নিরাপদ খাবার হোক আগামী প্রজন্মের সুস্থতার আধার

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শারমিন আক্তার
সময়ের পরিবর্তনে পারিবারিক তালিকায় খাদ্যে বৈচিত্র্যতা বাড়লেও সংকট তৈরি হয়েছে নিরাপদ খাবারের। বাজারের চকচকে মসৃন ও মুখরোচক খাবার বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে গ্রাম কিংবা শহরকেন্দ্রিক পরিবারগুলোতে। তাই বর্তমানে সব ধরনের উৎপাদকই জনগণের পছন্দকে পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করে বেমালুম ভুলে গেছে খাদ্যের গুণগত মানের কথা। আজ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে হেলেঞ্চা শাকের ভর্তা, কিংব কচু শাকের খন্ট। ঘোটাশাক কিংবা নুনকুটি শাক ভাজি খাওয়া নতুন প্রজন্মের আত্মসম্মানে আঘাত করে। ফলে এক সময়ে গ্রাম বাংলার মানুষের পুষ্টিকর বা নিরাপদ খাদ্যের সবচেয়ে বড় উৎস্য আপনজ্বালা উদ্ভিদগুলো ব্যবহার ও সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। বারসিক নিরাপদ খাদ্যের উৎস্য চিহ্নিতকরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার ও বিকাশের নিমিত্তে গ্রাম পর্যায়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ধারাবাহিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি বারসিক এর সহযোগিতায় ‘নিরাপদ খাবার হোক আগামী প্রজন্মর সুস্থতার আধার’-স্লোগানে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলা জামশা ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের গ্রামের নারী ও শিক্ষার্থীরা আয়োজন করে অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলা।


উক্ত পাড়া মেলায় ২০ জন অংশগ্রহণকারী নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়েজনীয়তার ভিত্তিতে ২৬ ধরনের আপনজ্বালা উদ্ভিদ শাকসবজি নিজ এলাকা থেকে সনাক্ত, সংগ্রহ এবং প্রদর্শন করেন। তাদের প্রদর্শিত উদ্ভিদ ও শাকসবজির মধ্যে ছিলো কেশরজা, গোটাশাক, কচু, নুনকুটা, বৌশাক, টাকাথানকুনি, চিনিগুড়া, কানাইলতা, তুলসি, ঢেকিশাক, তেলাকুচা, দুধকচু, পিপুল, সেচি, পাথর কুচি, কাটাখইরা, দইগোলা, ডন্ডকলশ, হাতিরশূরা, বথুয়া, কালে মেঘ। তাছাড়া তারা বাড়ির পালানি জমিতে জৈব সারের তৈরি নিরাপদ কিছু শাকসবজি, লালশাক, পাটশাক, বেগুন, মিষ্টিলাঊ, মিষ্টি আলুশাক, বিলাতি সোয়াজ, দেশী লাউ শাক, টমেটো, মিষ্টি আলু, নিরাপদ শাকসবজি উপস্থান করেন এবং প্রদর্শিত উদ্ভিদ এবং শাকসবজির গুনাগুণ নিয়ে পারস্পারিক জ্ঞান বিনিময় করেন।


পারস্পারিক জ্ঞান বিনিময়ে মেলায় অংশগ্রহণকারী রোজেনা বেগম বলেন, ‘আমরা অধিকাংশ সময় বাজার থেকে শাকসবজি কিনে খাই। তবে আজ যেভাবে আমাদের আশেপাশে জন্মানো নিরাপদ খাদ্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে বাজারের থেকে না কিনে এগুলো খাওয়ার অভ্যাস বাড়ানো দরকার। আমি এখন থেকে এ গুলো সপ্তাহে ২ বার খাওয়ার চেষ্টা করবো।’


উপস্থিত কলেজ ছাত্র জাকির হোসেন তার অনুভুতি প্রকাশে বলেন, ‘প্রথমত: এসব গাছপালা লতাপাতা প্রদর্শনের মাধ্যমে আন্দাজ করে কোন কিছু সম্পর্কে জানার প্রক্রিয়াটা ভালো লেগেছে। এধরনের আয়োজনের জন্য বারসিক’কে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি বারসিক আমাদের মাঝে এই রকম সচেতনতামূলক আরো অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।’


মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য যতটা প্রয়োজন, শারীরিক সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর, বিষমুক্ত ও নিরাপদ খাদ্য ততোটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মানুষের সুস্থ, স্বাভাবিক রোগমুক্তভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতিক খাদ্যের উৎস্যগুলো চিহ্নিতকরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার ও বিকাশের উপর গুরুত্ব সর্বস্তরের মানুষের নৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিৎ।

happy wheels 2

Comments