করোনার প্রভাব:অনিশ্চয়তায় খাসি আদিবাসী শিক্ষর্থীদের শিক্ষা জীবন

নিরালা পুঞ্জি, শ্রীমঙ্গল থেকে সিলভানুস লামিন

করোনার প্রভাব খাসি আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জীবনেও পড়েছে। নিরালা পুঞ্জিতে প্রায় শ’খানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনার কারণে তাদের শিক্ষা জীবন আজ অনিশ্চয়তায় ধাবিত হচ্ছে।


নিরালা পুঞ্জিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই বিদ্যালয়ে প্রায় শ’খানে শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। কিন্তু বিগত এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। ফলে খাসি শিশুরা বলতে গেলে শিক্ষা থেকে বিচ্যুত রয়েছে। স্কুলের পড়ার চাপ না থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী এখন তাদের পিতামাতার সাথে পান বাগানে যাচ্ছে; কেউবা সারাদিন মারবেলসহ অন্যান্য খেলাধুলায় মত্ত রয়েছে। বাসায় পড়ার সুযোগ থাকলেও নিয়ম শৃঙ্খলা ও শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে বলতে গেলে কেউ পড়ায় মনোযোগী নয়। পঞ্চম ও চর্তুথ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত শিশুরা বন বাদারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাসি অভিভাবকরাও অনেকে নিরক্ষর থাকার কারণে তাদের শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে কোনভাবে চিন্তিত নন। স্বল্প কয়েকজন রয়েছেন যারা তাদের সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন। তারা তাদের সন্তানদের বাসায় পড়ার চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তা কতটুকু কাজে লেগেছে সে বিষয়ে তারা সন্দিহান রয়েছেন। এই প্রসঙ্গে ফেই খংলা বলেন, “বাচ্চাদের বাসায় পড়ার চাপ দিচ্ছি। তারাও পড়ছে বলে মনে হচ্ছে কিন্তু যেহেতু তদারকি কম এবং অন্য শিশুরা মাঠে ঘাটে খেলছে তাই আমার বাচ্চারা পড়ে কতটা লাভবান হয়েছে সে বিষয়ে আমার ধারণা কম।” নেরিয়ুস বুয়াম বলেন, “আমার শিশুদের শিক্ষা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। আমার মেয়ে ঢাকায় হলিক্রস কলেজে পড়ে কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সে এখন বাড়িতে আছে। বই নিয়ে সে পড়ার চেষ্টা করলেও তা কতটা কাজে লেগেছে তা বুঝা কষ্টকর।”

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনলাইন ও টিভিতে ক্লাস নেওয়া হলেও খাসি শিক্ষার্থীরা এ থেকে বঞ্চিত। কারণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও এর সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন নয়। দেখা যায় যে সময় টিভিতে ক্লাস হচ্ছে সেই সময় এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ফলে তারা সেই সুযোগটা গ্রহণ করতে পারছে না। এই প্রসঙ্গে গ্রামের হেডম্যান লিবারসিং পতাম বলেন, “টিভিতে ক্লাস নেওয়া হলেও গ্রামের শিক্ষার্থীরা সেটা গ্রহণ করতে পারছেনা বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকার কারণে। আবার অনলইনে ক্লাস চললেও ইন্টারনেট সংযোগ বা সুবিধা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা সেটা নিতে পারছেনা। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।”

অন্যদিকে নিরালা পুঞ্জিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা মূলত শহরের হোস্টেল বা ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করছে। কিন্তু বিগত দেড়মাস ধরেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির রয়েছে। অনেকে রয়েছে যারা তাড়াহুড়া করে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছে। আসার সময়ে তাদের পাঠ্যবই সাথে নিয়ে আসেনি। ফলে ইচ্ছাশক্তি থাকার পরও তারা পড়তে পারছে না। আবার যারা পাঠ্যবই নিয়ে এসেছে প্রয়োজনীয় পরিবেশ না থাকায় তারা পড়তে পারছে না। টিভি বা অনলাইনের ক্লাশগুলোতেও তাদের কোন প্রবেশাধিকার নেই। এই বিষয়ে রুবেল ধার বলেন, “আমি ঢাকায় নিউ মডেল বিশ^বিদ্যালয়ে অর্নাস পড়ছি। কিন্তু বাড়িতে আসার পর থেকে কোনভাবেই পড়তে পারিনি। আমারসহ পুঞ্জিতে আরও অনেকে ঢাকা ও সিলেটের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ছে। তারাও পড়তে পারছে না। কবে কলেজ বা বিশ^বিদ্যালয় খুলবে সেই আশায় রয়েছে সবাই।”

happy wheels 2

Comments