যুব সংগঠনের সহায়তায় চিকিৎসা চলছে দরিদ্র শিশুটির

নেত্রকোনা থেকে মো. আয়াতুল ইসলাম

যে বয়সে সমবয়সীদের সাথে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সেই ইট, সিমেন্ট, বালির সাথে তার সখ্যতা। যে বয়সে নতুন উদ্যমে, নতুন চোখে পৃথিবীকে চিনবে, সেই চোখেই এখন অনিশ্চয়তা ভর করেছে। অভাবের সংসার। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বাবাকে সাহায্য করতেই আতকাপাড়া গ্রামের ৮ বছরের মাসুম বাবার সাথে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে যেতো। এমনি করে একদিন কাজ করছিল কেন্দুয়া উপজেলার কোনো একটি গ্রামে। কিন্তু অসাবধানতাবশত: মই থেকে পড়ে গিয়ে তার ডান হাতটি ভেঙে যায়। নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মাসুমকে ময়মনসিংহ পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানকার ডাক্তার জানালেন অপারেশন করাতে হবে।
একদিকে জায়গা জমি তেমন নেই অন্যদিকে রোজগার কম। রাজমিস্ত্রির কাজ করে কোনো রকমে সংসার চলে। অপারেশন করাতে হলে অনেক টাকার দরকার। মাসুমের দরিদ্র বাবা হাবুল মিয়া ভেবে দিশেহারা। তবুওতো অপারেশন করাতে হবে। কোনো উপায় না পেয়ে বসত ভিটার সামনে এক টুকরো জমি বিক্রি করে ছেলের অপারেশন করালেন। ভেবেছিলেন সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হলোনা। কয়েকদিন পরে ছেলের হাতে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। আবার নিয়ে যান ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার পরীক্ষা করাতে বলেন।

IMG_20180917_154109

কিন্তু কপাল এমনই খারাপ যে অপারেশনের জায়গায় ইনফেক্শন (সংক্রামণ) দেখা দেয়। সে জায়গা থেকে অনবরত রক্ত আর পুঁজ পড়তে শুরু করে। প্রতি সপ্তাহে ময়মনসিংহ গিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে হয়। প্রতিবারের জন্য ১২০০/ (এক হাজার দুইশত) টাকা করে খরচ দিতে হয় ডাক্তারকে। এদিকে টাকারও সংস্থান হচ্ছেনা। মানুষের কাছ থেকে ধার করে, গরু ছাগল বিক্রি করে, টাকা যোগাড় করে ছেলের চিকিৎসা চলছিল।

ডাক্তার জানালেন অপারেশন সঠিকভাবে হয়নি, তাই রক্ত পড়া বন্ধ হলে আবার অপারেশন করাতে হবে। মাসুমের দরিদ্র বাবা আরো অসহায় হয়ে পড়লেন। রাজমিস্ত্রির কাজ করে ৪ সন্তান নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এমনিতেই অনেক ধার দেনা হয়েছে। আবার অপারেশনের টাকা কিভাবে যোগাড় হবে।

লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের যুব সংগঠন বন্ধু মহলের কয়েকজন যুবক এগিয়ে এলেন তাঁকে সাহায্য করতে। সদস্যরা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে যোগাযোগ করলেন আর্থিক সহায়তার জন্য। শিক্ষকদের নির্দেশে শিক্ষার্থীরা তাদের একদিনের টিফিনের টাকা জমা করে তুলে দিল প্রধান শিক্ষকের হাতে। সদস্যরাও নিজেরা চাঁদা দিয়ে প্রায় ১০,০০০/ (দশ হাজার) টাকা একত্রিত করে মাসুমের বাবার হাতে দিলেন। অনেক টাকার প্রয়োজনীয়তার মাঝে এই টাকা সামান্য হলেও চাহিদা পূরণ করবে। তবে এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছে যুবকরা যদি আরো কিছু টাকার ব্যবস্থা করা যায়।

এখন শুধু অপেক্ষা, ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হলেই মাসুমের হাতে আবার অপারেশন করা হবে। বন্ধু মহলের একজন সদস্য ব্যক্তিগত আগ্রহে ডাক্তারের সাথে কথা বলে সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর রাখছে পরিবারটির। বুদ্ধি, পরামশর্ দিয়েও তারা সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সংসারের অভাব পূরণ করতে গিয়ে কোমলমতি শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের দুরন্ত শৈশব। ভবিষ্যৎ ঢেকে যাচ্ছে আঁধারে। উদারমনা, সচেতন ও বহুত্ববাদি সমাজ বিনির্মাণে একদল যুবকের প্রচেষ্টায় মাসুম সুস্থ হয়ে উঠলে সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। যেখানে সমাজের বিত্তবানেরা চোখ বুজে থাকে, সেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্ণধারগণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে অসহায়দের সহায় হতে হয়। প্রয়োজন অনুসারে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়।

happy wheels 2

Comments