নদীর বুক পরিবারের সবজি চাহিদা মেটাচ্ছে
চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু
কর্মঠ মানুষেরা প্রতিনিয়ত পতিত ভূমির ব্যবহার বাড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই তো জলাশয় থেকে শুরু করে অন্যান্য পতিত ভূমিতে ফসল উৎপাদনের নিরন্তর চেষ্টা করছেন কৃষক। ভাসমান সবজি চাষ, দোতলা কৃষি প্রযুক্তি এর অনন্য দৃষ্টান্ত। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই চাটমোহরের কৃষকেরা।
পরিবারের সবজির চাহিদা মেটাতে তারা ব্যবহার করছে শুকিয়ে যাওয়া নদীর বুক ও পেট। চাটমোহরের বড়াল ও গুমানী নদীর বুকে আলু, পালং শাক, খেশারী, মটর, সরিষা, ডাটা, বেগুন, লাউ, ধুন্দল, ধুনিয়া, রসুন, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি চাষ হচ্ছে। পাশাপাশি নদীর তলদেশ ব্যবহার হচ্ছে বীজতলা তৈরি ও বোরো আবাদে।
চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের দোলং গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে আসাদুল ইসলাম বলেন, “বড়াল নদীর বিভিন্ন স্থানে ক্রস বাঁধ দেওয়ায় নদীটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছিল। নদীর তিনটি ক্রসবাঁধ অপসারণের ফলে এখন বর্ষায় নূরনগর ঘাট থেকে সরাসরি পানি আসতে পারে রামনগর খেয়াঘাট পর্যন্ত।” তিনি আরও বলেন, “এ বছর শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই নদীর পানি অপসারিত হলে আমি বাড়ির সামনে পালং শাক সরিষা আলুর আবাদ করেছি। নদীর বুকের মাটি উর্বর হওয়ায় আমাকে কোন সার ব্যবহার করতে হয়নি। নদীর ভূমির আকারের পরিবর্তন না করে কোন প্রকার সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই ফসল ফলাচ্ছি। নদীর বুকের সবজি থেকে মেটাচ্ছি পরিবারের সবজির চাহিদা। পাশাপাশি বাড়তি অংশ বাজারে বিক্রি করে বারতি আয়ও হচ্ছে। পালং শাক শেষ হলে এখানে পিঁয়াজ ও ডাটা শাকের আবাদ করব।”
একই গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে শাহীন (৩০) বলেন, “গত বছর নদীর বুকে ডাটা শাকের আবাদ করেছিলাম। ভালো উৎপাদন হয়েছিল। পরে সেখানে চাল কুমড়ার আবাদ করি। নদীর বুকের অপেক্ষাকৃত উপরের দিকে মাদা কেটে কুমড়ার বীজ বপন করি। চারা গাছগুলো যখন বাড়তে থাকে তখন নদীর দিকটায় উঁচু মাচা তৈরি করে দেই। কয়েক মাস পূর্বে বোঁথর ঘাটে নদীর ক্রস বাঁধ অপসারণ করা হলে এ বছর দ্রুত শুকিয়ে গেছে নদীর পানি। তাই এ বছর আগে ভাগেই সবজির আবাদ শুরু করেছি।” তিনি আরও বলেন, “নদীর পতিত বুকে পালং শাক, খেসারি বীজ ছিটিয়েছিলাম। পরিবারের চাহিদা মেটানোর পর বাড়তিটুকু বিক্রি করে দিচ্ছি। নদীতে আষাঢ় শ্রাবণ মাসে পানি আসবে। পৌষ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ ভাগ পর্যন্ত আবাদ করা যাবে। আশা করছি শাক ও খেসারি তুলে ডাটা শাক ও চাল কুমড়ার আবাদ করব।”
কেবল আসাদুল বা শাহীন নয় মোতালেব, বেলু, রহমত আলী, আব্দুল কুদ্দুস, আবু হানিফা, সূজা উদ্দিনসহ চাটমোহরের এমন আরো শত শত নদী তীরবর্তী কৃষক তাদের বাড়ির পাশ^বর্তী নদীর বুক পেট ব্যবহার করে ফসল ফলাচ্ছেন। গুনাইগাছা ইউনিয়নের নূরনগর ঘাট থেকে শুরু করে বিলচলন ও হরিপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ কয়েক কিলোমিটার এলাকায় নদীর দুপারের সুবিধাজনক স্থানগুলোতে এভাবে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ফলাচ্ছেন।
নদীর রূপ পরিবর্তন না করে তারা এ ভূমি ব্যবহারের মাধ্যমে যে ফসল উৎপাদন করছেন তা অন্যান্যদের ও উৎসাহ যোগাচ্ছে।