বছরব্যাপী সবজি চাষে আয় বেড়েছে খালেদা বেগমের
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে আল্পনা নাফাক
কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের দমদমা একটি গ্রাম। গ্রামটি হাজং আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম নামে পরিচিত। বর্ষা মৌসুমে চারদিকে পানি থৈথৈ করে। বর্ষা মৌসুমে অনেক সময় যোগাযোগ বিছিন্ন অবস্থায় থাকে। এই গ্রামে খালেদা বেগমের বসবাস। বয়স ৩০ বছর। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাশ। তিনি ৩ সন্তানের জননী। এক মেয়ে দুই ছেলে। বড় ছেলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। মেয়েটি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। স্বামী ঢাকায় কোম্পানিতে চাকুরি করেন। খালেদা বেগম বিভিন্ন সময় বারসিক’র কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন এবং এখনও বারসিক’র বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
খালেদা বেগম কৃষির সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তিনি সবসময়ই কোনো না কোনো কাজে যুক্ত থাকেন। হাঁস, মুরগি পালন থেকে শুরু করে বাড়িতে গাভী পালন পর্যন্ত সবই তিনি করেন। বাড়ির চারদিকে সারাবছর শাকসবজিও চাষ করেন। লাউ, করলা, মিষ্টিলাউ, ঝিঙা, ধুন্দল, মরিচ,ঢেঁড়স, ডাটা ইত্যাদি চাষ করেন। নিজে শাকসবজির বীজ সংরক্ষণ করেন এবং প্রতিবেশীদের বীজ দিয়ে সহযোগিতা করেন। অনেকসময় বীজ বিনিময়ও করেন। বারসিক’র কাছ থেকে ও বীজ নিয়ে শাকসবজি চাষ করেন।
খালেদা বেগম বলেন, ‘আমি আমার বাড়ির চারদিকে সারাবছর শাকসবজি চাষ করি। যাতে আমার কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সবজির জন্য। সারাবছর শাকসবজি চাষ করে আমি পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করি এবং বাজারেও বিক্রি করে থাকি। আমি বারসিক’র কাছ থেকে শাকসবজির বীজ নিয়ে চাষ করে লাভবান হয়েছি। কারণ আমি করলা, মিষ্টিলাউ, ঢেঁড়স প্রায় দুই হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সবসময় শাকসবজি চাষ করি জৈব সার দিয়ে। কারণ আমি গাভী পালন করি। সেখান থেকে জৈব সারের যোগান পেয়ে থাকি। জৈব পদ্বতিতে চাষ করলে খাদ্য নিরাপদ থাকে। যেহেতু আমি নিজে শাকসবজি ব্যবহার করি তাই নিরাপদভাবে শাকসবজি চাষ করার চেষ্টা করি।’
খালেদা বেগমের বাড়ির চারদিকে যে সমস্ত জায়গা পড়ে আছে সেগুলো ব্যবহার করে তিনি সফলতা পেয়েছেন। আগে এগুলো এমনিতেই পড়ে থাকতো। এখন এখানে সারাবছর শাকসবজি চাষ করার ফলে তাঁর হাতে কিছু টাকা আসছে এবং সারাবছর শাকসবজির চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। নিজে শাকসবজি চাষ করার ফলে বাজারের কোন শাকসবজির প্রয়োজন হয় না তাঁর। নিজের শাকসবজি প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করেন তিনি। অন্যদিকে মরিচ চাষ করে সারাবছরে জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং এখনো গাছে মরিচ রয়েছে, যা আরো দুই তিন মাস ব্যবহার করতে পারবেন বলে তিনি জানান। খালেদা বেগম তার এই ধরনের কাজ সম্প্রসারণের জন্য প্রতিবেশীদের মাঝে বীজ সহযোগিতা করেন এবং তাদেরকে বাড়ির চারদিকে সারাবছর শাকসবজি চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।