আরটিআই আবেদনের প্রেক্ষিতে মাতৃত্বকালীন ভাতা পেলেন তাপসী মন্ডল

আরটিআই আবেদনের প্রেক্ষিতে মাতৃত্বকালীন ভাতা পেলেন তাপসী মন্ডল

শ্যামনগর সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক

বর্তমান সময়ে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে বহু সেবা পাওয়া যায়। কিন্তু অনেক হতদরিদ্র সেবা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিরা সময় মত সঠিক তথ্য,আবেদন প্রক্রিয়া না জানার কারণে সেবাসমূহ থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের জেলে পাড়ার (ব্রাক আশ্রয়প্রকল্প) তাপসী মন্ডল (৩২), স্বামী সঞ্জয় মন্ডল (৩৫) আর দুইটি সন্তান একটি মেয়ে, একটি ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন। মেয়ে সংগীতা মন্ডল (১১) পড়াশুনা করছে চতুর্থ শ্রেণীতে, ছেলে অপূর্ব মন্ডল (৬ মাস)। স্বামী সঞ্জয় মন্ডল একজন জেলে। নদীতে মাছ ধরা তার মূল পেশা হলেও মাঝে মাঝে পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের কাজও করেন। নিজেদের কোন জায়গা জমি নাই। বসবাস করে খাস জায়গায় ব্রাক আশ্রয়ন প্রকল্প নামের ঘরগুলোতে। নদীতে মাছ ধরতে গেলেও লাগে প্রয়োজনীয় উপকরণ (নৌকা, জাল)। উপকরণগুলোর অনেক দাম। একবার নষ্ট হয়ে গেলে কেনাটাও অনেক কষ্ট কর। যে টাকা আয় হয় সংসার আর উপকরণ ক্রয় করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

গত আগস্ট ২০২১ সালে বারসিকের বাস্থবায়নে নেটজ (পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস) এর সহাযোগিতায় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্পের কাজ শুরুু হয় বুড়িগোয়ালিনীর ইউনিয়নে। পরবর্তীতে এলাকা সোশ্যাল ম্যাপিং করার মাধ্যমে জনগোষ্ঠীকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয় (ধনী, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, হতদরিদ্র)। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ তাপসী মন্ডলকে পরিবারকে হতদরিদ্রের তালিকায় চিহ্নিত করেন। এক পর্যায়ে তাপসী মন্ডল বুড়িগোয়ালিনীর ময়না সিএসও দলের সদস্য হন। তাপসী মন্ডল ময়না সিএসও দলের সদস্য হওয়ার পরে সর্বপ্রথম জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত সাপ্তাহিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও নিয়মিত আলোচনা পরবর্তী তাদের নদীতে মাছ ধরার জালটি নষ্ট হওয়ার কারণে জাল ক্রয় ও হাঁস, মুরগি পালন করার সিদান্ত গ্রহণ করেন যেন জাল ক্রয়ের জন্য অন্যের কাছে ঋণ করতে না হয়।

সিদান্ত গ্রহণ পরবর্তী তাপসী মন্ডলকে আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডের উপকরণ হিসাবে নদীতে মাছ ধরার জাল, হাঁস, মুরগি, বীজ ও গাছের চারা সহমোট ১৩,৫০০ টাকার সম্পদ দেওয়া হয়। নৌকা আর জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরে ভালোই চলছিলো তাদের সংসার। তাপসী মন্ডল নিয়মিত গ্রুপ আসা, সঞ্চয় জমা, কন্ট্রিবিউশন, এসফোর আই জমা করে আসছেন সাথে সাথে সাপ্তাহিক আলোচনাগুলোও মনোযোগ সহকারে শুনেন। বিশেষ করে তথ্য অধিকার আইন ও মাতৃত্বকালীন ভাতার বিষয়টি আলোচনা হলে তাপসী মন্ডল গর্ভবতীর কথা বুড়িগোয়ালিনীর সংশিষ্ট ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটরকে জানালে ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর তাৎক্ষণিক এ্যাডভোকেসী এ্যাসিসটেন্টকে জানান।

পরবর্তীতে এ্যাডভোকেসী এ্যাসিসটেন্ট তাপসী মন্ডলকে আরটিআই আইনে ফরম পূরণের মাধ্যমে বুড়িগোয়ালিনী ইউপি সচিব বরাবর মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করতে কি কি লাগবে এবং কারা মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতায় আসবে সেগুলো জানার জন্য আবেদন করেন। ইউপি সচিব আবেদন পাওয়ামাত্র তাপসী মন্ডলকে তাৎক্ষণিক লিখিত তথ্য দিয়ে দেন। সেই তথ্য অনুযায়ী তাপসী মন্ডল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ম্যানেজ করে বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের এ্যাডভোকেসী এ্যাসিসটেন্টকে জানালে, তিনি গিয়ে বুড়িগোয়ালিনীর ইউনিয়ন উদ্যোক্তার নিকট থেকে ব্যাংক এশিয়ায় এক্যাউন্ট খোলাসহ অনলাইন আবেদন করে তাপসী মন্ডলকে ইউপি সচিবের নিকট অনলাইনের কপি জমা দেন। আবেদনের প্রায় তিন মাস পরে তাপসী মন্ডলের একটি ছেলে সন্তান হয়। সন্তান হওয়ার কিছু দিন পরে এ্যাডভোকেসী এ্যাসিসটেন্টকে মাতৃত্বকালীন ভাতার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিক আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে এক্যাউন্টে খোঁজ নিতে বলা হয়। এক্যাউন্টে খোজ নিয়ে দেখে দুই মাসের টাকা জমা হয়েছে। প্রতি মাসে আটশত টাকা করে ষোলশত টাকা পান তিনি।

এভাবে তিন বছর মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকাটি পাবেন তাপসী মন্ডল অর্থাৎ প্রতি মাসে আটশত টাকা করে তিন বছরে মোট আঠাশ হাজার আটশত টাকা পাবেন। মাতৃত্বকালীন ভাতাটি পেয়ে তাপসী মন্ডল ও তার স্বামী খুবই খুশি। তাপসী মন্ডল বলেন, ‘আমি দলে যুক্ত না হলে মাতৃত্বকালীন ভাতার বিষয়টি জানতে পারতাম না। প্রতিমাসে আটশত টাকা করে আমার পরিবার ও সন্তানের জন্য খুবই গুরুত্ব¡পূর্ণ। আমি ধন্যবাদ জানাই বারসিককে।’

happy wheels 2

Comments