প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ সুরক্ষায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের উদ্যোগ

রাজশাহী থেকে মো: শহিদুল ইসলাম
বৃক্ষ ও পরিবেশ অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। শুধু পরিবেশ নয়, বৃক্ষের সাথে খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য সার্বভৌমত্ব এবং মানুষসহ সকল প্রাণের সাংস্কৃতিক দিকগুলোও জড়িত। বৃক্ষ আছে বলেই পৃথিবীটা এতো সুন্দর এবং জীববৈচিত্র্যের সমারোহ। কিন্তু পরিবেশ এবং মানুষসহ সকল প্রাণের জন্য এতো গুত্বপূর্ণ এই যে বৃক্ষ, তা হরহামেশাই কাটা হয়। বৃক্ষ নিধন হয় হরহামেশাই। প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনেই কাটা হয় বৃক্ষ। স্মরণকালের তুলনায় বিগত দশকে বৃক্ষ কর্তন এবং বন উজাড় হয়েছে বেশি। আমরা নানা সময়েই বৃক্ষ হত্যা বা কর্তনের বিষয়গুলো দেখতে পাই।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলেছেন, পরিবেশ ঠিক রেখেই উন্নয়ন করতে হবে। উন্নয়ন হবে পরিবেশ ঠিক রেখেই। কিন্তু আমরা বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে দেখতে পাই উন্নয়নের নামে প্রথম যে বলি দেয়া হয় তা হলো বৃক্ষ। বিল্ডিং, দালান কোঠা, রাস্তাঘাট এবং বিভিন্ন আবাসনসহ নানা উন্নয়ন কর্মসূচিতে দেখা যায়, গাছ কাটা হচ্ছে। আমরা খুব কমই দেখতে পাই যে, বৃক্ষ বা গাছ রেখেই উন্নয়ন বাস্তবায়ন হয়েছে। এর সাথে একধরনের অসাধু মানুষ জড়িত। তারা নানা অজুহাতে উন্নয়নের নামে বৃক্ষ কর্তন করে। বণ্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ তে তৃতীয় অধ্যায়ের বণ্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ রক্ষা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা ৬। (১) ধারায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘কোন উদ্ভিদ ইচ্ছাকৃতভাবে উঠানো, ধ্বংস বা সংগ্রহ করিতে পারিবেনা।’ যেখানে বণ্যপ্রাণী এবং পাখির আবাসস্থল সে দিকগুলোও দেখা হয়েছে। কিন্তু গাছ কাটার বেলায় আমরা কোন আইন মানিনা। আবার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ২০১৬ একসময় মন্ত্রী সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়েছিলো। কিন্তু সেই আইনেরও মাঠ পর্যায়ে বাস্তব ক্ষেত্রে কোন প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন নেই। সার্বিক ক্ষেত্রে দেখা যায়, উন্নয়নের প্রথম বলি প্রথমে সেই এলাকার বৃক্ষকে করা হয়।


সার্বিক বিবেচনায় দেখা যায়, যে হারে বৃক্ষ কর্তন করা হচ্ছে তাতে আগামীতে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়তে হবে আমাদের। তাপমাত্রা দিনে দিনে বাড়ছে, একইসাথে বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের আঞ্চলিক অভিঘাত আমাদের বাংলাদেশেও মারাত্মকভাবে দেখা দিচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানামূখী সংকট দেখা দিচ্ছে। তেমনি একটি অঞ্চল রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চল। খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে দিনে দিনে তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বাড়ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। অন্যদিকে খরা সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আবার পানি সংকটের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চল আগামীতে নানামূখী সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এই প্রাচীন জনপদটিতে বৃক্ষ সুরক্ষা করা জরুরি।


বরেন্দ্র অঞ্চলের উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষা এখন সময়ের দাবি। গতকাল (২৪ জুলাই ২০২৩) রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই অঞ্চলের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ এবং বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তার দিকগুলো তুলে ধরা হয় বারসিক’র পক্ষ থেকে। সেখানে বলা হয়, বরেন্দ্র অঞ্চলটি একটি আদি এবং ঐতিহাসিক অঞ্চল। এখানকার ইতিহাস এবং ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ। খরাটপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে নানাজাতের বহুপ্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ ছিলো। কিন্ত নানা কারণে সেই বৃক্ষগুলো কর্তন করা হচ্ছে। তাই পরিবেশ প্রাণবৈচিত্র্য এবং স্থানীয় মানুষসহ অন্যান্য প্রাণের খাদ্য নিরাপত্তা ও বাসস্থানের সুরক্ষার স্বার্থেই বৃক্ষ সুরক্ষা জরুরি। বিশেষ করে প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলো তালিকা করে সেগুলো সুরক্ষা জরুরি।


সভায় সভাপ্রধান হিসেবে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘পরিবেশ এবং প্রতিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ সুরক্ষা প্রয়োজন।’ একই সাথে তিনি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলো সুরক্ষার কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘যেসকল বৃক্ষ পুরাতন বৃক্ষ ভেঙ্গে গেছে এবং জানমালের ক্ষতি হতে পারে, সেগুলো বনবিভাগের বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পরীক্ষা করে কাটতে পারে, কিন্তু এমনিতেই অপ্রয়োজনে বা কারো স্বার্থে প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলো কাটা ঠিক নয়।’ তিনি রাজশাহী জেলার প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলো সুরক্ষায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। একইসাথে এগুলো সুরক্ষার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। সভাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) সরকার অসীম কুমার। সভায় প্রায় ৭৯জন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

happy wheels 2

Comments