ভালোবাসা বাড়ে সহভাগিতায়
শামীউল আলীম শাওন, রাজশাহী থেকে:
জন্মদিন, জন্ম উৎসব পালন বহু প্রাচীন একটি বিষয়। ঠিক কবে থেকে মানুষের জন্মদিন উৎসব শুরু হয়েছে তার অকাট্য কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে ধর্মীয় দেব দেবীর আবির্ভাব বা নিজেকে দেবতা বা ঈশ্বররূপে রূপান্তরিত হওয়ার দিনটিকে অনেকে উৎসব হিসেবে পালন করেছেন। মিশরের ফারাও বংশধরদের এমন ইতিহাস জানা যায়। প্রাচীন মিশরের ফারাওদের ঈশ্বর মনে করা হতো। ফারাওদের সিংহাসনে বসার দিনটিকে ঈশ্বরে রূপান্তরের দিন মনে করতো। প্রতিবছর এই দিনটিকে তারা বেশ ধুমধামের সাথেই পালন করতো। এভাবে দিনে দিনে পারস্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন সম্প্রদায় আর নানা মতের মধ্যে দিয়ে জন্মদিন ধীরে ধীরে ইউরোপীয়দের মাধ্যমে একটি ব্যক্তি জন্মদিন উৎসবে পরিণত হতে থাকে। তবে আধুনিক জন্মদিন উৎসব পালনে পশ্চিমাদের পুঁজিবাদ বিকাশের ধারার একটি কৌশল হিসেবেও অনেকে মনে করেন। কারণ এই উৎসবকে কেন্দ্র করে থাকে নানা ব্যবসার পসরা আর কৌশলী প্রচারণার নানা আয়োজন। এখন বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন বা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয় মূলত ব্যবসায়িক একটি কৌশল হিসেবে।
সময়ের বিবর্তনে জন্মদিন বা জন্ম উৎসব এখন সারাবিশ্বের মধ্যে একটি অন্যরকম উৎসবে পরিণত হয়েছে। জন্মদিন পালন আজকাল শুধু একটি নিছন মজাই নয়, এটি জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। জন্মদিনকে কেন্দ্র করে মানুষ পারবারিক সামাজিক সেতুবন্ধনের দিকটিও ঠিক রাখার চেষ্টা করেন। একে কেন্দ্র করে পারিবারিক যোগাযোগও তৈরি হয়, যা ইতিবাচকও বটে। আবার দেখা যায় শ্রেণী বা বয়সভেদে জন্মদিন পালন, জন্ম উৎসব উদযাপন এখন অনেকটা প্রতিযোগিতাও বটে বা বিশেষ আয়োজনও বলা যেতে পারে।
বলা প্রযোজন যে, দিনে দিনে ব্যক্তি জন্মদিন পালন বা জন্ম উৎসব উদযাপন বর্তমান তরুণদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতার মতো। এই জন্মদিনে বড় বড় দামি কেক কাটা হয়, বেলুন উড়ানো হয়, মোমবাতি জ্বালানো বা নিভানো হয় এবং আরো থাকে বাহারি খাবারের আয়োজন। অনেকসময় দেখা যায় তরুণরা ফাস্ট ফুডের দোকানে গিয়ে বন্ধুদের খাওয়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। কারণ কার জন্মদিনে কে বেশি আর দামি জিনিস খাওয়ালো তাই নিয়ে হয় ব্যাপক প্রতিযোগিতা। গ্রাম থেকে শহরে এই প্রতিযোগিতার চর্চা আরো বেশি।
সমাজ বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, মানবিক চর্চা, নিজের সমাজের প্রতি খেয়াল না করে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতার দিকেই শুধু খেয়াল করা, বর্তমান র্ভাচুয়াল জগতে ব্যক্তি প্রচারণা, নিজের অবস্থানের জানান দেয়াসহ ইত্যাদি বিষয়গুলোর কারণে অনেকে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। আবার দেখা যায় সচেতন তরুণরা তার জন্মদিনটিতে অনেক সময় সামাজিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে দিনটি উৎযাপন করে থাকেন।
যেমন সম্প্রতি রাজশাহীর তরুণেরা সেই চর্চা শুরু করেছেন। মানবিক এবং মননশীলতার চর্চা এবং নিজ সমাজের অবহেলিত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তারা। রাজশাহীর সচেতন তরুণদের কাছে জন্মদিনটি শুধু নিছক ফাস্টফুডের দোকানে কেক কাটা আর নিজেরা বাহারি খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া নয়। তারা মনে করেন, এই বিশেষ দিনটিতে সমাজের অবহেলিত বঞ্চিত মানুষের পাশে থেকে কাটানো বা ভালো কোন কাজ করাই অনেক বেশি মনের খোরাক জোগায়। একই সাথে পরিবারের সাথে কাটানো দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোসা. আশিফা আবরী স্মরণীর জন্মদিন। এ তরুণী তার জন্মদিনে নিজের বন্ধুদের নিয়ে রাজশাহী মহানগরীর নমোভদ্রা বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে সময় কাটান। প্রায় ৫০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে তারা আনন্দ আর মজায় মেতে উঠেন। শিশুদের সাথে নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটেন। তাদের হাতে তুলে দেন চকলেটসহ নাস্তা।
জন্মদিনে নিজের অনুভুতির কথা বলতে গিয়ে স্মরণী বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার জীবনের একটি অন্যরকম আনন্দের দিন। ইতিপূর্বে আমি এভাবে কখনোই আমার জন্মদিন পালন করিনি। আগামী দিনগুলো আমি এভাবেই সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় মানুষের পাশে থাকতে চাই। জন্মদিনসহ নিজের প্রতিটি বিশেষ মূহুর্তগুলো তাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চাই।’
বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে জন্মদিন পালনের সময় বারসিক রাজশাহী রিসোর্স সেন্টারের প্রোগ্রাম অফিসার মো. জাহিদ আলী, হিসাবরক্ষক উপেন রবিদাস, কর্মসূচি সহকারি তহুরা খাতুন লিলি, রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল ”েঞ্জ-ইয়্যাসের সভাপতি শামীউল আলীম শাওন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও স্মরণীর বন্ধু রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগের ষষ্ঠ পর্বের শিক্ষার্থী সারজিদ ইসলাম ও হৃদয় হোসেন আহাদ, শাহমুখদম কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে সুমাইয়া এবং আড়ানী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহিল কাফি উপস্থিত ছিলেন।