নগরের দরিদ্র নাগরিকদের তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য সহযোগিতা প্রদানের দাবি

ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল:

অবিলম্বে নগরের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের নাগরিকদের তালিকা তৈরি করে তাদের মাঝে রেশনিং ও খাদ্য সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন করোনায় নগরের নিম্ন আয়ের নাগরিকদের  খাদ্য সংকট ও করণীয় শীর্ষক অনলাইন সংলাপে বক্তারা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় ২৭ এপ্রিল সকাল ১১ টায় পবা, বারসিক ও কাপের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনলাইন সংলাপে বক্তব্য রাখেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, কাপ এর নির্বাহী পরিচালনক খন্দকার রেবেকা সান ইয়াত, কাপের সহসভাপতি কাজী বেবি, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এডভোকেট এম এ হামিদ খান , বাংলাদেশ আওয়ামী বাস্তুহারা লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হালদার, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, গ্রিনফোর্স সমন্বয় ও পবার সম্পাদক মেসবাহ সুমন, বারসিকের সমন্বয়ক মো: জাহাঙ্গীর আলম, ফিলিপাইনের বস্তিবাসী নেত্রী মারিও, বস্তিবাসী অধিকার সুরক্ষা কমিটির হোসনে আরা বেগম রাফেজা প্রমূখ। সংলাপে ধারণাপত্র উত্থাপন করেন বারসিকের কর্মসূচী কর্মকর্তা সুদীপ্তা কর্মকার। সংলাপে বক্তারা বলেন, করোনা মহামারীতে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্থ আর বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের এমনকি মধ্যবিত্তও প্রচন্ডভাবে হিমসিম খাচ্ছে। ৪০ লক্ষের নিম্ন আয়ের মানুষের ঢাকা শহরের এই দীর্ঘ লকডাউনে মানুষের সংকট চরম মাত্রায় পৌছেছে। এই মানুষদের আয় নেই, নেই বেঁচে থাকার অবলম্বন। তাই অতিদ্রুত সরকারের এই শ্রেণীকে রক্ষার জন্য তরিৎ খাদ্য সহযোগিতা দিতে হবে।

বক্তারা বলেন, সরকারের উচিত অবিলম্বে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র সকল  মানুষের নামের তালিকা তৈরি করা এবং এক্ষেত্রে নগরের নিম্ন আয় ও ভাসমান মানুষদের তালিকাটিতে আগে হাত দেয়া। কারণ গ্রামের অতিদরিদ্রদেরও নানা মাত্রিক সুযোগ রয়েছে কিন্তু নগরের ভাসমান মানুষদেরতো নাগরিকের মর্যাদাই  দেয়া হয় না। এই করোনা মহামারীর লক ডাউনে অধিকাংশ মানুষের দিন কাটছে খেয়ে, না খেয়ে কিন্তু এগুলো দেখার তেমন কেউ নেই। বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাক এবং পিপিআরসি নতুন গবেষণায় জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এইবার নতুন করে আড়াই কোঠি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। করোনা মহামারী ভাইরাসের কারণে একদিকে যেমন মানুষের আয় কমেছে অন্য দিকে খাদ্যসহ অন্যান্য দ্রব্যমূল্য বেড়ে গিয়েছে, যা মানুষের খাদ্য অধিকার এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকীতে ফেলেছে। ৩৭% মানুষ এখন বিভিন্ন উৎস থেকে লোন নিয়ে সংসার চালাচ্ছে। তাদের ৬৩% মানুষ ঘর ভাড়া দিতে পারেনি। ৪৭% ভাগ মানুষ তাদের খাবার গ্রহনের পরিমান কমিয়েছে। খাদ্য অধিকার আন্দোলনের তথ্য মতে দেশের প্রায় ৬৬% মানুষের আয় কমে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দিনমজুর, শ্রমিক, কর্মচারী, কারিগর, রিকশাচালক, গৃহকর্মী, হকারসহ নিম্ন আয়ের নগরবাসী যারা প্রতি নিয়ত এই শহরে তাদের সেবা দিয়ে শহরটাকে সক্রিয় রেখেছে।

এক গবেষণায় দেখা যায় ২০০০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮.৯ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা কমে সালে প্রায় ১৯ শতাংশ হয়েছিল।   আর ২০২০ সালে শুধু করোনার কারণে আবার দারিদ্রের হার এসে দারিয়েছে ৪৩% এ। করোনার কারণে অবার সকল গ্রহকর্মীরা তাদের কাজ হারিয়েছে । এই করোনার এই নিদানকালে নগরের এই বিরাট দরিদ্র জনগোষ্টিকে যে কোন ভাবেই হোক বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।  বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে ৩৫ লক্ষ পরিবারকে ২৫০০  টাকা করে এবং এক কোটি ২২ লক্ষ পরিবারকে ৫০০ টাকা করে ঈদের সম্মানী দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এই সরকারি ত্রাণ সহায়তা নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে যথাযথভাবে পৌছানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া সরকারি চাকুরীজীবিদের বেতন/বোনাসের কিছু অংশ কেটে তা নগরের নি¤œ আয়ের মানুষদের মধ্যে দিতে পারলে এই মহামারীকালে তা নগরের এই মানুষদের অনেক উপকারে আসতো বলে অনেকেই মনে করেন।

সংলাপ থেকে নিম্নোক্ত সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়:

১. খাদ্য নিরাপত্তাকে নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নগরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে স্থানীয় কউন্সিলর, সরকারের প্রতিনিধি, মন্ত্রানালয়, সুশীল সমাজ, এনজিও প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডের দরিদ্র মানুষদের একটি তালিকা তৈরী করতে হবে।

২. ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সার্বিক তত্ত্ববধানে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে নগরের দরিদ্র মানুষদের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে খাদ্র সংগ্রহ করে একটি করে ফুডব্যাংক তৈরী করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন,কাউন্সিলনর এবং এনজিওদের সমন্বয়ে নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সরকারী সহায়তা বিতরণের উদ্যোগ নিতে হবে।

৩. জাতীয় সামাজিক সূরক্ষা নীতিমালা ২০১৫ তে নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে সংযুক্ত করো হলেও তার কোন কৌশলপত্র তৈরী করা হয়নি। নগরের দরিদ্রদের জন্য অতি দ্রুত কৌশলপত্র তৈরী করে নগর দারিদ্র বিমোচনের উদ্যোগ নিতে হবে।

৪. নগরের বিত্তশালী দের এই দুর্যোগে সরকার এর পাশপাশি এগিয়ে আসতে হবে এবং সকল প্রাপ্ত ত্রান সমন্নিত ভাবে প্রদান করতে হবে ।

৫. সকল অর্থ সহায়তা প্রাপ্তির উৎস এবং প্রদান এর তালিকা সককে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের বসতির নিকটবর্ত্তী এলাকতে স্থায়ীভাবে খোালা বাজারে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. টিসিবি’র পণ্য বিক্রির সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে।

৮. নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য গ্রামের ন্যায় প্রচুর পরিমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করতে হবে। করোনায় শহরের নিম্ন আয়ের গৃহকর্মীদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহযোগিতা ও রেশনিং কার্ড এর ব্যবস্থা করা।

happy wheels 2

Comments