জমি নেই তাতে কি ছাদ তো আছে

চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু

বৈচিত্র্যময় রূপের অধিকারী ভূমি। এর ব্যবহার ও বৈচিত্র্যময়। ভূমির রূপের মালিকানার পরিবর্তন ঘটছে। ভূমির মধ্যে অসংখ্য নতুন নতুন আইল হওয়ায় কমছে ব্যবহারযোগ্য ভূমির পরিমাণ। অনেক ভূমিহীন মানুষও রয়েছেন যারা সব সময় বসবাস অথবা চাষাবাদের জন্য এক খন্ড ভূমি নিজের করে পাবার স্বপ্ন দেখেন। চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার মৃত আনসার আলীর ছেলে আবুল হোসেন (৩৮) একজন মুদি দোকানদার। তার সখ বাগান করা। মাথা গোঁজার ঠাই টুকু ছাড়া বাড়তি কোন ভূমি নেই তার। অবশেষে বাড়ির ছাদে বাগান করে তিনি তার শখ মেটাচ্ছেন।

Abul-1

নিজের ছাদ বাগান সম্পর্কে আবুল হোসেন বলেন, “গাছের পাতার সবুজ রঙ আমায় মুগ্ধ করে। ইচ্ছা করে গাছ লাগাতে। কিন্তু গাছ লাগানোর মতো কোন জায়গা ও জমি নেই আমার। মাত্র তিন শতক বসত বাড়ির মালিক আমি। প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে সঞ্চয় করা টাকায় দ্বিতল ভবন করেছি। জমি নেই তাতে কি ছাদ তো আছে। বছর পাঁচেক পূর্বে এ ভবনের ছাদেই গাছ লাগানোর চিন্তা মাথায় আসে। শখের বশে ছাদ বাগানে সিমেন্টের চাড়িতে ৪টি আ¤্রপালি, ৪টি লিচু, ৪টি লেবু, ২টি পেয়ারা, ২টি বেদানাসহ ক্যাকটাস, বড়ই, ঘৃতকাঞ্চন, কমলাসহ বিভিন্ন জাতের ফল ফুলের গাছ লাগাই। এখন ফল গাছগুলো থেকে টাটকা ফল পাচ্ছি। অবসর সময়ে যখন গাছগুলোর পরিচর্যা করি তখন ভালো লাগার অনুভূতিতে আচ্ছন হই। নিজ হাতে গাছ থেকে নিরাপদ আম পেয়ারা লিচু পেরে খাই।”

abul-5

আবুল হোসেন আরও বলেন, “আমরা অনেক ভাই বোন। বাবা ছিলেন ছোট্ট একটি চায়ের দোকানদার। অনেক সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো তাকে। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করানোর পর আমাকে আর পড়াতে পারেন না। এর বছর চারেক পরে কষ্টে শিষ্টে টাকার যোগার করে আমাকে কুয়েত পাঠান। ১৬ বছর কুয়েতে প্রবাস জীবন কাটাই। একটা অফিসে পিয়ন পদে কাজ করি। ২০০৭ সালে দেশে ফিরে বিয়ে করে আবার প্রবাসে পারি জমাই। ২০০৮ সালের ফিরে আসার পরে আর বিদেশে না গিয়ে বাড়ি করি এবং দ্বিতল ভবনের নিচ তলায় মুদি দোকান করি। এ দোকানের ছাদেই বাগান করেছি।”

abul-4

এক বছর পর পর ছাদ বাগানের সিমেন্টের চাড়ির মাটি পাল্টান তিনি। স্ত্রী শান্তা ও মা বেগম আরা ও আবুলের ছাদ বাগানের পরিচর্যা করেন। গাছে নিয়মিত পানি দেন তারা। যাদের বাগান করার মতো নিজস্ব সম্পত্তি নেই তারা ইচ্ছা করলে বাড়ির ছাদ বা উঠোনের স্বল্প যায়গায় ও টবে মনোরম বাগান করতে পারেন বলে জানান আবুল হোসেন।

happy wheels 2

Comments