করোনা প্রতিরোধে প্রচারণা
ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল
দশ থেকে বারোজন মানুষ বস্তির দোকানটাতে বসেছিলেন। চুলায় কেটলি আর এর মধ্যে একজন গল্প করছিলেন। গল্পের বিষয়বস্তু আর কিছু নয় করোনা ভাইরাস। বয়স্ক যিনি তার ভাষ্য মানুষ খারাপ হয়ে গেছে তাই এই ধরণের রোগ হচ্ছে। মানুষই এই রোগের জন্য দায়ী। চায়ের দোকানদার আইনুন্নাহার আপা বললেন, ‘মানুষ এতো ভয় পাইছে যে অনেকে ঘর থেকেই বার হইতাছে না।’
এ দৃশ্য মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানের সোনা মিয়ার টেক (পাইওনিয়র হাউজিং) বস্তির। এ বস্তিতে বসবাস করে প্রায় এক হাজার পরিবার। এ বস্তিতে মানুষের হাজারো সমস্যা বিদ্যমান। তবে সমস্যার একটা বড় বিষয় হলো এখানকার মানুষদের অধিকাংশ পড়াশুনা জানেন না। যখন কোন বিষয় তাদের কানে পৌছায়, তা পৌছায় খুবই বিকৃতভাবে বা গুজব হয়ে। যেমন কিছুদিন আগেই ছেলে ধরা আতঙ্কের সময়ও এখানে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিলো বলে জেনেছি। এছাড়া লবণের মূল্যবৃদ্ধির গুজবে আমি নিজে দেখেছি একেকজন মানুষ ৩/৪ কেজি করে লবণ কিনে ফিরছেন। আর এই মূহুর্তে দেখছি করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। আর এই আতঙ্ক এখন গুজবে রূপ নিয়েছে।
এই গুজব প্রতিরোধের জন্য বারসিক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) উদ্যোগে চাঁদ উদ্যানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গত ১১ মার্চ সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যাক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকার লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, চাঁদউদ্যান, বালুরমাঠ এলাকায় প্রচারণামূলক ফেস্টুন লাগিয়ে জনগণকে সচেতন করা হয়। ফেস্টুনে করোনা কিভাবে ছড়ায়, কি কি লক্ষণ, প্রতিকার কি ও কি কি ব্যক্তিগত সচেতনতা গ্রহণ করা জরুরি তা উল্লেখ করা হয়।
ফেস্টুুনের শেষে সন্দেহভাজন হলে কোথায় যোগাযোগ করতে হবে তাও উল্লেখ করা হয়।
প্রচারণা কালে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যে, নি¤œ আয়ের মানুষদের মধ্যে এক ভিতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে করোনা ভাইরাস। এসময় লোকজন ভিড় করে করোনা প্রতিরোধের বার্তা পড়তে শুরু করেন। এসময় বস্তিবাসী নেত্রী ঝুমুর বেগম বলেন, ‘বস্তির মানুষের মধ্যে মারাত্মক আতঙ্ক বিরাজ করছে। এখানে মানুষজন খুব গা করেনা কিছুতে। কিন্তু এবার তারা খুবই ভয়ের মধ্যে আছে। আমরা বাচ্চা গাচ্ছা নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে আছি।’
আসমানী বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে অসুস্থ আর তাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আছি আর এর মধ্যে এই অসুখ আমাদের খুব ভয় লাগাচ্ছে। আমার বাচ্চাগুলার সারাবছর অসুস্থ থাকে আর এর মধ্যে যদি এই রোগ হয় আমরা যাবো কোথায়।’
কিশোরী বৃষ্টি বলেন, ‘করোনা নিয়ে মানুষ ঠিক মতো জানে না।’ সে ফেস্টুুনের তথ্যগুলো বস্তিবাসীদের পড়ে শুনায় আর পরে সকলকে ডেকে ডেকে শুনাবে বলে কথা দেয়।
প্রবীণ মোতাহার দালাল (৭৪) বলেন, ‘বাবা আমরা গরিব মানুষ। এখনতো দেখতেছি না খেয়ে মরার উপায়। ভয়ে ঘর থেকে বের হওয়াই কঠিন।’
এসময় বস্তিবাসীরা ভিড় করে ফেস্টুনের তথ্যগুলো দেখতে থাকেন। তারা অনেকেই বলেন এই তথ্যগুলো তাদের খুব কাজে লাগবে। বস্তিরজুড়ে চায়ের দোকান, স্কুলের সামনে, ঘরের বাইরে, পানির লাইনের সামনেসহ বিভিন্ন জায়গায় এই প্রচারণামূলক ফেস্টুনগুলো টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। সকলেই এই কাজের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এসময় বারসিকের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সহযোগী প্রকল্প সমন্বয়ক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল ও ব্যবস্থাপনা সহযোগী গোপাল কুমার দাস। এসময় বস্তির ৭টি স্পটে ছোট ছোট পথসভায় সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়।