প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যমুক্ত হলো রাজশাহীর শ্রীরামপুর টি-বাঁধ এলাকা
রাজশাহী থেকে আতিকুর রহমান আতিক
একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন রাজশাহীর শ্রীরামপুরস্থ টি-বাঁধ ও আশেপাশের পদ্মাপাড় ও পদ্মার চর প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যমুক্ত হলো। ‘শহর আমার দায়িত্ব আমার’ শীর্ষক চলমান গণসচেতনতা প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ইয়্যাসের (ইয়ুথ এ্যকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ) তরুণেরা পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে রাজশাহীর শ্রীরামপুরস্থ টি-বাঁধ ও আশেপাশের পদ্মাপাড় ও পদ্মার চর প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যমুক্ত করে।
এতে তরুণ সংগঠন ইয়্যাস, সম্মিলিতি স্বেচ্ছাসেবী ফোরাম-রাজশাহী এবং বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় শতাধিক তরুণ স্বেচ্ছাসেবী অংশগ্রহণ করেন। তরুণদের এ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশনেন শিক্ষার্থী-অভিভাবক সচেতনতামূলক কর্মসূচীর (এসজিএপি) উদ্যোক্তা ও রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আবু আহাম্মদ আল মামুন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রের সভাপতি জাওয়াদ আহম্মেদ রাফি, সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল হোসেন, ইয়্যাস এর সভাপতি শামীউল আলীম শাওন, সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরাম রাজশাহীর আহবায়ক সুমন আজিম প্রমুখ।
পদ্মা নদীকে দূষণমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে গণসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তরুণ সংগঠন ইয়্যাস ও উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক যৌথভাবে “প্লাস্টিক ও বর্জ্য মুক্ত পরিচ্ছন্ন পদ্মাপাড়, জীবন্ত নদী তারুণ্যের অঙ্গীকার” স্লোগানে আয়োজিত মাসব্যাপী বরেন্দ্র অঞ্চলের ‘জীবন্ত সত্তা’ পদ্মা নদী রক্ষার ডাক প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে তরুণেরা এ পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে রাজশাহীর শ্রীরামপুরস্থ টি-বাঁধসংলগ্ন পদ্মাপাড় ও এর আশেপাশের এলাকাসহ পদ্মার চরে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যমুক্ত করেন তারা। একই সাথে সেখানের দর্শনার্থী ও ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের সাথে তরুণরা কথা বলে তাদেরকে প্লাস্টিক ও পলিথিনসহ অপচনশীল পন্য যত্রযত্র ফেলে পরিবেশ দূষণ না করার বিষয়ে সচেতন করেন।
এর পাশাপাশি তরুণরা হ্যান্ডমাইকের সাহায্যে সেখানে সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করেন। প্রচারণাকালে সংগঠনের পক্ষ সকল দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীদেরকে উদ্দেশ্য করে সেখানে বলা হয়, নদী তীরে ময়লা আবর্জনা ফেলায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নদীর প্রবাহ। নদীতে ফেলা হচ্ছে চিপসের প্যাকেট, বিস্কুটের প্যাকেট, কোমল পানীয় বোতল আর ক্যান, প্লাস্টিক ও পলিথিনজাত সহ সব ধরনের বর্জ্য। পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিকের বর্জ্য অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে নানামাত্রিকে হুমকির মুখে ফেলে। কারণ, প্লাস্টিক পচনযোগ্য নয়। প্লাস্টিকের বর্জ্যে প্রকৃতির ভারসাম্যের ওপর যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয় সেখান থেকে পরিবেশকে নিরাপদ রাখতে এমন অপচনশীল দ্রব্যকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে পারলে দূষণ ঠেকানো সহজ হবে।
প্লাস্টিক ও পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করতে পারলে খুব বেশী ভালো হবে বলে উল্লেখ করে প্রচারণাকালে বলা হয় যে, প্লাস্টিক ও পলিথিন মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। নদী আর সমুদ্রে ফেলে দেয়া এসব অব্যবহৃত প্লাস্টিক ও পলিথিনজাত পণ্য পানির স্বচ্ছতা, নাব্য এবং সুপেয় তরল পানিকে দূষণ পর্যায়ে নিয়ে যায়। তাই আমাদের সকলকে প্লাস্টিক ও পলিথিনসহ সকল প্রকার অপচনশীল দ্রব্য ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। একই সাথে সকলকে প্লাস্টিক ও পলিথিনসহ সকল প্রকার অপচনশীল দ্রব্য পদ্মা পাড়ে নদীতে বা অন্য কোনও উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থান (ডাস্টবিন) এ ফেলার জন্য আহবান জানানো হয়। এছাড়াও ক্রেতা-দর্শনার্থীরা যেন পরিবেশ দূষণ না করে সেই দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর প্রবীণ সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম “প্লাস্টিক ও বর্জ্য মুক্ত পরিচ্ছন্ন পদ্মাপাড়, জীবন্ত নদী তারুণ্যের অঙ্গীকার” স্লোগানে আয়োজিত মাসব্যাপী বরেন্দ্র অঞ্চলের ‘জীবন্ত সত্তা’ পদ্মা নদী রক্ষার ডাক প্রচারাভিযানের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনীকালে প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ও আয়োজন করা হয়।