দিন বদলের আশা দেখছেন আফরোজা খাতুন
গোপাল সরকার, (খাজরা, আশাশুনি) সাতক্ষীরা
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দ্রুতই বদলাতে থাকে সাতক্ষীরার আশাশুনির খাজরা কপতাক্ষ পাড়ের আফরোজা খাতুনের পরিবারের। আইলা, সিডর, আম্পানের মত সাইক্লোনগুলোর কারণে লবণাক্ততা, কাজের সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় এক প্রকার দিশেহারা আফরোজা খাতুনের পরিবার। এলাকায় কাজের তীব্র সংকটের কারণে তিনবেলা খাওয়া জোটেনা আফরোজাদের। তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন রোগবালাইসহ নানা সমস্যা। তবে ২০২১ সাল থেকে অল্প অল্প করে পরিবর্তন হতে থাকে আফরোজাদের দুঃখগাঁথা। স্বামীর পাশাপাশি আফরোজা এখন নিজেই পরিবারে আয়ের উৎস তৈরি করেছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় ও বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প মাধ্যমে।
আফরোজা খাতুনের স্বামী বজলুর রহমান একজন দিনমজুর। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ৪ জনের সংসার তাদের। স্বামী দিনমজুরের কাজ করলেও আগের মত তেমন কাজ হয় না। তাই বাধ্য হয়ে আফরোজা খাতুন অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। এই আয় দিয়েই ৯ম শ্রেণীতে পড়া ছেলে ও ২য় শ্রেণীতে পড়া মেয়ের পড়ালেখা করানো ও তিনবেলা খাবার জোগাড় করতেন। এভাবে নানা সমস্যা ও অভাব-অনটনে চলতে থাকে কপোতাক্ষ পাড়ের আফরোজাদের সংসার।
কিন্তু আফরোজা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পরিবেশ প্রকল্পে পিরোজপুর সিএসও’র সদস্য হিসেবে যুক্ত হন তিনি এবং একই বছর অক্টোবর মাসে প্রকল্প থেকে ১৩,৫০০ টাকা সমমূল্যে ২টি ছাগল, ২টি ভেড়া, একটি হাঁস ও কিছু সবজির বীজ পান। আর এদিয়েই নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের বীজ বপন করতে শুরু করেন তিনি। বর্তমানে আফরোজার ৭টি ছাগল, ২টি ভেড়া, ৭টি হাঁস রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০,০০০ টাকা। এক বছর যেতে না যেতেই ১৩,৫০০ টাকা থেকে প্রায় ৫০,০০০ টাকার সম্পদ তৈরি হওয়াতে খুশি আফরোজার পরিবার।
আফরোজা খাতুন জানান, নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় ও বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প থেকে দেওয়া সম্পদ থেকে তিনি এখন অর্ধলক্ষ টাকার সম্পদ তৈরি করেছেন। এছাড়া ৭টি হাঁসে নিয়মিত ডিম পাড়ছে যা থেকে কিছু বিক্রি করেন ও কিছু পরিবারের চাহিদা মেটান। এছাড়াও প্রকল্প থেকে পাওয়া বীজ বাড়ির আঙিনায় পড়ে থাকা এক শতক জায়গাতে লাগিয়েছেন যেখান থেকে সবজি নিজে খাচ্ছেন এবং বিক্রিও করছেন। ডিম ও সবজি যেমন অর্থ দিচ্ছে তেমন পারিবারিক পুষ্টির চাহিদাও মেটাচ্ছে।
আফরোজা আরো জানান, প্রকল্প থেকে সম্পদ পাওয়ার পর অন্যের বাড়িতে আর কাজ করেন না তিনি। এখন এই সম্পদগুলো দেখাশুনা করছেন। কারণ এখানেই তিনি স¦প্ন দেখছেন দিন বদলের। সম্পদ বৃদ্ধি করে তিনি নিজের বসতবাড়ি সংস্কার করাসহ ছাগল পালনের সাথে গরু পালন করতে চান। আর এভাবেই নিজের পরিবারের পরিবর্তন আনতে চান আফরোজা খাতুন।