রক্তের কোলেস্টেরল কমায় কামরাঙ্গা
সাতক্ষীরা থেকে বাহলুল করিম
টক-মিষ্টি স্বাদের এক ধরণের মৌসুমী ফল কামরাঙ্গা। অধিকাংশ মানুষের কাছে খুবই প্রিয় ফল এটি। বিশেষ করে নারীদের কাছে তো খুবই প্রিয়। কামরাঙ্গা কেউবা খায় কাঁচা আবার কেউবা খায় আচার বানিয়ে। রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে, ব্রুন সমস্যায়, ভিটামিন ‘সি’ এর অভাব পূরণে, সর্দি-কাঁশি সমস্যায় ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে কামরাঙ্গায় রয়েছে কার্যকরী গুণাগুণ। এছাড়া ত্বক ভালো রাখতে, ঘাঁ-পাঁচড়া শুকাতে, দাঁতের সমস্যায়, জলবসন্ত ও কৃমি রোগ সারাতে কামরাঙ্গা ওষুধের মতো কাজ করে। পাকা কামরাঙ্গা পাখিরা খায়।
সাধারণত বসতবাড়ির আঙিনায়, রাস্তার ধারে, স্কুল-কলেজের সামনে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে কামরাঙ্গা গাছ দেখতে পাওয়া যায়। কামরাঙ্গা মাঝারি ও হালকা কাষ্ঠল প্রকৃতির এক ধরণের উদ্ভিদ। গাছ আকারে চার-পাঁচ ফুট ও লম্বায় ১৫-২০ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এর শাখা-প্রশাখা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে।
কামরাঙ্গা গাছের পাতা দেখতে অনেকেটা বেলনাকৃতির হয়ে থাকে। পাতার অগ্রভাগ সুচালো প্রকৃতির ও প্রতিটি শাখায় ১০-১২টি পাতা পর পর সাজানো থাকে। এর পাতা অপরিণত অবস্থায় কলাপাতা রঙের হয়ে থাকে। পাতা পরিণত অবস্থায় সবুজ বর্ণ ধারণ করে। পাতাগুলো একসাথে থাকে বলে দেখে ফুল সদৃশ মনে হয়।
কামরাঙ্গা দেখতে অনেকটা তারার মতো ও উপবৃত্তাকার হয়। এর ফল সাত-আটটি খণ্ডে বিভক্ত থাকে। ফলের দৈর্ঘ্য দুই-ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। এর ত্বক পাতলা ও মসৃণ প্রকৃতির হয়। ফলের ভেতরের অংশ নরম ও রসালো। ফল কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ রঙের হয়। ফল পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। পাতা ও ফল এমনভাবে থাকে যে বোঝাই যায় না কোনটি ফল আর কোনটি পাতা।
প্রতিটি ফলে ১০-১২টির মতো দানা বা বীজ থাকে। এর বীজ আকারে ছোট ও মসৃণ হয়। বীজ দেখতে বাদামী রঙের। বীজ প্রস্থে .২৫-.৫০ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বীজের চারপাশ নরম ও তৈলাক্ত আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে।
এর স্থানীয় নাম কামরাঙ্গা। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। দেশের বাইরে এটি স্টার ফ্রুট বা ক্যারামবোলা নামেও পরিচিত।
সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষ খুবই আগ্রহ সহকারে কামরাঙ্গা খেয়ে থাকেন। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কামরাঙ্গা কাচা লবণ দিয়ে কাঁমড়িয়ে বা কেটে লবণ মাখিয়ে খায়। আবার কেউবা চাটনি বা আচার বানিয়েও খায়। ছোট-বড় সকলের খুবই প্রিয় ফল এটি। এছাড়া কামরাঙ্গায় রয়েছে নানাবিধ পুষ্টিগুণ।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কফিল উদ্দীন বলেন, “নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। জলবসন্ত হলে কামরাঙ্গা খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ব্রুন সমস্যায় কামরাঙ্গা ওষুধের মতো কাজ করে। পাঁকা কামরাঙ্গা পাখিরা খাবার হিসেবে খায়।”
শহরের কাটিয়া সরকার পাড়ার বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলেন, “কামরাঙ্গা খুবই প্রিয় একটি ফল। কাচা অবস্থায় এটি টক স্বাদের হয়। পাকলে কিছু কামরাঙ্গা আবার মিষ্টিও লাগে। সর্দি-কাঁশি সমস্যায় ও দাঁতে ব্যথা হলে কামরাঙ্গা খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ত্বক ভালো রাখতে ও শরীরে ঘাঁ-পাঁচড়া হলে কামরাঙ্গা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।”
এ ব্যাপারে শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “কামরাঙ্গা কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কামরাঙ্গায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। মুখে ঘাঁ হলে কামরাঙ্গা খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে কামরাঙ্গা ওষুধের মতো কাজ করে। কামরাঙ্গা প্রচুর পরিমাণে খেলে মাথার চুল পড়া বন্ধ হয়। ভিটামিন ‘সি’ এর অভাব ও কৃমি দূর করতে কামরাঙ্গা ভালো কাজে দেয়। তবে যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের কামরাঙ্গা না খাওয়াই ভালো। এছাড়া যারা কিডনি রোগে ভুগছেন অর্থাৎ ডায়ালসিস করতে হচ্ছে বা কিডনিতে পাথর রয়েছে এসব রোগীদের ক্ষেত্রে কামরাঙ্গা মৃত্যুর কারণও হতে পারে।”
মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘কামরাঙ্গার বৈজ্ঞানিক নাম Averrhoa carambola Linn। এর ইংরেজি নাম Chinese gooseberry বা Carambola।
কামরাঙ্গা একটি চিরসবুজ ছোট মাঝারি আকৃতির গাছের টকমিষ্টি ফল। গাছ ১৫-২৫ ফুট লম্বা হয়। ঘন ডাল পালা আচ্ছাদিত, পাতা যৌগিক, ১-৩ ইঞ্চি লম্বা। বাকল মসৃণ কালো রঙের। ফল ৩-৬ ইঞ্চি ব্যাসের এবং ভাজযুক্ত। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ। কামরাঙ্গা টক স্বাদযুক্ত বা টকমিষ্টি হতে পারে। কোন কোন গাছে একাধিকবার বা সারাবছরই ফল পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন এ ও সি’র ভালো উৎস। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারিতে ফল পাওয়া যায়।
পুরো ফলটাই খাওয়া যায়, পাতলা ত্বকসহ। ফল কচকচে ও রসালো। ফলে আঁশ নেই ও এর প্রকৃতি অনেকটা আঙুরের মত। কামরাঙ্গা পাকার পর পরই খেতে সবচেয়ে ভালো, যখন হলদেটে রঙ ধারণ করে। এর বাদামী কিনারাগুলো কিছুটা শক্ত ও কষ ভাব যুক্ত। ফল পাকার ঠিক আগেই পাড়া হয় ও ঘরে রাখলে হলুদ রঙ ধরে। যদিও এতে মিষ্টতা বাড়ানো। বেশি পেকে গেলে এর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। পাকা কামরাঙ্গা অনেক সময় রান্না করেও খাওয়া হয়। দক্ষিণ এশিয়াতে আপেল ও চিনি দিয়ে রান্না করার চল আছে। চীনে মাছ দিয়ে রান্না করা হয়। অস্ট্রেলিয়াতে সবজি হিসেবে রান্না করা হয়, আচার বানানো হয়। জ্যামাইকাতে কামরাঙ্গা শুকিয়ে খাওয়ার চল রয়েছে। হাওয়াই ও ভারতে কামরাঙ্গার রস দিয়ে শরবত বানানো হয়।’