আশ্রয়ন প্রকল্পের অর্ধশত পরিবারের পাশে থাকুন
আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) ॥
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের নিন্দাপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামে অর্ধশত পরিবারের বসবাস। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে ঘর-বাড়িগুলো সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভূমিহীনদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করে দেয়। এতে আশ্রয় মেলে সহায়-সম্বলহীন ভূমিহীন পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিন্দাপাড়া আবাসনটি ৯ বছর নির্মাণের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এগুলোর সংস্কার কাজ না করায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ভূমিহীনদের এই আবাসস্থল। ঘিওর উপজেলায় ৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রামের অধিকাংশ বাড়িরই এখন জরাজীর্ণ অবস্থা। এই অবস্থায় ওই প্রকল্পগুলোতে বসবাসরত পরিবারগুলো কেউ চলে যাচ্ছে অন্যত্র। আর যাদের একেবারেই অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় নেই তারা বাধ্য হয়েই থাকছেন এসব জরাজীর্ণ ঘরে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর বেহাল অবস্থা। অধিকাংশ ঘরের টিনের চালাগুলো ফুটো ও স্ক্রুরুর গোড়া দিয়ে বৃষ্টি হলেই পানি পরে। জানালা-দরজাগুলো ভেঙে যাওয়ায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে ওই প্রকল্পের বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেখানে ৫০টি রুম আছে। তার মধ্যে ৪৭টি পরিবারে প্রায় ২৫০ জন লোক বসবাস করছে। আবাসনটি তৈরি হওয়ার ৯ বছরেও কোনো মেরামত করা হয়নি। তাদের সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা যেমন বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, ভিজিএফ কার্ডসহ কোনো ধরনের ভাতাই তাদেরকে দেওয়া হয় না। ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে হত দরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা দরে চাউল থেকেও বঞ্চিত তারা। বছরে একবার ঈদের সময় মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দূর্জয় একটি কাপড় ও একটি লুঙ্গি দেন। আর শীতের সময় উপজেলা পরিষদ থেকে একটি করে কম্বল দেন। এ সকল পরিবারের সদস্যরা ভিক্ষাবৃত্তি, বাড়ীতে-বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ ও পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করে সংসার চালায় বলে তারা জানান।
নিন্দাপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি মো. তামেস খাঁ ও সাধারণ সম্পাদক মো. লালন মিয়া জানান, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪৭টি পরিবার বসবাস করে। অন্যত্র কোনো আবাসভূমি না থাকায় নানান প্রতিকূলতার মধ্যে কোনো রকমে বসবাস করছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে কালিগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদী থাকায় প্রতি বছর নদী ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। নদীর পার ভাঙনের ফলে ঘড়-বাড়িগুলোও হুমকির সম্মুখীন। প্রত্যেকটি পরিবারকে টিনশেডের ঘর এবং রান্নাঘরসহ পাঁচটি পরিবারের জন্য একটি টিউবওয়েল ও একটি ল্যাট্রিন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিনগুলোও এখন অকেজো প্রায়। আমাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করছি।
সিংজুরি ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজ মাষ্টার বলেন, ‘আবাসন প্রকল্পটির দূর্ভোগ রোধে অনেক অর্থের প্রয়োজন চাহিদা মাফিক বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা সম্ভব হবে। এ যাবৎ কোনো বরাদ্দ আসেনি। আবাসন প্রকল্পগুলো দেখাশোনা করেন উপজেলা ইউএনও অফিস। আমার পরিষদে কোন সাহায্য-সহযোগীতা আসলে ঐ ওয়ার্ডের মেম্বার দিয়ে পৌঁছিয়ে দিই।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা খন্দকার জানান, এই উপজেলায় মোট ৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর বেহাল অবস্থা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সংস্কারের প্রয়োজন। কিন্তু কোনো বরাদ্দ না আসায় সেগুলো সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। বরাদ্দ আসলেও সেগুলো সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হবে।’