অচাষকৃত উদ্ভিদ মানুষকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করছে
হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন
চারিদিকে যখন করোনা ভাইরাস মহামারী বাংলাদশে এর প্রভাব থেকে রেহাই পাচ্ছে না মানুষ। স্বাভাবিক চলাচল হাট বাজার, দোকান পাট, আলোচনা, মিটিং, মিছিল, গণজমায়েত, এমনি কি মানুষ থেকে মানুষের সংস্পর্শে আসা নিষেধ করা হয়েছে। মানুষের কাজ কর্ম বন্ধ- বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশায়ালা, কৃষিশ্রমিক, দৈনন্দিন কাজ করে তারা বেশি খাদ্য সংকটে পড়েছে।
হরিরামপুর উপজেলার ভাওয়ারডাঙ্গি গ্রামের ভ্যানচালক মহির উদ্দিন (৫১) জানান, আমি ডেকোরেটর মালামাল নিয়মিত আনা নেওয়া করতাম। প্রতিদিন আমার ৪০০-৫০০ টাকা ইনকাম হতো। এখন আর বিয়ে সাদী বা অন্যকোন অনুষ্ঠান হয় না। আমার ভ্যান চালানো যাচ্ছে না। আমার আয় করার আর কোন ব্যবস্থা নাই। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে আমি খুব কষ্টে দিন পার করছি। ১০ টাকা কেজি চাউল সংগ্রহ করে আর আমার বাড়ির আশে পাশে অচাষকৃত শাক সবজি কুড়িয়ে রান্না করে খাই। করোনার চলাকালীন এই দুঃসময়ে অচাষকৃত উদ্ভিদ মানুষকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করছে। মহির উদ্দিন আরো বলেন, শুধু আমি আমার মত অনেক পরিবার এই অচাষকৃত শাক-সবজি চক পাথারে থেকে কুড়িয়ে এনে রান্না করে খাচ্ছি।
লেছড়াগঞ্জ বাজারে পাশে দিয়াপাড় গ্রামে আম্বিয়া বেগম (৬০) বলেন, আমার ছেলে রং-মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাত তার কাজ না থাকায় বাড়িতে অনেক কষ্টে আছি। কোন সাহায্য সহযোগিতায় পাই নাই। বাড়ির আশে পাশে কুড়িয়ে পাওয়া অনেক শাক সবজি আছে। তাই প্রতিদিন সংগ্রহ করি আর রান্না করে খাই। তিনি আরো বলেন, বারসিক অফিসের আয়োজনে গ্রামে আমি কুড়িয়ে পাওয়া যে সকল শাক সবজি পাওয়া যায় তার রান্না প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠানে গিয়ে ছিলাম। সেখানে এই শাকের গুরুত্ব, কিভাবে কত ভাবে রান্না করে খাওয়া, কোথায় কোথায় পাওয়া, পুষ্টিগুন কিভাবে ভাল থাকে সব জেনে আসছি। তাই এখন এই সময়ে কুড়িয়ে পাওয়া শাক আমার পরিবারে সদস্যদের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করছে। বারসিক কে ধন্যবাদ জানাই। মানুষকে তারা অনেক ভাবে সচেতন করার চেষ্টা করে।
আমাদের এলাকায় বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার পাশে, জমির আইলে, পুকুর ধারে, জলাশয় কিনারে, পতিত জাযগায় অসংখ্যা অচাষকৃত উদ্ভিদ জন্ম নেয়। যা আমরা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এ সকল খাদ্য আমরা সহজে পেতে পারি, কিনতে আমাদের টাকা লাগে না। এ সকল শাক সবজিতে কোন ধরনের রাসায়নিক সার ও বিষ প্রয়োগ করা হয় না। নিরাপদ খাদ্য হিসেবে আমরা গ্রহণ করতে পারি। আর নিরাপদ খাদ্য আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। শাক সবজি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অচাষকৃত শাকসবজি করোনা প্রতিরোধে ভুমিকা রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করছে।