মননশীল নেতৃত্ব সৃষ্টি করছে তানোস পরি

বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শহিদুল ইসলাম, অমৃত সরকার, শহিদুল ইসলাম শহিদ

কোন অঞ্চলের উন্নয়নে প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সঠিক নেতৃত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো একটার সাথে আরেকটির অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বৈচিত্র্য সুরক্ষা করে মননশীল নেতৃত্বই গড়ে তুলবে স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের ভিত। একই সাথে সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সৃষ্টিতেও ভূমিকা পালন করে। সহিংসতাও সমাজ থেকে দুরে চলে যাবে। তাই একটি দেশ তথা অঞ্চল বা এলাকার নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্য রক্ষা করা জরুরি। একই সাথে এগুলো রক্ষায় মননশীল নেতৃত্ব তৈরি করাও আরো বেশি জরুরি। আর একথা অনেকটাই সত্য যে, নবীনরা কার্যকর সুস্থ ও সুন্দরের পরিবেশ পেলে তারাও বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি ও মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। নিজেও একসময় আগ্রহী হয় মননশীল চর্চা ও সুন্দর সৃষ্টির দিকে। দায়িত্ব নেয় নিজের সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায়। নিশ্চিত জেনেও কিছু মানুষ যেমন বৈচিত্র্য আর শ্রদ্ধাশীলতাকে ধ্বংস করছে। এই ধ্বংসযজ্ঞে অংশগ্রহণ করে আবার উপভোগও করছে। ঠিক তেমনি এমন কিছু মানুষও আছে যাঁরা বৈচিত্র্যের আঁধার এই সোনার বাংলার পথে প্রান্তে অজান্তেই বৈচিত্র্য সুরক্ষা করে চলছেন প্রতিমহুর্তে; বাঁচার তাগিদেই লড়াই করেন এবং বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখেন। বলতে গেলে আমাদের বৈচিত্র্য, আমাদের উন্নয়ন টিকিয়ে রাখছে তাঁরাই ।
13256448_1287151671313421_8231239391653984415_n
নানা দিক থেকেই আলাদা বৈচিত্র্যে ভরপুর বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীর তানোর উপজেলা বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। বহুবৈচিত্র্যে ভরপুর বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত তানোর উপজেলা শিক্ষা, সংস্কৃতি, বৈচিত্র্য রক্ষা ও মননশীল নেতৃত্ব তৈরিতে তানোর সহিত্য পরিষদ দীর্ঘ তিন বছর থেকে কাজ করছে। বৈচিত্র্যমনা, বিচ্ছিন্ন মানুষগুলো এক হয়ে তানোর উপজেলা সাহিত্য পরিষদ গঠন করেন। তানোর সাহিত্য পরিষদের যাত্রা শুরুর ইতিহাস অনেক দীর্ঘ হলেও মূলত ২০১৪ সাল থেকে সাংগঠনিক এবং কার্যকর বৈচিত্র্যময় নেতৃত্বের কারণে বহুমুখী ভূমিকা পালন করে আসছে।

