উদ্ভিদকে বিশ্বাস করি, শ্রদ্ধা করি

উদ্ভিদকে বিশ্বাস করি, শ্রদ্ধা করি

রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম

“দুর্বাঘাস আর পাওয়া যায় না। প্রায়ই দুর্লভ হয়ে গেছে। সকালে উঠে দুর্বাঘাসের উপর দিয়ে হাটলে চোখের জ্যোতি বাড়ে।”এমনটাই বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার প্রবীণ কবিরাজ আব্দুল করিম। দীর্ঘ ৬০ বছরের বেশি এই প্রকৃতি নিয়ে তার দেখা আর অভিজ্ঞতার কথাগুলো বলছিলেন কবিরাজ সমাবেশে। বর্তমান সময়ে দিনে দিনে প্রকৃতি থেকে অনেক ধরনের গাছপালা উদ্ভিদ বিলুপ্ত হওয়ায় কবিরাজি করতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। একই সাথে কবিরাজদের সামাজিক সন্মান এবং মর্যাদাও আগের তুলনায় কমেছে বলে দাবি করেন কবিরাজগণ। কমেছে আর্থিক উপার্জনের ক্ষেত্র।

Shahidul-BARCIK
গতকাল (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নে বাচ্চু মিয়ার ঔষধী বাগানে কবিরাজ সমাবেশে কবিরাজগণ তাদের সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথাগুলো তুলে ধরেন। একই সাথে আগামীতে করণীয় দিকগুলো নিয়ে পরিকল্পনা করেন।

ছোট ছোট বন উজাড় হওয়ায় কমেছে প্রাকৃতিক ঔষধি গাছের উৎস। আবার প্রকৃতিতে, জমিতে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দেয়ায় অনকে ধরেনর উদ্ভিদ বৈচিত্র্য বিলুপ্ত এবং প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অংশগ্রহণকারী কবিরাজগণ জানান, প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো সাদা লজ্জাবতী, লাল ভুই কুমড়া, হাড় জোড়, কালো বিছাতু, তুরুক চন্ডাল, রাহু চন্ডাল, মাছ মাসিন্দা, নাড়া মাজি, ভুই চন্ডাল, কাওয়া, চাপড়া গাছ, লটাই গাছ, জাফরাং, বেতের ঝাড় ইত্যাদি প্রায়ই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাঁশের ঝাড়ে আগে প্রাকৃতিকভাবে ওলট কমল, এলোভেরা জন্মাতো কিন্তু এখন আর নেই। জমির আইলে যে সকল শাক লতাপাতা জন্মাতো সেসবও আর আগের মতো দেখা যায় না। ফলে চিকিৎসা দিতে, ঔষধ তৈরিতে কবিরাজদের সমস্যা হচ্ছে। অনেকে বাড়িতে ঔষধি বাগান করে কোন মতে পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করলেও জায়গা সংকটের কারণে তাও সঠিকভাবে করতে পাচ্ছে না।

শহিদুল

আবার চলমান সময়ে প্রকৃতির গাছপালা, উদ্ভিদ থেকে কবিরাজদের কবিরাজি এবং ঔষধ বিক্রি করতেও নানা সমস্যার সন্মূখীন হচ্ছেন। কবিরাজদের কোন সংগঠন না থাকায় তাদের অধিকারগুলো আদায় হচ্ছে না। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলো গ্রামের কবিরাজদের তথ্য এবং কৌশল জ্ঞান ব্যবহার করে তাদের ঔষধ তৈরি করার কথাও জানান গ্রামের কবিরাজগণ। এর জন্যে কবিরাজদের যে সম্মানী বা সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা তাও দেয়া হচ্ছে না।

সমাবেশে প্রবীণ কবিরাজ মনজুর ইসলাম বলেন, “প্রকৃতির যে গাছপালা আছে, তাদেরকে আমরা বিশ্বাস করি, শ্রদ্ধা করি। কোন গাছ বা উদ্ভিদ বিলুপ্ত হোক আমরা তা কখনোই চাই না।” তিনি আরও বলেন, “একটি গাছের কোন অংশ সংগ্রহ করলে সেটি যেন আবারো জন্মায় বা জন্মাতে পারে আমরা সেভাবেই প্রকৃতি থেকে গাছ, লতা পাতা সংগ্রহ করি।”

সমাবেশ ও মতবিনিময় শেষে কবিরাজগণ পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের বাচ্চু মিয়ার ঔষধি বাগান ঘুরে দেখেন। কিভাবে বাড়িতে একটি ঔষধি বাগান করতে হয় সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। উক্ত কবিরাজ সমাবেশে পবা উপজেলার ২৫জন কবিরাজ অংশগ্রহণ করেন।

happy wheels 2

Comments