দেশকে ভালোবাসতে হলে গানকে ভালোবাসতে হবে -নূরু বাউল
নেত্রকোনা থেকে রোখসানা রুমি
এ অঞ্চলের মাটিতে জন্মেছেন মধ্য যুগের অন্যতম লোককবি কঙ্ক, অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত পালাকার মনসুর বয়াতি, কবিয়াল বিজয় আচার্য, মদন মোহন আচার্য, “ময়মনসিংহ গীতিকার” সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে, রবীন্দ্র গবেষক শৈলজা রঞ্জন মজুমদার, মরমী সাধক জালাল খাঁ, রশিদ উদ্দীন, উকিল মুন্সী, হাজং মাতা রানী রাসমনি, পাগলাপন্থি নেতা টিপু, মনি সিংহ, লেখক ও বুদ্ধিজীবী যতীন সরকার, সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, কবি নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজসহ প্রমূখজন। এই নেত্রকোনা অঞ্চলেই জন্মগ্রহণ করেন কেন্দুয়ার আশুজিয়া ইউনিয়নের মরমী বাউল সাধক জালাল খাঁ, ই¯্রাফিল বাউল ও তাঁর শিষ্য আব্দুর রহিম নূর মিয়া নুরু বাউল।
নূরু বাউল একজন গান পাগল এক মানুষ। যেখানেই অনুষ্ঠান সেখানেই নুরু বাউল। দেশকে ভালোবাসেন, দেশের মাটিকে ভালোবাসেন তিনি। নিজের লেখা গান শোনান মানুষকে। নূরু বাউল এ পর্যন্ত ১১২টি গান লিখেছেন। তবে কোন গানের লিখিত রূপ নেই তার কাছে। কেননা তিনি এসব গান তার মস্তিষ্কে ধারণ করেছেন। তরা স্মৃতিতে এ গানগুলোকে ধরে রেখেছেন এখন পর্যন্ত। এসব গান তিনি রচনা করেছেন দেশের প্রতি ভালোবাসা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, প্রকৃতির প্রতি প্রেম, জীবের প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা নির্দশন হিসেবে। তাই তাঁর গানের কথায় দেশপ্রেম যেমন রয়েছ তেমনি রয়েছে মানুষের প্রতি প্রেম, বিরহও। তিনি বলেন, “আমরা যদি বলি আমরা দেশকে ভালোবাসি তাহলে অবশ্যই গানকেও ভালোবাসতে হবে।”
প্রতিটি গানকেই তিনি পরম মমতায় যত্ন করে রাখেন। ১১২টি গানের ভেতরে প্রতিটি গানের লাইন, ভাষা, শব্দ তার মনে আছে। গান লেখা ও পরিবেশনার ক্ষেত্রে স্ত্রী লাকিতুন নুরই তাঁর প্রেরণা বলে তিনি জানান। বর্তমানে গবেষক, লেখক যতীন সরকারের ভক্ত এই বাউল তার বাড়িতে কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পেশা আমার ব্যবসা, নেশা হলো গান, গান হলো আত্মার খোরাক, শোনেন ভক্ত আশেকান, বাল্যকালে গান করিতাম বন্ধু বান্ধব নিয়া, সেই হতে নেশা লাগলো শুনেন মনদিয়া।”
নূরু বাউল এ পর্যন্ত ১০০০ আসরে গান করে মানুষের মন জয় করেছেন। তিনি আগে পালা গান করতেন। অনেক পালা গান করেছেন বলে তিনি জানান। এখন পালা গান আর হয় না। তাই পালা গানে অংশগ্রহণও হয় না তাঁর। স্বশিক্ষিত এই গায়ক ৩৫ বছর ধরে গান করেন। তিনি যাদের সাথে পালা গান করেছেন তারা অনেকেই বেঁচে নেই। তারা হলেন ইদ্রিস আলী, হাফেজ তারা মিয়া, আ: মজিদ তাং, আবেদ আলী, ইসলাম উদ্দিন, সুনীল সরকার, আ: হেকিম, আজাদ মিয়া, সিরাজ উদ্দিন খান পাঠানসহ অনেকেই।
নেত্রকোনা অঞ্চলের লোকসংগীত ছড়িয়ে ও প্রসার করার জন্য ২০০৭ সালে আশুজিয়ায় সাধুসংঘ নামে শিল্পকলা একাডেমি স্থাপন করেন । সেখানেই বসে বাউলের আসর। দিন দিন নুরু বাউলদের কদর কমে যাচ্ছে। তারপরও এই আধুনিক জীবনযাপন ও চাকচিক্যের মধ্যে নূরু বাউলের মতো আরও অনেক লোকসঙ্গীত সাধক লোকসংস্কৃতি ও সঙ্গীত বাঁচিয়ে রাখার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আসুন তাদেরকে সালাম জানাই!