স্থায়িত্বশীল কৃষিচর্চায় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করেন কৃষক মো. হাফিজুর রহমান
নেত্রকোনা থেকে মো: সুয়েল রানা
সকল প্রাণের উৎস প্রকৃতি। প্রাণ তার সকল ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করে জীবনধারণের। আর এটাই তার প্রাণের গতি প্রকৃতি । প্রতিটি প্রাণই বেঁচে থাকে প্রকৃতিকে ধারণ করে, মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। মানুষ এর থেকে ভিন্ন নয়। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। যখনই মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনের চেয়ে চাহিদা,স্বাচ্ছন্দ্যতা, বিলাসিতা বেড়ে যায় বা সমাজে /রাষ্ট্রের অসম অর্থনীতির সাথে তাল মিলাতে হয় তখনই দেখা দেয় বিড়ম্বনা। আমরা ততই প্রকৃতির মিথস্ক্রিয়া থেকে দূরে যেতে থাকি এবং কৃত্রিমতায় জড়িয়ে পড়ি আরো বেশি করে। আমরা আমাদের সভ্যতাকে গ্রহণ করব উৎসকে ঠিক রেখে। তা নাহলে আমাদের জীবন বিপন্নতার দিকে এগিয়ে যাবে। যার কোন সমাধান আমরা করতে পারব না। প্রকৃতি সুরক্ষিত থাকলে আমরাও সুরক্ষিত থাকব। এই মতের বিশ^াসী নেত্রকোনার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক মো: হাফিজুর রহমান (৪৫)। তিনি বলেন, ‘জমির পরিমাণ বেশি থাকা মানেই একজন কৃষককের ভালো থাকা নয়। একজন কৃষকের ভালো থাকা র্নিভর করে তার বাড়ি উঠান, উঠানের চারপাশের উপযুক্ত ব্যবহার আর সবজি চাষের জন্য একখন্ড জমি। কারণ এই জায়গাগুলোতে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের এবং নিরাপদ খাদ্যের একমাত্র উৎস।
কৃষির সাথে রয়েছে কৃষক হাফিজুরের নিবিড় সর্ম্পক। স্থানীয় জাতের বিভিন্ন প্রকারের সবজি, শস্য, ধান আবাদ করে আসছেন র্দীঘদিন ধরে। নিজেদের চর্চার মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতা, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের জীবিকা র্নিবাহ করে থাকে এবং পরিবেশ রক্ষায়, নিরাপদ খাদ্যর যোগান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ।
সমাজে ভালো একজন কৃষক হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। গ্রামের আর পাঁচজন কৃষকদের থেকে আলাদা। কারণ তিনি সবার আগে সবজি ফলান, বীজ সংরক্ষণ করেন এবং বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেন গোবর সার ব্যবহার করে। বালাইনাশক হিসাবে ব্যবহার করেন নিজস্ব তৈরি বালাইনাশক। অন্য কৃষকরা তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকেন। বর্তমানে রামকৃষ্ণপুর গ্রামে কৃষি বিষয়ে অভিজ্ঞ কৃষক হিসেবে পরিচিত। তাঁর সংসারের বড় একটা আয়ের উৎস শাকসবজি চাষাবাদ, হাসঁ-মুরগি ও গরু পালন। নতুন করে যুক্ত করেছেন কবুতর পালন করা।
তিনি সারাবছর, আলু, ফুলকপি, লতা, বাধাঁকপি, ঢ়েড়স, বেগুন, সীম, লাউ, কুমড়া, চিরিন্দা, ধুন্দল, পুইঁ, আলুশাক, মিষ্টিলাউ, লাউশাক, করলা ইত্যাদি চাষ করেন। সারাবছর জমিতে ও বসতবাড়িতে, বাড়ির আশপাশে চাষ করেন আদা, হলুদ, মাসকালাই, সরিষা, মরিচসহ পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ফসল। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। এমনকি প্রতিবেশীদেরকেও শাকসবজি এবং বীজ বা চারা দিয়ে সবসময় সহায়তা করেন। তাছাড়া খাদ্য হিসাবেও অচাষকৃত উদ্ভিদ যেমন কচু, লতা, কলমি, গিমা তিতা, বতুয়া, এলেঞ্চা, থানকুনি পাতা ব্যবহার করে থাকেন।
মো: হাফিজুর রহমানের নিজস্ব জমির উপর একটি পুকুর আছে। পরিবারের সারাবছরের আমিষের চাহিদা এখান থেকেই পূরণ করেন। তবে গ্রামের পাশে ছোট ছোট জলাশয় থেকে পরিবারের সামান্য কিছু অংশ মাছের (আমিষ) চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। বর্ষাকালে মাছের প্রার্চুযতা বেশি হলে কিছু মাছ শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সংরক্ষণ করেন। বর্তমানে পরিবারটিতে ২টি গরু, ২টি ছাগল, মুরগি-৬টি হাঁস-৫টি এবং ৫ জোড়া কবুতর পালন করেন।