বন্যায় প্রাণ সম্পদ সংরক্ষণ
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা ও মুকতার হোসেন:
হরিরামপুর নিচু এলাকা হওয়ায় বর্ষার জন্য চরের মানুষ ও নিচু এলাকার মানুষের প্রস্তুতি থাকে। তবে এ বছর বর্ষা ও বন্যার পানি এক সাথে হওয়ায় বেশি পানি দেখা দেয়। উপজেলার সব মাঠঘাট তলিয়ে গেছে। এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ বাড়িতেই পানি প্রবেশ করেছে। মানুষের চেয়ে বেশি সমস্যা হয় প্রাণসম্পদ রক্ষার। বন্যার ঘোলা পানিতে মাঠের ধান, পাট ও বাড়ি শাকসবজি নষ্ট হয়। হরিরামপুরের উঁচু ভিটাগুলোতে পানি উঠে শাকসবজি, মসলা ও পানের বরজ তলিয়ে গেছে। এলাকার মানুষ নিজের প্রাণসম্পদ তথা গরু, ছাগল রক্ষার জন্য জাকন বা কচুরি খড় দিয়ে উঁচু করে রাখেন। বর্ষার পানি আসার আগেই অবশ্য তাঁরা বোনা আউশ, তিল, কাউন, বাদাম ঘরে তুলেছেন। আউশ ধানের খড় তাই তাঁদের বড় ভরসা।
এই প্রসঙ্গে রাজরার পেয়ারা বেগম বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে আমাদের এখানে পানি হয়। তবে এবছর পানি বেশি হয়েছে। আমাদের গরু ছাগল নিয়ে বেশি বিপদে আছি। কোথাও রাখার জায়গা নাই, সবখানে পানি। এজন্য গরু জাহক দিছি।’ জাকন কি প্রশ্ন করলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাকন হলো কলাগাছ আর কচুরি পানা দিয়ে পানিতে উঁচু করে গরু রাখছি। পানি আসবে জাকন আরো উঁচু হবে, ফলে গরু শুকনায় থাকতে পারবে। বন্যার কারণে গরুর ঘাস ও খড় নাই। তাই খাবারের খুব কষ্ট। মুরগি রাখার খড় থেকে মুরগি ছাইড়া দিলে গাছে গিয়ে বসে থাকে। কারণ সবজায়গায় পানি। ঘওে বাইরে শুধু পানি আর পানি।
অন্যদিকে পাটগ্রামচরের জহুরা বেগম বলেন, ‘আমাদের বর্ষা মোকাবেলায় আলগা চুলা, মুড়ি, খই, চিড়া তৈরি করে রাখি। নৌকা তৈরি করে রাখি যাতায়াতের জন্য। বন্যার আগে ধান, গম, তিল, কাউন, বাদাম ঘরে তুলি। বর্ষায় শাকসবজি খাবারের জন্য বাড়িতে ও উঁচু জায়গায় উৎপাদন করে থাকি। কিন্তু এইবার আমাদের বাড়িতে কোমর সমান পানি। চরের সবার বাড়িতে ও মাঠে অনেক পানি হওয়ায়, আবাদ বসত নষ্ট হয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের গরু, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছি। চর এলাকা নিচু হওয়ায় বন্যার সময় কোথাও উঁচু জায়গা নেই। এজন্য কলা গাছ, খড় কোটা দিয়ে উঁচু করে গরু রাখছি। অধিকাংশ টিউওয়েল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে, গ্রামের ১ থেকে ২টি টিউওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করে খাই। বন্যার সময় রান্না কষ্ট হওয়ায় চিড়া, মুড়ি খাই। বন্যা পরবর্তীতে শাকসবজি পাওয়ার জন্য মাটির ভাঙ্গা পাত্রে ও বস্তায় মাটি দিয়ে লাউ, সিম, মিষ্টিকুমড়া বীজ বপন করেছি।’
পিয়াজচরের মোাহাম্মদ আলী বলেন, ‘বন্যার পানিতে মানুষ থাকতে পারে। কিন্তু গরু ছাগল, ভেড়া, মুরগি পানিতে থাকতে পারে না। গরু ২ দিন পানিতে থাকলে পায়ে ঘা হয়ে যায়। এজন্য আমরা বন্যার পানি থেকে গরু, ছাগল রক্ষার জন্য উঁচু জায়গায় করে রাখি। কিন্তু আমাদের এলাকায় হওয়ায় সব জায়গায় বন্যার পানি হয়েছে। এজন্য গরু রাখার কোন জায়গা নাই। বন্যার সময় কলা গাছ নাই। ফলে পানির মধ্যে উঁচু করা কষ্ট হয়। তবে পানির মধ্যে খড়কুটা দিয়ে উঁচু করে গরু ছাগল রাখি। বন্যার সময় গরু ছাগলের খাবার দেই খড়, খুদের ভাত, পানি, কুড়া, মাসকলাই ভুষি, ভুষি, ভাতের মার ইত্যাদি।’
হরিরামপুর উপজেলা নিচু এলাকা হিসাবে বর্ষা পাড় করার প্রস্তুতি থাকলেও বন্যার সামাল দেওয়ার দেওয়ার মত প্রস্তুতি কম। তবে কৃষকদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, বন্যার পানি নামার সাথে সাথে দ্রুত ফলনশীল শাকসবজি আবাদে বীজ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করবেন বলে জানান। ইতিমধ্যে তাঁরা বাড়িতে টবে, বস্তায় ও ডিপি করে লতাজাতীয় শাকসবজি চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। চরের কৃষকদের সরকারের নিকট দাবি, বন্যার সময় গরু, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, মহিষ সংরক্ষণে উঁচু স্থান বা ক্যাটাল সেন্টার যেন তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।