পরিবেশ বাঁচলেই বাঁচবে পৃথিবী
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে অনন্যা আক্তার
“প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে সামিল হই সকলে” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের চরচারাভাঙ্গা গ্রামে বারসিক’র উদ্যোগে ও স্থানীয় কৃষক, প্রবীণ ও শিশু,কিশোরের অংশগ্রহণে গতকাল বিশ^ পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে কৃষাণী আলেয়া বেগমের সভাপতিত্ত্বে ও বারসিক মাঠ সহায়ক অনন্যা আক্তারের সঞ্চালনায় কর্মসূচির ধারণা বিষয়ক আলোচনায় বারসিক প্রোগ্রাম সমন্বয়ক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ নিয়ে কথা বলাটা সমীচীন। সুস্থ জীবনের জন্য পরিবেশের গুরুত¦ অপরিসীম। জলবায়ু পরিবর্তন বলতে আমরা বুঝি এর উপাদান যেমন আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, তাপমাত্রা এসবের পরিবর্তন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, জলবায়ু প্রাকৃতিক প্রভাবে যতটা না পরিবর্তিত হয় তার চেয়ে বেশি পরিবর্তিত হয় মানবসৃষ্ট কারণে। আমরা বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষিত করছি। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে প্লাস্টিক দূষণ। পরিবেশ বিপর্যয়ে প্লাস্টিক, যা ছিলো শুধু মাত্র সাগর, নদী, নালা, খাল বিলে সীমাবদ্ধ কিন্তু বর্তমানে তা মায়ের বুকের দুধে এমনকি রক্তেও মাইক্রোপ্লাস্টির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে যা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রাত্যাহিক জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে চলেছে, যেমন খাদ্য পাত্র, যন্ত্রপাতি,আসবাবপত্র, ব্যাগ, খাবারের পাত্র ইত্যাদি। তবে, প্লাস্টিক খাবার পাত্রগুলো শিশুদের জন্য সম্পূর্ণরূপে অনুপযুক্ত এবং ক্ষতিকর। প্লাস্টিক খাবার পাত্রগুলো তৈরী হয় পলিপ্রোপিলিন এবং পলিস্টারের মতো উচ্চমাত্রার প্লাস্টিক থেকে। এই প্লাস্টিক পাত্রগুলোর উপস্থিতি আনেক প্রাথমিক খাদ্য পদার্থের সাথে সংযুক্ত হলে তা খাদ্য পদার্থের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হতে পারে। এই কেমিক্যাল পদার্থ সেবন করলে শিশুদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি ঘটতে পারে।’
ভয়াবহ এই পরিস্থিতির কথা শুনে প্রিয়া আক্তার (১৯) বলেন, ‘প্লাস্টিক অপচনশীল দ্রব্য। এটি মাটির স্বাভাবিকত্ব নষ্ট করে। আমরা প্লাস্টিকের সাথে অনেকটাই জড়িয়ে পড়েছি, সহজে হয়তো প্লাস্টিকের হাত থেকে রেহাই পাবো না। কিন্তু আজ থেকেই শুরু করবো প্লাস্টিক কম ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব পদার্থ দিয়ে তৈরি জিনিস বেশি ব্যবহার করতে।’
সপ্না আক্তার (৪২) বলেন, ‘আগে জানতাম, যেখানে সেখানে ময়লা ফেললে পরিবেশ দূষষ হয় আবার কলকারখানার বর্জ্য, গাড়ীর কালো ধোঁয়া ইত্যাদির কারণে পরিবেশ দূষণ হয়। প্লাস্টিক যে পরিবেশ ও আমাদের ক্ষতি করে আজ জানলাম।’ কৃষাণী শিল্পি আক্তার (৩৮) বলেন, ‘সবুজে ভরা ছিলো আমাদের গ্রাম, কিন্তু বর্তমানে আমরা ইট পাথরের শহর বানিয়ে ফেলতেছি। অকারণে গাছ কেটে ফেলছি। গাছ আমাদের বিনামূল্যে অক্সিজেন দেয়, যখন আমরা হসপিটালে ভর্তি হই তখন এই অক্সিজেনের জন্য লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা খরচ করতে হয় তবুও আমরা গাছের গুরুত্ব বুঝিনা। আমরা বাজার থেকে আনা প্লাস্টিকের ব্যাগ, বাচ্চাদের পরিত্যাক্ত খেলনা, পানির বোতল যেখানে সেখানে ফেলে দেই। আগে কখনো ভাবি নাই এসব আমাদের ক্ষতি করে। আমরা অনেকেই হয়তো বিষয়টা আজ জানলাম এখন থেকেই আমরা চেষ্টা করবো খুব কম প্লাস্টিক ব্যবহার করার ।
পরিশেষে বক্তারা বলেন, ‘আসুন সকলে পরিবেশ নিয়ে ভাবি, ভাবনাগুলো বাস্তবায়ন করি। পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো ব্যবহার ও সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হই। তবেই আমাদের পরিবেশ সুন্দর হয়ে উঠবে, আমাদের আগামী প্রজন্ম পাবে একটা সুন্দর পরিবেশ।