সাম্প্রতিক পোস্ট

আমরা চাই সচেতন প্রজন্ম

আমরা চাই সচেতন প্রজন্ম

নেত্রকোনা থেকে হেপী রায় ও রনি খান

একটা সময় ছিল শিশু থেকে যুবক পর্যন্ত বিভিন্ন খেলাধূলা ও সৃজনশীল কাজ নিয়ে মেতে থাকতো। বাবা মা’য়ের হাত ধরে পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পূজা, মিলাদ মাহফিল ও খেলাধূলার আয়োজনে অংশ নিতো। কোনো খুশির খবরে বা পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে অভিভাবকরা বই কিনে দিতেন। তাছাড়া শিশুদের কোনো উদ্যোগে তাঁরাও সামিল হতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে সে সব আর চোখে পড়েনা।

বিজ্ঞানের কল্যাণে পৃথিবী আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। এখন ইন্টারনেটের যুগে সব হারিয়ে গেছে। সৃষ্টিশৈলীতা আজ বিপন্ন প্রায়। তরুণদের মধ্যে অনেকে ফেসবুকে ডুবে থাকে। এটা যে খারাপ তাও নয় এর অনেক ভালো দিকও আছে। সেই ভালো দিকটিকে আমাদের অনুপ্রেরণায় উস্কে দিতে হবে। কাজে লাগাতে হবে তাদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে, সৃজনশীলতাকে।

তারুণ্য একটি প্রবল প্রাণশক্তি। সেই প্রাণশক্তির অফুরন্ত সম্ভাবনা দিয়ে তারা নতুন কিছু সৃষ্টির নেশায় মেতে উঠে। তারা সুস্থ, সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখে। সেই সমাজের অন্ধকার দিকগুলোতে আলো জ্বালাতে চায়। এরকমই একটি উদ্যোগ নিয়েছে নেত্রকোনা সম্মিলিত যুব সমাজের সদস্যরা। আমাদের পরিবেশ, শিক্ষা ও জ্বালানি বিষয়ে নতুন প্রজন্মের মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে দেয়াল লিখনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোনা সদরের মোক্তারপাড়ায় অবস্থিত ‘উন্মেষ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’র দেয়ালে বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক বাণী লিখে দিয়েছে।

Happy
দেয়াল লিখনের উদ্বোধন করেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম রিপন এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সজীব সরকার রতন। প্রধান শিক্ষক বলেন,“নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আজকাল মানুষকে বলে কিছু বোঝানো যায় না। কিন্তু চোখের দেখাটা ভিন্ন। একবার একটি লাইন পড়ে নিলে অন্তত সারাদিন সেটি চোখের সামনে থেকে সরানো যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাতশ’ শিক্ষার্থী আছে। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করা এবং বের হওয়ার সময় একবার করে এই লেখাগুলো প্রত্যেকের চোখেই পড়বে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণও এখানে আসেন, তারাও দেখতে পারবেন। তাছাড়া আমার প্রতিষ্ঠানটি এমন এক জায়গায় অবস্থিত যার সামনের রাস্তা দিয়ে সমস্ত শহরের মানুষজন চলাচল করে। এ বাণীগুলো তারাও পড়বে।” তিনি বলেন, “একটি ভালো কথা বা উপদেশ একজন মানুষের সমস্ত জীবনের অভ্যাসগুলো বদলে দিতে পারে, যদি আমি সেটি নিজের মধ্যে ধারণ করি। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত নিজের সংস্কৃতিকে ধারণ করা এবং পরিবেশ, সম্পদ সংরক্ষণে উদ্যোগী হওয়া। এই যুবকদের মতো সমাজের সকলের ভাবনাগুলো এক হলে আমাদের শহর আরো এগিয়ে যেতো।” তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানে যে কোনো ধরণের উদ্যোগে যুবকদের সামিল হতে আহ্বান জানান।
মিনা আক্তার নামের একজন অভিভাবক বলেন,“শহরের অনেক প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে দেখেছি বিভিন্ন মনীষীদের বাণী লেখা থাকে। কিন্তু এই লেখাগুলো একটু ব্যতিক্রম। কোনো বইয়ের ভাষা নয়, বাস্তবতার সাথে মিলে আছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়লে এবং বুঝতে পারলে উপকৃত হবে।”

মানুষের মাঝে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার অনেক পথ আছে। তার মধ্যে দেয়াল লিখন একটি স্থায়ী পন্থা। এটি দীর্ঘদিন থাকবে এবং বিভিন্ন শ্রেণির অসংখ্য মানুষ এগুলো পড়ার সুযোগ পাবে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো মানুষ গড়ার কেন্দ্র। এখানে শিক্ষার্থীরা পড়া লেখার পাশাপাশি নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও আদর্শ মানুষ হওয়ার শিক্ষা লাভ করে। দেয়াল লিখনের বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তক বহির্ভূত হলেও এগুলো তাদের সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে এবং এরাই দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

happy wheels 2

Comments