তানোস পরি (তানোর সাহিত্য পরিষদ) এই এলাকায় শিশু, কিশোর, শিক্ষার্থী-শিক্ষক, তরুণ, নবীন, প্রবীণ, সরকারি ও বেসরকারিসহ নানা পেশা ও বয়সের  মানুষকে সাথে নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণ প্রকৃতি ও সংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা ও চর্চায় ভূমিকা পালন করছে। নিজের পরিবেশ ও প্রকৃতির সাথে মিল রেখে বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য সাময়িকী, পত্রিকা ও প্রকাশনা করে থাকে। তানোস পরির আয়োজনে বিলকুমারী বিলের বৈচিত্র্য, শিব নদী এবং তানোর উপজেলাসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের বৈচিত্র্য নিয়ে ‘বিলকুমারী’, ‘ধানসিড়ি’, ‘স্বার্ণাহার’ নামে সাহিত্য প্রত্রিকাগুলো নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে। প্রকাশিত পত্রিকাগুলোতে গ্রামের স্থানীয় তরুণসহ সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ নিজের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি নিয়ে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, প্রবাদ, রচনা ও নিজস্ব অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে লিখেন। নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছেন নিজের সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে রক্ষার জন্যে। দিনে দিনে  বৈচিত্র্যময় শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরের মিথস্ক্রিয়ায় বৈচিত্র্যময় নৈতৃত্ব তৈরি হচ্ছে।
15935661_1159269240860751_1334555322_n
তরুণরা নিজেরাও যেমন অভিজ্ঞজনের কাছ থেকে প্রকৃতি এবং সাহিত্য সম্পর্কে জানছে তেমনি পাশের আরেকজনকেও জানান দিয়ে দিচ্ছে। জাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ পালন করে তরুণসহ নবীনদের মধ্যে জতীয় চেতনাবোধ জাগ্রত করতে কাজ করছে। সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, সমাজকে বৈচিত্র্যময় ও আলোকিত করতে মননশীল উদারচেতনা সম্পন্ন আগামী প্রজন্ম প্রত্যাশায় নানা ধরনের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে তানোস পরি। স্কুল, কলেজ পর্যায়সহ যুব তরুণদের মধ্যে পাঠচক্র এবং নিজের ইতিহাস, সংস্কৃতি জানা ও চর্চার জন্যে বই মেলার আয়োজন করে। পানি সংকটাপন্ন বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাকৃতিক জলাভূমি রক্ষায় শিবনদী ও পাশের বিলকুমারী বিল রক্ষায় নানা কর্মসূচি করে থাকে। তানোস পরি (তানোর সাহিত্য পরিষদ) উপজেলার তরুণদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম ভিত্তিক জনপাঠাগার গঠনের কাজ করছেন। তরুণদের সঠিক নেতৃত্ব এবং মননশীল গুণাবলীর বিকাশে কর্মশালা, প্রশিক্ষণ এর আয়োজন করে। তানোর সাহিত্য পরিষদ এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ রক্ষাসহ এবং তৃণমূল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগী গ্রুপ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
12919735_1250186395009949_635077884804709476_n
এ প্রসঙ্গে তানোর সহিত্য পরিষদের উপদেষ্টা এবং তানোর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মুহাঃ শওকাত আলী বলেন, “তানোর সাহিত্য পরিষদ এলাকায় সুকুমার বৃত্তির বিকাশে, মননশীল চর্চায় ও সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করছে।” তিনি আরো বলেন, “তানোর সাহিত্য পরিষদ গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বই ও খাতা দিয়েও সহায়তা করে। একই সাথে এলাকার মানুষের সমস্যাগুলো সমাধানে উপজেলার সরকারের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সংযোগ করে দিতেও ভূমিকা পালন করে।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “তানোর সাহিত্য পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসন সবসময় উক্ত উদ্যোগগুলো পালনে যৌথ ভূমিকা পালন করবে।” অন্যদিকে তানোর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি অসীম কুমার সরকার বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য সকলকে সাথে নিয়ে মননশীলতা চর্চা ও মানবিক প্রজন্ম তৈরি করা।” তিনি বলেন, “তানোর প্রশাসন ও বারসিকের  সহযোগিতায় তানোস পরি নিয়মিত উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সঙ্গীত, সাহিত্য ও কবিতা এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণ, প্রকৃতি বিষয়ে কর্মসূচি করে থাকি। যাতে নিজস্ব বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি প্রজন্ম তৈরী হয়।” তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেন, “দিনে দিনে তানোস পরির পরিধি ও তরুণ নৈতৃত্ব বেড়েই চলছে। একসময়ের সংস্কৃতি বিমুখ তানোর এখন সবসময় সব ধরনের সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো আমার করে থাকি। সকল শ্রেণীর মানুষও আমাদের সাথে আসছে এবং সহযোগিতা করছে।”

happy wheels 2