নারী পুরুষের একতা, থাকবে কাজের সমতা

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার, ঋতু রবিদাস, রিনা আক্তার, আছিয়া আক্তার, বিউটি রানী সরকার, শারমিন আক্তার, কমল চন্দ্র দত্ত, গাজী শাহাদত হোসেন বাদল, সামায়েল হাসদা, সত্যরঞ্জন সাহা, শাহীনুর রহমান ও মো.নজরুল ইসলাম

“টেকসই আগামীর জন্য জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য”-প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে গত ৮ মার্চ মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা, ঘিওর, সিঙ্গাইরসহ অন্যান্য উপজেলায় বারসিকসহ বিভিন্ন বেসরকারি ও স্থানীয় সংগঠনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়েছে। দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, র‌্যালি, বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতাসহ নানান কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে সরকারি, বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধি, কৃষক, নারী, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, শিক্ষকসহ নানান শ্রেণীর ও পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

পৃথক অনুষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, উপজেলা চেয়ার‌্যমান, কৃষক, কৃষাণীসহ নানান পেশার মানুষ এ দিবস সম্পর্কে নানান আলোচনা করনে এবং তাদের সমাজে ও পরিবারের নানান সমস্যা তুলে ধরেন।

এই প্রসঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচিত জন প্রতিনিধি ও সিংগাইর উপজেলা নারী উন্নয়ন কমিটির আহবায়ক সেলিনা বেগম বলেন, ‘নারী আন্দোলন শক্তিশালী হলেও সেই তুলনায় নারীর প্রতি সহিংসতা কমে আসছে না। এর অন্যতম কারণ হলো, নারীকে এখনো পুরুষের অধনস্থ বলে ভাবা হয়। এসবের অবসান ঘটিয়ে নারী-পুরুষের সমতার সমাজ গড়ে তুলতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা না হলে টেকসই উন্নয়ন হবে না। এই সমতা অর্জনে পুরুষকেও পাশে দাঁড়াতে হবে। সার্বিক উন্নয়নে নারী ও পুরুষ উভয়কেই একাবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

কৃষাণী সংগঠনের সদস্য শেফালী বেগম বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত কত কাম (কাজ) করি। ঘরদোর ঝাড়– দেই, থালা বাসন ধুই। রান্না করি। আমাগো কাম (কাজ) চোখে দেখা যায় না। তাই আমরা মূল্য পাই না। সংসার নারী-পুরুষ মিলেই হয়। অনেক পুরুষ মানুষ আছে যারা বউদের বলে সারাদিন কি কাম করো। আবার অনেক পুরুষ আছে তারা তাদের বউদের কাজের প্রশংসা করে। সংসার করতে গেলে মিলেমিশে করতে হয়। আমরা সমান মর্যাদা চাই”।

বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, ‘নারীদের সব কিছুর জন্য আওয়াজ তুলতে হবে, তার জন্য নিজেকে স্বাবলম্বী হতে হবে। অনেক পরিবারে মেয়ে সন্তানদের বোঝা ভাবা হয়, কিন্তু একজন মেয়ে যদি স্বাবলম্বী হয় তাহলে তাকে আর বোঝা ভাবা যাবেনা। প্রত্যেক নারীদের শিক্ষিত হতে হবে। নিজের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, তাহলে তারা সম্পদে পরিণত হবে।’

অন্যদিকে মণিঋষি পাড়ার মুরুব্বি নারায়ণ মনিদাস বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীরা গৃহের কাজ করেন, আবার বাঁশ শিল্পের কাজ, গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করে পরিবারের আয়ে সহায়তা করেন। লেখাপড়া কম থাকায় বাইরে কাজ করার সুযোগ খুব কম পায়, মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য আমাদের আরও সহযোগিতা করতে হবে।’ জ্যোৎ¯œা রাণী দাস বলেন, ‘নারী দিবসে আইসা নারীদের কাজের এত গুরুত্ব, সম্মান ও মর্যাদা দেয়ার কথা শুনলাম। আমরা পাই কোথায়, সারাদিন কাজ করেও অনেক সময় কথা শুনতে হয়, তবুও ভালো আছি কারণ দিন শেষে ভাবি সংসারটা আমার।’


কৃষাণী ও স্থানীয় সংগঠনের নেত্রী আসমা বেগম বলেন, ‘আগে আমাগো ছোট সময় বিয়ে দিছে সংসার কি বুঝি নাই। গাধার মত সংসারে খাটছি। এখনও মানুষ বাল্য বিয়ে দেয়। মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত। আমরা চাই আমরা সংসারে যে কাম (কাজ) করি তা আমাদের স্বামীরা স¦ীকার করুক।’ গ্রামের মুরুব্বী মো: আইয়ুব আলী বলেন, ‘এই ধরণের অনুষ্ঠান আমাদের এই গ্রামে প্রথম। বারসিককে ধন্যবাদ জানাই। এই উদ্যোগ নারীদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। নারীরা অনেক কিছু জানতে পারবেন।’


এদিকে গাড়াদিয়া কৃষক-কৃষাণী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদা বেগম বলেন, ‘আমরা বাড়ির কাজ বেশি করি কিন্তু পরিবার মূল্য দেয়না আবার বাইরে পুরুষের সমান কাজ করলেও সমান মজুরি পাইনা।’ শাপলা নারী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজা বেগম বলেন, “আজ নারী দিবস। আগে জানতামই না আমাগো (আমাদের) জন্যও আবার দিন আছে। নারীরা সব দিক থেকেই অবহেলিত। একই কাম (কাজ) করে পুরুষরা মজুরী বেশি পায় নারীরা কম পায়। কোথাও গেলে পুরুষরা যে দাম পায় নারীরা সে দাম পায় না।


তরুণী রত্না আক্তার (২২) বলেন, ‘আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস কী এবং কেন পালিত হয় আমরা বেশির ভাগ মানুষই জানিনা। আমাদের নারীদের জন্য যে আলাদা একটা দিবস আছে আমরা তা জানতাম না। বারসিক‘র’ মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম এই দিবসটির কথা।’


প্রতিটি অনুষ্ঠানে নানান ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। যেখানে নারী, পুরুষ, কিশোর, কিশোরীরা অংশগ্রহণ করেন। খেলাধুলা ও প্রদর্শনীর শেষে অংগ্রহণকারীদের মাঝে পুরুষ্কার বিতরণ করেন প্রতিটি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ।


উল্লেখ্য, ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কে বিপুল সংখ্যক নারীরা জড়ো হয়ে মিছিল করেছিলেন তাদের চাকরিতে সময় কমানো, বেতন বৃদ্ধি এবং ভোটের অধিকারের দাবিতে। ১৯১০ সালে ক্লারা জেটকিন এই দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপনের জন্য পরামর্শ দেন। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী দিবসকে স্বীকৃতি দেয়।

happy wheels 2

Comments