![শবনমের প্রসংশায় সবাই পঞ্চমুখ](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2018/05/popy.jpg)
শবনমের প্রসংশায় সবাই পঞ্চমুখ
চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু
যদি দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ২ কোটি মানুষ ও মানবিক হতো তবে কি আমি ভাইরাল হতাম? আমি আমার এ কাজটিকে অসাধারণ মনে করি না। সব সময় চেষ্টা করি ভালো কাজ করার। আমার কাজ হয়তো পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়েছে। আল্লাহতাওয়ালা সম্মান দেওয়ার মালিক। মানুষকে আকৃষ্ট করতে আমি কাজটি করিনি। মানুষ হিসেবে আমি কেবল আমার কর্তব্যটুকু পালন করেছি। সবারই তার নিজ নিজ কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করা উচিত। আমার দায়িত্ববোধ থেকে এ কাজটি করেছি। মাত্র একুশ সেকেন্ডের একটি ভিডিও যে মানুষকে এতটা আকৃষ্ট করবে তা আমি কখনো ভাবিনি। আমার স্যাররা, পরিচিত অপরিচিত অনেকে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। আমাকে সোশ্যাল মিডিয়ার আদর্শ বা রোল মডেল ভেবে অনেকে আমাকে নিয়ে যে ভালো ভালো কমেন্ট করেছেন তার জন্য এখন আমার ভালো লাগছে। এটি একটি পজেটিভ দিক।” আলাপকালে ডিএমপির তেজগাঁও থানার পুলিশের উপ পরিদর্শক ও পাবনার চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথর গ্রামের মৃত মোকছেদ আলীর মেয়ে শবনম আক্তার পপি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
গত ২২ এপ্রিল রবিবার ঢাকার মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে নিচে নামার সময় ভিআইপি পরিবহনের বাস ব্রেক ফেইল করায় যখন দশটি গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পতিত হয় তখন ওয়্যারলেস বার্তা পেয়ে ডিউটিরত অবস্থায় এ্যাপোলে সিক্স ওয়ান এলাকা থেকে মহাখালী ছুটে যান ডিএমপির তেজগাঁও থানার পুলিশের উপ পরিদর্শক ও পাবনার চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথর গ্রামের মৃত মোকছেদ আলীর মেয়ে শবনম আক্তার পপি। তখন মাঝ রাস্তায় উল্টে ছিল গাড়ি। পথ ছিল বন্ধ। ফার্স্ট এইডে প্রশিক্ষণ নেওয়া শবনম আক্তার পপি রাস্তায় আহতাবস্থায় পরে থাকা গাড়ি চালককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পাশর্^বর্তী এলাকা থেকে বরফ সংগ্রহ করে ক্ষতস্থানগুলোতে বরফের প্রলেপ দেন। তার পা বেঁধে দেন গামছা দিয়ে। বাসের ব্রেক কাজ করছে না জেনেও ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালনায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শবনম আক্তার পপি বাসটি চালিয়ে রাস্তা থেকে সড়িয়ে নিয়ে যানজট মুক্ত করেন। আহতদের উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া, যানজট মুক্ত করতে শবনমের অক্লান্ত পরিশ্রম দেখে উপস্থিত মানুষ হতবাক হয়ে যান। পুলিশ সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক ধারণা পাল্টে যায়। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল পরে যায়।
রহমান আজিজ নামক এক ব্যক্তি তার প্রশংসা করে লেখেন “পুলিশ জনগণের বন্ধু সেটা পপি আপা দেখালেন। তবে সব পুলিশ যদি এমন হতো তবে বদলে যেত বাংলাদেশ”। হাসান ইমাম মন্তব্য করেন, “শত সহ¯্র সালাম সেসব পুলিশ সদস্যদের যারা সত্যিকারের পুলিশের সম্মান রেখে জনগণের সেবা করে। এদের কাছ থেকেওতো খারাপ পুলিশরা কিছু শিখতে পারে”। ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের গুলশান অঞ্চলের ডেপুটি কমিশনার মোস্তাক আহম্মেদ তার ফেসবুক পোষ্টে লেখেন, “সড়ক দূর্ঘটনায় আহত একজন পথচারীর পায়ের শশ্রুষা করছেন একজন পুলিশ সদস্য। এই ছবি শুধু পুলিশের সেবার কথা বলে না পরিবর্তনের কথা ও বলে। শ্রদ্ধা।
শবনম আক্তার পপি তার কাজের পুরষ্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন মানুষের ভালবাসা। ৭ মে সোমবার এস আই শবনমের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন পুলিশের আই জিপি ড.মোঃ জাবেদ পাটোয়ারী। পুরষ্কার প্রদানকালে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, “শবনম দূর্ঘটনার শিকার পিকাপ ভ্যানের চালককে উদ্ধার করে, প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে, ট্রাফিক পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। সে মানবিকতার যে নজির স্থাপন করেছে এতে পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বেড়েছে”।
শবনমের মা খাদিজা বেওয়া বলেন, “প্রায় ২০ বছর পূর্বে আমার স্বামী মারা যায়। যুদ্ধ করে মেয়েদের মানুষ করেছি। সব সময় ভালো কাজ করার পরামর্শ দিয়েছি। শবনম ছোট বেলা থেকেই দায়িত্বনিষ্ঠা। স্কুল জীবনে খেলা ধুলায় খুব ভালো ছিল। আমার আরেক মেয়ে শাহনাজ সুলতানা শিল্পী পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর, অপর মেয়ে শাহিদা সুলতানা লিপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং ছেলে খলিলুর রহমান সেটেলমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত।” ছেলে মেয়েদের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হন তিনি।
শবনম আক্তার পপি আরো বলেন, “১৯৯৮ সালে এসএসসি, ২০০০ সালে এইচএসসি এবং পরে বিএ পাশ করি। ২০০১ সালে আমি পুলিশে যোগ দেই। শবনম আক্তার পপি সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার স্যার আমাকে নিয়ে ফেসবুকে যে পোষ্টটি দিয়েছেন, সেটি আমার অন্তর ছুয়ে গেছে।”
এখনো চাটমোহরের মানুষ পথে ঘাটে দোকান পাটে সর্বত্র শবনমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
** ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত