বস্তিবাসীরা এমনিতেই রোগে জর্জরিত-আবার ডেঙ্গু
ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল
সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে আর ঢাকা শহরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। ডেঙ্গু বিষয়ে সবচেয়ে অসচেতন অংশ হলো নগরের দরিদ্র মানুষেরা। এই বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের সচেতন করার জন্য আজ (৩১ জুলাই) মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানের পাইনিয়র হাউজিং এ প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক ও হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালের উদ্যোগে এ প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়।
প্রচারাভিযানে বারসিকের পক্ষ থেকে বস্তিবাসীদের সচেতন হবার জন্য নানান পরামর্শ প্রদান করা হয়। বস্তিতে এমনিতেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করে আর তাই এই ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে সকলেই যেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, কেউ যেন পানি জমিয়ে না রাখে, জ্বর হলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া, প্রচুর খাবার পানি, স্যালাইন, ডাবের পানি খাওয়াসহ নানান ধরণের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। পাইওনিয়ার হাউজিং এর তিনটি কিশোরী সংগঠন শাপলা, সুখপাখি ও রজনীগন্ধা এই প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের সংগঠকরা বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রচারাভিযানে বস্তিবাসী নেত্রী আসমানী বেগম বলেন, বস্তিবাসীরা খুব কষ্টে দিন কাটায়। এখানে সারা বছরই রোগ শোক লেগেই থাকে আর এখন শুনতাছি ডেঙ্গু। এই ডেঙ্গুর কারণে বস্তির মানুষরা খুবই আতঙ্কিত। অনেকেই জ¦র হইছে কিন্তু তারা জানেনা ডেঙ্গু কিনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের লোকজনের আমাদের বস্তিতে এসে খোঁজ খবর করা দরকার।’ কিশোরী সংগঠনের নেতা রেশমা বলেন, ‘আমরা বস্তির ঘরে ঘরে গিয়ে সবাইকে ডেঙ্গু সম্পর্কে বলছি। আমরা চাই বস্তির কেউ যেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হয়।’
বারসিকের প্রকল্প সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা বারসিকের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি মানুষকে সচেতন করতে। আমরা আহবান জানাই সকল সচেতন মানুষ যেন এই দূর্যোগে এগিয়ে আসেন নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী।’ তিনি বস্তিবাসীদেরকে সতর্ক হয়ে থাকার অনুরোধ করেন এবং প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের হেলপ ডেস্ক এ যোগাযোগ করতে বলেন। মো. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘জ¦র হলেই ডাক্তারের কাছে যাবার কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সকল সরকারি হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাই বস্তিবাসীরা নির্দিধায় হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে।’
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)র সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল বলেন, ‘ঢাকা শহরে এক দূর্যোগপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারের সকল শক্তিকে এই ডেঙ্গু মোকাবেলায় কাজে লাগানো যেমন দরকার, ঠিক একইভাবে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এ সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে।’ বারসিকের সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা সুদিপ্তা কর্মকার বলেন, ‘সচেতন মানুষরা এ পরিস্থিতিতে বসে থাকতে পারে না। তাই সকলেই যার যার জায়গা থেকে ভূমিকা পালন করবেন।’ কর্মসূচীতে বস্তিবাসী নেত্রী ঝুমুর বেগম, শাহিদা বেগম, রমজান আলীসহ প্রায় ৩ শতাধিক নারী পুরুষ, শিশু ও বয়স্ক উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, সারাদেশেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গতকাল প্রায় ১৩০০ জন রোগী সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর গত একমাসে প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৫০ জনেরও বেশি। এই মহামারী পরিস্থিতিকে মোকাবেলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সকল পর্যায় থেকে আরো দ্রুত উদ্যোগ নেয়া জরুরি।