মাতৃত্বকালিন ভাতা পেয়ে আনন্দিত মুক্তা আক্তার
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে রিনা আক্তার
বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ নারী। নারী উন্নয়ন তাই জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সকল ক্ষেত্রে নারীর সমসুযোগ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য। কেননা নারী যুগ যুগ ধরে পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় গোড়ামী, সামাজিক কুসংস্কার, কুপমন্ডুকতা, নিপীড়ন ও বৈষ্যমের বেড়াজালে নারীকে সর্বদা রাখা হয়েছে অবদমিত। এ নারী যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন রূপে সেবা করে আসছে স্বামী, সন্তান ,শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ পরিবারের সবাইকে। এতো সেবা যত্নের পরও নারীকে রাখা হয়েছে বাড়ির চার দেয়ালের ভেতরে। এখানে নেই নারীর স্বাধীন ইচ্ছা, নেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা। এই সমস্যার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অনতমা কারণ হলো নারীর কাছে নগদ কোন অর্থ রাখতে দেয়া হয় না।
এ রকম একজন সংগ্রামী নারী নাম মুক্তা আক্তার। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামের নারী উন্নয়ন সমিতির একজন সদস্য মুক্তা আক্তার (২২)। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের বধু। তিনি একজন গৃহিনী। তাঁর পরিবারে রয়েছে স্বামী, শ^শুর-শ্বাশুড়ীসহ মোট চারজন সদস্য। তার স্বামীর নাম মো. সজিব আহমেদ (২৮)। তিনি সাভারের এক মদি দোকানে কাজ করেন। মুক্তা আক্তারের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার স্বামী। তিনি মাসে যে পরিমাণ টাকা পান এই দিয়ে তাদের সংসার কোন রকমে চলে যায়। তবে বাড়তি কোন লোকের আগমনে হিমশিম খেতে হয় এবং সঞ্চয় করা তাদের জন্য কঠিন। আমরা জানি মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো চিকিৎসা সেবা। মুক্তা আক্তারের গর্ভে সন্তান আসার পরই তার নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। অর্থের অভাবে ভালো চিকিংসা নিতে না পারলেও বাড়ির পাশে সরকারি হাসপাতাল থাকায় এবং নারী উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের সহযোগিতায় হাসপাতালের সুবিধাগুলো পাইতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। ডাক্তার তাঁকে কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে বলেন। সে সংগঠনের সভাপতি সুইটি বেগমের সহযোগিতায় কিছু ওষুধ বাকিতে ক্রয় করে এবং সন্তান হওয়ার পর তাঁকে মাতৃত্বকালিন ভাতা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
সন্তান প্রসবের এক মাস পর স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে সিংগাইর উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজসহ আবেদন করা হয়। সুইটি বেগম আরো কয়েকটি আবেদন করেন এবং নিয়মিত যোগাযোগ করেন এবং প্রায় এক বছর পর ২০১৯ সালের মার্চে এই ভাতার প্রথম কিস্তিার প্রতি মাসে ৮০০ টাকার হিসেবে ২৪০০ টাকার চেক হাতে পান এবং বলা হয় এভাবে তিন বছর পর্যন্ত মোট ২৮৮০০ টাকা পাবেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে মুক্তা আক্তার বলেন, ‘আমি তো এত টাকা প্রত্যাশাই করিনি। আমার জন্য অনেক উপকার হলো এই টাকায় আমার ঋণপাতি সেরে আরো কিছু সঞ্চয় করতে পারব। আমি হাতের কাজ জানি। সঞ্চিত এই টাকা দিয়ে একটি সেলাই মেশিন কিনে কাজ করতে চাই অন্তত পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে সন্তানের শিক্ষা-স্বাস্থ্য কাজে ব্যয় করতে পারব। সরকার যে আমাদের জন্য এত টাকা বরাদ্দ রেখেছে আমরা জানতাম না। বারসিক’র মাধ্যমে আজ জানতে পারলাম এবং আরো অনেক সেবা আছে সেগুলো প্রাপ্তিতে সংগঠন পর্যায়ে আমরা একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াব।’
আমরা চাই, প্রত্যেক নারীই এই সেবাগুলোর সুবিধা পেয়ে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করুক। এভাবে নারী তার বন্দিশালার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ক্ষমতায়িত হতে পারবে বলে আমি মনে করি।