বস্তিবাসীর স্থায়ী আবাসন টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত
ঢাকা থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিদিন গ্রাম ছেড়ে নগরে আসতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে ঢাকা শহরে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আলোচকরা মনে করেন। এই বাস্তুহারা মানুষেরা নগরে এসে গৃহহীন হয়ে পড়েন। সংকট আরো তীব্র হয়। নগরের গৃহহীন দরিদ্র মানুষের আবাসন সংকটের সমাধান হওয়া জরুরি। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে (ভিআইপি লাউঞ্জ) পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বারসিক এবং কোয়ালিশন ফর দ্যা পূওর (কাপ)- আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন, নগর দরিদদ্র্রের আবাসন: নগর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা” শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন।
নাগরিক সংলাপের প্রধান অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মাননীয় মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নগর দরিদ্রদের আবাসন সংকট বাড়ছে দিনে দিনে। যখন আমি নির্বাচিত হওয়ার পথে, তখন আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে গণভবনে যাই এবং রাতে খাবার টেবিলে তিনি আমাকে বলেন, “সবার আগে নগরের নি¤œ আয়ের মানুষদের আবাসন সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। বস্তিবাসীরা যাতে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক কিস্তিতে আবাসনের মালিক হতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে”। তিনি আরো বলেন, ‘যারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তাদের সবাইকে নিয়ে নিরাপদ নগর গড়তে চাই। আমার শপথের পর আমি আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সাথে নিয়ে দ্রæততম সময়ের মধ্যে এই বিষয়ে কাজ করতে চাই।’
বিশেষ অতিথি নগর গবেষণা কেন্দ্র (ঈটঝ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ূ পরিবর্তনের কারনে ধারণা করা হচ্ছে ত্রিশ বছরের মধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে ফলে দুই থেকে তিন কোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্ত হয়ে উচুঁ এলাকায় চলে আসবে। এটা আমাদের দেশের জন্য চিন্তার বিষয়। সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বিবেচনায় রেখে নগর পরিকল্পনা করা দরকার।’
অধ্যাপক ড. শহীদুল আমিন বলেন, প্রতিদিন গড়ে সতেরো শো মানুষ ঢাকায় আসে এবং হিসাব করে দেখা গিয়েছে প্রতি বছরে প্রায় ৬ লাখ মানুষ ঢাকা শহরে নতুন করে যুক্ত হয়। তিনি বলেন, নগরের মোট জনসংখ্যার মোট দরিদ্র ৩৫ ভাগ দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র ১০ ভাগ যাদের আয় সাত হাজার টাকার নিচে।
বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ’র সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং নাগরিক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন,বুয়েটের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের সাবেক ডীন প্রফেসর রোকসানা হাফিজ, কাপ এর চেয়ারপারসন ডা. দিবালোক সিংহ, ঢাকা ১৩ নাম্বার ওয়ার্ডের কমিশনার এনামুল হক আবুল, আওয়ামী বাস্তহারা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন রাশেদ হালদার, বস্তিবাসীদের নেতা ফাতেমা বেগম, কুলসুম বেগম, হোসনে আরা বেগম রাফেজা, ইডিপির নির্বাহী পরিচালক কাজী বেবি, নাসফের সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানাবিধ প্রাকৃতিক আপদ বন্যা, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস, খরা, শৈতপ্রবাহ, লবণাক্ততার কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর গ্রামীণ জনগোষ্ঠি জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে ভিড় করছে। ফলে সহজলভ্যতার কারণে তাদের অধিকাংশেরই জায়গা হচ্ছে শহরের অপরিকল্পিত এবং অপরিচ্ছন্ন বস্তিতে ও ফুটপাতের খোলা জায়গায়। তাছাড়াও গ্রাম এবং শহরের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য তাদেরকে শহরে আসতে বাধ্য করছে। ফলে দ্রæত বাড়ছে ঢাকা মহানগরীর আয়তন, জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব এবং শহর হারাচ্ছে বাসবাসযোগ্যতা।