলিমা বেগম বলেন, ‘এই সহযোগিতা পাওয়ার পর আমি লাভের টাকা দিয়ে আরো নতুন করে কাপড় কিনেছি। কাপড় বিক্রি ও সেলাই এর টাকা দিয়ে চার ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি। এখন বড় ছেলে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছে। বড় মেয়ে অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছে। মেজ মেয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে এবং ছোট মেয়ে এইচ এসসি পরীক্ষার্থী।’ আকলিমা বেগম আরও বলেন, ‘বারসিক এর কাছ থেকে যদি সহযোগিতা না পাইতাম তবে হয়তো আমি আমার সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারতাম না। এখন আমার ৪ সন্তানই শিক্ষিত হয়েছে। সেলাই শুধু আমিই করি তা না। আমি আমার মেয়েদেরকেও সেলাই শিখিয়েছি। তারাও এখন আমার সাথে সেলাই করে। মাঝে মধ্যে আমি শুধু কাপড় কেটে দিই সেলাই করে আমার মেয়েরা। সন্তানদেরকে শিক্ষিত করার পাশপাশি হাতের কাজও শিখাচ্ছি যাতে করে তাদের ভবিষ্যত জীবনে কাজে লাগে।’
প্রত্যেক মানুষের জীবনের জন্য কারিগরি দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে জীবনে সুখের সন্ধান পাওয়া যায়। যার প্রমাণ আকলিমা বেগম।

happy wheels 2

Comments