প্রবীণ সেবায় নিয়োজিত রাখতে চাই
নেত্রকোনা থেকে মো. ইচ্ছাক উদ্দিন
নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার ৭নং গাওকান্দিয়া ইউনিয়ন। ঐতিহ্যবাহী সুমেশ্বরী নদীর কোল ঘেসে জাগিরপড়া গ্রাম। সদর উপজেলার মধ্যে লোকজ গান ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এলাকা বলে খ্যাত এই গ্রাম। এই গ্রামে ভাতৃত্ব বন্ধনে সকলকে নিয়ে বসবাস করেন আব্দুল মতিন মোতালেব (৫২)। পেশায় তিনি একজন ব্যাবসায়ী হলেও লোকজ বিভিন্ন গান, গ্রামের মানুষের বিভিন্ন সমস্যায় সব সময় ঝাপিয়ে পড়েন তিনি। সোমেশ্বরী মিডিয়া নামে দুর্গাপুর উপজেলা সদরে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন।
নেত্রকোনা অঞ্চলে প্রখ্যাত বাউল নবী হোসেন, বাউল আজাদ মিয়া, লোকজ গবেষক আপেল মাহমুদ, বারি সিদ্দিকী, কুদ্দুস বয়াতি, অন্ধ সিরাজসহ ঐতিহ্যবাহী শিল্পীদের সাথে মঞ্চে গান করেছেন আব্দুল মোতালেব। এই লেখায় এমন একজন মানুষের কথা বলা হচ্ছে যিনি গায়ক থেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের মন জয় করেন। তিনি হচ্ছে ৭নং গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হচ্ছেন মো. মোতালেব।
মোতালেব গত ২৮ মে ৫ম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ১৫৮ ভোট বেশি পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। মোতালেব বলেন, “মানুষ আমাকে এতো ভালোবাসে আমি জানতাম না। শুধু তাই নয়, আমাকে উপজেলার সকলেই একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে জানতো, কিন্তু এখন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর বুঝতে পারলাম মানব সেবার মাঝে অনেক কিছুই নিহিত রয়েছে। আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই, আমি যেন আমার বাকি জীবন মানবসেবার মাঝে কাটাতে পারি।”
চেয়ারম্যান হিসেবে আপনি কীভাবে প্রবীণদের সেবার কথা তুলে ধরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেহেতু আমি প্রবীণ ইস্যুতে অন্যদের সচেতন করাতে চেষ্টা করেছি, বর্তমানে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে আমার পরিষদ থেকে সর্বাগ্রে প্রবীণদের যাতে সেবা দেয়া যায় তা নিয়ে ভাববো।” তিনি বলেন, “এছাড়া প্রবীণদের জন্য কি কি সেবা রয়েছে, কিভাবে তাঁদের সহায়তা করা যায় সে বিষয়গুলো এখন আমার নিজের উপর পড়েছে, এখন আমার দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমি সুযোগ পেয়েছি সেবাগুলোতে অংশ নেয়ার, সেই ক্ষেত্রে আমি কথা দিতে পারি আমার পরিষদ প্রবীণসেবায় অগ্রণী ভুমিকা পালন করবে।”
প্রবীণদের বিষয়ে জানতে বা জানানোর দায়িত্ব তিনি নিতে চান বলে জানান। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি আমার নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে প্রতি ওয়ার্ডে স্থানীয় হাট বারে গ্রামের যে কোন সমস্যা সমাধানে স্থানীয়ভাবে গ্রাম্য বৈঠকের মাধ্যমে ঊভয় পক্ষকে নিয়ে বসে প্রবীণদের সহায়তায় তাৎক্ষণিক সমাধান করবো।” সভাগুলোতে পিতা মাতার ভরণপোষণ আইন ও প্রবীণ নীতিমালা নিয়ে উপস্থিত সকলের সাথে কথা বলবেন, সকলেই যেন পরবর্তিতে নিজ পরিবার থেকেই সে কার্যক্রম শুরু করতে পারেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রবীণদের যেসব সেবা রয়েছে সেটির চার্ট টাঙ্গিয়ে সেবা সম্পর্কে অন্যান্য সবাইকে জানাবেন বলে তিনি জানান।
প্রবীণ অধিকার সুরক্ষায় সাংস্কৃতিক প্রচারাভিযান কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকবেন বলে জানান। চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি আরও বেশি করে এসব কাজ করবেন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যস্ত হয়তো থাকবো তবে স্থানীয় সভা, সাংস্কৃতিক দলের সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ সম্ভব হলে সবগুলোতে অংশগ্রহণ করবো। কারণ আমি যদি কার্যক্রম চালিয়ে যাই এ থেকে অন্য চেয়ারম্যানগণও শিক্ষা নিতে পারেন।”
নবনির্বাচিত এই চেয়ারম্যান সম্পর্কে বলতে গিয়ে সামছুদ্দিন মিয়া (৭৯) বলেন, বিগত দিনে অনেক চেয়ারম্যান পাশ করেছে, পাশ করার পরের দিন তাঁদের আর মাঠে পাওয়া যায় না। কিন্তু পরশু নির্বাচন শেষ হইল, পরের দিন থেকেই, আবার সকলের বাড়ি বাড়ি ঘুরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ব্যস্ত রয়েছে আমাদের মোতালেব। দোয়া করি সে আরো বড়ো হইক।
অন্যদিকে কৃষক ছোলেমান মিয়া (৬৭) বলেন, “বর্তমান চেয়ারম্যান আমাদের সাথে আছে মানে মাথার উপর একটা বড় গাছ আছে বলে মনে হয়। কারণ এই জীবনে বহু চেয়ারম্যান দেখেছি, কিন্তু মোতালেব একটু ভিন্ন ধরনের। আমরা গ্রামবাসী তার লগে আছি, যত সমস্যা থাকুক না কেন, সকলে এক সাথে বসে সমাধান করবো।”
এভাবে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান তাঁর কাজের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করেছেন। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। তিনি নিজেও চেষ্টা করে যাচ্ছেন মানুষের সেবা নিয়োজিত থাকতে। এত জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরও তিনি কোনভাবেই আত্মতুষ্টিতে ভোগেননি বরং আরও কীভাবে ভালো কাজ করা যায় সেই চেষ্টায় করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার একমাত্র ভরসা আমার ইউনিয়নের প্রবীণ জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য বয়স ও পেশার মানুষ। আমি সব সময় তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে যাবো।” তিনি আরও বলেন “আমি আমার পিছনের কথা স্মরণ রেখেই চলতে চাই।
মোতালেব এর মতো বাংলাদেশে সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা যদি জনবান্ধব হতেন তাহলে বাংলাদেশে সংঘাত ও সহিংসতা অনেক কমে যেতো।