পলি মাটিতে ফসল চাষ করে কৃষকের লাভ বেশি

হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
বন্যায় অনেক ক্ষতি হলেও কখনও কখনও বন্যায় মাঠে পলি পড়ে ফসলী জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। তাই বন্যা পরবর্তীতে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর চর এলাকায় কৃষকরা শাকসবজি চাষ ও রবি মৌসুমে মসলা, গম পায়রা, তেল জাতীয় শস্য আবাদে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বন্যা পরবর্তীতে আবাদেও জন্য তারা উঁচু জায়গায় ও বসতবাড়িতে সবজির চারা তৈরি করেন। কৃষকরা জানান, বন্যার পানি চলে যাওয়ার সাথে সাথে জমিতে টমেটো, বেগুন, লাউ, সিমের চারা পলি মাটিতে আবাদের ফলে এসব সবজি ভালো হয়। এতে করে বাড়তি সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কৃষকদের কম বেশি সবারই লাভ হয়।


এই প্রসঙ্গে বাহিরচরের কৃষক পিপাসা মনিদাস (৩২) বলেন, ‘হরিরামপুরে প্রতিবছর বর্ষার পানিতে মাঠে ও বাড়িতে চাষকৃত ফসল নষ্ট হয়। বর্ষার পানিতে কৃষকের ফসলের ক্ষতি হলেও পলি পড়ে ফসলি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। বন্যা পরবর্তীতে পলিযুক্ত মাটিতে আবাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি। উঁচু ভিটায় ও বাড়িতে সবজির চারা মসলা তৈরি করি। আমরা বেগুন, টমেটো, লাউ, সিম, ফুল কপি, বাঁধা কপির চরা ও মরিচ চারা তৈরি করি। বন্যা পরবর্তীতে জমি শুকিয়ে গেলে চারা রোপণের প্রস্তুতি গ্রহন করি। চারাগুলো ৫ থেকে ৮ ইঞ্চি হলে বীজতলা থেকে তুলে নিয়ে জমিতে রোপণ করি। পলিমাটিতে আবাদের জন্য আমাদের রাসায়নিক সার ও বিষ লাগে না, উৎপাদন খরচ কম হয়। ফলে আমরা নিরাপদ খাদ্য পাই ও আবাদে কৃষকের লাভ হয়।’


দাসকন্দির কৃষক অনিল দাস (৪৮) বলেন, ‘নিচু এলাকা বর্ষার কারণে মাঠ ঘাট বাড়ি পানিতে তলিয়ে আমাদের এলাকায় শাকসবজি থাকে না। ফলে আমরা প্রকৃতি থেকে শাপলা, কলমি শাক সংগ্রহ করি। তবে বর্ষার পরে দ্রæত আবাদের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। প্রসÍুতি হিসাবে চারা তৈরি করে রাখি। বর্ষার পানি গেলে উঁচু স্থানে লাল শাক, ডাটা, পাট শাক, ধনিয়া বীজ বপন ও লাউ, সীম, মিষ্টি কুমড়ার চারা রোপণ করি। পরবর্তীতে জমি প্রসÍুত করে টমেটো, বেগুন, মরিচ, লাউ চারা রোপণ করি। রবি মৌসুমে পিয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মরিচ, কালোজিরা, রাধুঁনী, গম, পাইরা, খেসারি, মুসরি ডাল, শরিষা, সাথী ফসল হিসাবে বাঙ্গি চাষ করি। রবি মৌসুমে মিশ্র ফসল চাষ করে আমরা লাভবান হই।’


তিনি আর বলেন, ‘আমরা কৃষি বীজ সংরক্ষণ করে চাষাবাদ করি। বাড়িতে গরু ছাগল পালন করে গোবর দিয়ে জৈব সার তৈরি। ফলে আবাদে খরচ কম হয়, নিরাপদ খাদ্য পাই। বর্ষা পরবর্তীতে আবাদের জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকে। আমাদের কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আবাদ করার জন্যই আমরা লাভবান হই। আমরা জৈবসার তৈরি ও ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব বেশি দিই। একই জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করে আমরা বেশি লাভবান হই। উদাহরণ হিসাবে একটি জমিতে যদি পিয়াজ, রসুন, বাঙ্গি ও জমির আউলে ধনিয়া চাষ করা হয় তাহলে একের পর এক ফসল উঠবে উৎপাদন খরচ কম হবে এবং লাভ বেশি হবে।’

happy wheels 2

Comments