উপকূলের জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষে সম্ভাবনা

::দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল::

বরগুনা ও পিরোজপুর উপকূল খাল নদী, পুকুর ও জলশয় বেষ্টিত। নানা পরিবেশ বিপর্যয়ে উপকূলের মৎস্য সম্পদ বিপর্যয়ের মুখে। ইতিমধ্যে দেশী প্রজাতির অনেক মাছ এখন বিলুপ্তির দিকে। ফলে মৎস্য সম্পদে একটা ঘাটতি বিরাজ করছে। জোয়ার জলোচ্ছাসের প্লাবণে প্রতিবছর পুকুর নালায় চাষকৃত মাছ ভেসে গিয়ে চাষীরা বিপর্যয়ের মুখে পড়েন। ফলে শুকনো মৌসুমে মাছের একটা ঘাটতি দেখা দেয়। এমন অবস্থায় টিকে থাকার জন্য মাছ চাষীরা নানা কৌশলগত দিক অবলম্বন করে মাছের আবাদ সম্প্রসারণের দিকে ঝুঁকছে। প্র্রবহমান নদীর জলে নাইলনের জালে তৈরি খাঁচায় মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারে এলাকার বেকার যুবকরা। শুকনো মৌসুমে খাঁচায় মাছ চাষ করে কার্য়কর সফলতা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।

Fishউপকূলীয় বরগুনার বামনায় মৎস্য অধিদপ্তর সম্প্রতি পরীক্ষা মূলকভাবে খাঁচায় মাছ চাষের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বামনার তেলিভাড়ানী গ্রামের খালের মোহনায় স্থানীয় ২০ জন  মাছ চাষীদের সংগঠিত করে মৎস্য বিভাগ ১০টি মাছ চাষের খাঁচা স্থাপন করে। চাষীরা সেখানে তেলাপিয়াসহ সাদা মাছের পোনা আবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন।

স্থানীয় মাছ চাষী মো. আব্দুল হক জানান, মৎস্য বিভাগ মাছের আবাদে যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে স্থানীয় বহু চাষী উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এটি লাভ জনক। যে কোন বেকার যুবক খুব সহজেই খাঁচায় মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারেন। এ পদ্ধতিতে মাছের আবাদে ঝুঁকি কম বলে এলাকার অনেক বেকার যুবক খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, বিষখালী নদী উপকূলীয় এলাকার অন্য সকল নদীর জলের চেয়ে বিষখালী নদীর পানি মিঠা পানি। যা খাঁচায় মাছ চাষে সহায়ক। তবে বামনায় এ পদ্ধতিতে মাছের আবাদ বাণিজ্যিকভাবে শুরু না হলেও শিক্ষিত যুবক ঝন্টু জমাদ্দার বিষখালী নদীতে পরিকিল্পিত খাঁচায় মাছের চাষ করার উদ্যোগ নিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি উপজেলার বিষখালী নদীর  চালিতাবুনীয়া-আমূয়া মোহনার হলতা নদে ৪০টি খাঁচা স্থাপন করে মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

বিষখালী নদীর  চালিতাবুনীয়া-আমূয়া মোহনার হলতা নদের সেতুর কাছে স্থানীয় হোগলপাতি গ্রামের ঝন্টু জমাদ্দার নাইলনের জালের তৈরি প্রতিটি খাঁচা ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থ আয়তনের ৪০টি খাঁচায় পরিকল্পিতভাবে মাছের আবাদ শুর করেন। এতে প্রথম দফায় তিনি ছয় লাখ টাকা ব্যয় করেন। চলতি বছর মার্চ মাস থেকে তিনি ওই খাঁচায় শুধু তেলাপিয়া মাছের আবাদ শুরু করেন। এর আগে তিনি নিজ বসতবাড়ি হোগলপাতী গ্রামে তেলাপয়িা মাছের হ্যাচারী স্থাপন করেন। ওই হ্যাচারীতে উৎপাদিত ২০ গ্রাম ওজনের মাছের পোনা সংগ্রহ করে তা হলতা নদে স্থাপনকৃত খাচায় লালন পালন করে আসছেন। শুরুতে  খাঁচায় তিনি ৬০ হাজার মাছের পোনার আবাদ করেন। এসব পোনা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লালন পালন শেষে তিনি তা বাজারজাত করে আসছেন। ২০ গ্রাম একটি পোনা মাছ বিক্রয় উপযোগী করতে ১২০ দিন সময় লাগে। এতে এসব মাছ ৩৫০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের হয়। এ উপায়ে তিনি এ পর্যন্ত  গত সাত মাসে আট লাখ টাকার মাছ বিক্রয় করেছেন।

এ ব্যাপারে খাঁচায় মাছ চাষের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মো. পলাশ মিয়া জানান, চাঁদপুর থেকে খাঁচায় মাছের আবাদ সরেজমিনে দেখে এসে নিজের এলাকায় খামার মালিক ঝন্টু জমাদ্দার খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন। এ অঞ্চলের বিষখালী  নদীর পানি মিঠা পানি বলে  খাঁচায় মাছ চাষে পরিবেশবান্ধব। তবে এ জনপদে এ পদ্ধতিতে মাছের আবাদ পরিকল্পিতভাবে কেউ করছে না। এটি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে করতে পারলে তা অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে।

এ বিষয়ে বামনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাজিউল ইসলাম বারসিক নিউজ ডটকমকে বলেন, “বামনায় পরীক্ষামূলকভাবে খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে চাষীদের সংগঠিত করে উপজেলার তেলিভাড়ানী-বিষখালী খালের মোহনায় খাঁচা স্থাপন করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় একজন মাছ চাষি  নিজস্ব উদ্যোগে নদীতে খাঁচা স্থাপন করে মাছের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। এটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। খাঁচায় মাছ চাষ অত্যন্ত লাভ জনক। যদি চাষি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে  দক্ষতার সাথে খাঁচায় মাছের আবাদ করে থাকেন।এতে উপকূলে শুকনো মৌসুমে  মাছের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে।”
::

happy wheels 2