এগুলো ঘাস নয়; আমাদের খাবার
রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
প্রকৃতিতে আমাদের খাদ্য বৈচিত্র্য অনেক। প্রাণী থেকে উদ্ভিদ রয়েছে বৈচিত্র্যময়তায় ভরপুর। কিন্তু নানা কারণে আজ সে বৈচিত্র্যময়তা কমতে যাচ্ছে। রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলায় বসবাসকারী জাতি গোষ্ঠির মধ্যও রয়েছে বৈচিত্র্যময়তা। এখানে আদিবাসীদের মধ্য মুন্ডা, পাহান, মাহালী, কডা, সাঁওতাল, পাহারীয়া, কর্মকারের বসবাস আছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
তানোর উপজেলার তেলোপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্প এখানে বসবাস করে ১৩টি আদিবাসী মুন্ডা, সাঁওতাল ও কর্মকার সম্প্রদায়ের মানুষ। সকালে সবাই মিলে কৃষি শ্রমিক হিসেবে পাশের গ্রামে কাজ করতে যায়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে জমি থেকে সুনসুনি, আমরুল, টেপরাই, বনপাট, কলমি শাক তুলে নিয়ে আঁচলে বেঁধে রাখে। দুপুরে কাজ শেষ করে বাড়িতে চলে এসে শাকগুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে রেখে দেওয়া হয়।
এখানে দুপুর গড়িয়ে বিকেল রাতের রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে এখানকার নারীরা। তখন কথা হয় আদরী রানীর (২৮) সাথে। তিনি এখানে প্রায় একবছর হলো বসবাস শুরু করেছেন। তিনিও সবার সাথে সকালে কৃষি কাজ করতে যান। বাড়ি ফেরার পথে তুলে নিয়ে আসেন বিভিন্ন অচাষকৃত খাদ্য। তাঁকে বলা হয় এগুলো ত ঘাস। এগুলো কিভাবে রান্না করবেন, এবার আদরী রানী জানান, ‘এগুলো ঘাস হবে কেন এগুলোত আমরা সব সময় খাই। তবে আগের মত আর পাওয়া যায় না।’
কেন পাওয়া যায় না জানতে চাইলে তাঁর সরল উত্তর হলো: ‘এখন যে জমিতে নানা রকম বিষ ছিটায় তাই এগুলো মারা যায়।’ এগুলো খাওয়া যায় এ বিষয়গুলো তিনি শিখেছেন তাঁর মায়ের কাছে। তাঁর মা ছোট বেলায় এগুলো সংগ্রহ করে তাকে খেতে দিতেন। এখন তিনি তাঁর পরিবার ও ছেলে-মেয়েকে খেতে দিচ্ছেন।
এমন উদাহরণ অনেক পাবো আমরা আদরী রানীর পরিবারের মতো। যাদের পুষ্টির একটা বড় অংশ পূরণ হয় আমাদের বলা এই ঘাস, লতাপাতা দিয়েই। কিন্তু দিনে দিনে এই আদরী রানীদের পুষ্টির উৎস গুলো আমরা ঘাস মারা বিষ ছিটিয়ে নষ্ট করছি। নষ্ট করছি তাঁদের পরের প্রজন্মের খাদ্যর উৎস্যকেও। আমাদের কাছে যেটা অপ্রয়োজনীয় আগাছা বা ঘাস কিন্তু কিছু মানুষের কাছে তা খাদ্যও উৎস। যা দিয়ে খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি কিছু টাকা শিক্ষা বা চিকিৎসায় খরচ করবে তারা। তাই খাবারগুলো কখনই ঘাস বা আগাছা হতে পারে না।