দেশীয় এবং সুন্দরবনের নদীর মাছ নিয়ে আব্দুস সামাদ ফিস মিউজিয়াম
মো. আসাদ রহমান, সাতক্ষীরা থেকে
সাতক্ষীরা আকাশলীনা ট্যুরিজম সেন্টারে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন নদীর মাছ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মো. আবদুস সামাদ ফিশ মিউজিয়াম। উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতেই এই মৎস্য জাদুঘর। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ ইকোট্যুরিজম সেন্টার ও আব্দুস সামাদ ফিস মিউজিয়াম উদ্বোধন করেন। সুন্দরবনের ভ্রমণে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষন করছে এই ফিস মিউজিয়ামটি।
এই মৎস্য জাদুঘরে দেশীয় এসব মাছের মধ্যে রয়েছে শিং, কৈ, মাগুর, চেং, শোল, বাইন, চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, বেলে, ফলি, গজার, টাকি, চিতল, কাল বাউসসহ মিঠা পানির ২০ প্রজাতির মাছ। এছাড়া সুন্দরনবন সংলগ্ন বিভিন্ন নদীর ভাঙ্গান, ভেটকি, ট্যাপা, তাপসী, পার্শ্বে, আমাদী, ভোলাসহ ও সামুদ্রিক পায়ার, খরখুল্লা, ছুরি, জেলি ফিস, তাড়ি, ফেসা, গুলি, রেখাসহ ১২০প্রজাতির মাছ ফরমালিন দ্রবণে বড় বড় কাচের পাত্রে সাজানো আছে। প্রতিটি মাছের স্থানীয় ও বৈজ্ঞানিক নামসহ নানা তথ্য লেখা আছে এখানে। এছাড়া আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলে ও সুন্দরবনের জেলা বাওয়ালীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র। এছাড়া সামুদ্রিক প্রাণী জেলি, অক্টোপাস, গুগগুনি, হরিনা চিংড়ি, লইটা, কাঁকড়া, ইলিংশ, কয়রা ইলিসসহ উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন মাছ ফরমালিনে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
আকাশলীনায় ভ্রমণে আসা শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মো. আব্দুস সামাদ ফিস মিউজিয়ামে এসে হারিয়ে যাওয়া আমাদের অনেক দেশী মাছ দেখলাম। বইতে পড়া সামুদ্রিক জেলি, অক্টোপাস, কাকড়াসহ অনেক মাছ সম্পর্কে জানলেও বাস্তবে কখনো দেখা হয়নি, এখানে দেখার সুযোগ পেলাম।’
আকাশলীনা ট্যুরিজম সেন্টার ও আব্দুস সামাদ ফিসমিউজিয়ামের তত্ত্ববধায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরা ফিস মিউজিয়ামে এসে মাছ সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যায়। এখানে মাছ, কাকড়া, সামুদ্রিক পাণি ছাড়াও এই অঞ্চলের জেলে-বাওয়ালীদের নৌকা, বোট, সাম্পান, ট্রালারসহ মাছ ধরার আটন, ঘুণি, দৌড় এবং খারা সংরক্ষিত আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আকাশলীনায় প্রতিদিন গড়ে এক হাজার মানুষ এখানে ভ্রমণে আসে। শীতের সময় পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন পার্বণে ১০ হাজারের বেশি মানুষ এখানে আসে। সড়ক পথে সুন্দরবন দেখার একমাত্র সুযোগ থাকায় দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘দেশী বিলুপ্ত প্রায় মাছ ও সুন্দরবনের আশে পাশের নদীর মাছগুলো এই ফিস মিউজিয়ামের সংরক্ষণ করা হয়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটকদের এই অঞ্চলের মাছ এবং জেলেদের সম্পর্কে জানাতে এই ফিস মিউজিয়াম।’ দেশীয় অনেক মাছ আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে আমাদের এই উদ্যোগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন উৎসবে এবং শীত মৌসুমে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক এখানে আসেন। আকাশলীনা ইকোট্যুরিজম সেন্টার প্রবেশ মূল্য ১০টাকা হলেও ফিস মিউজিয়ামে প্রবেশ করতে কোন টাকা নেওয়া হয় না। এই মৎস্য জাদুঘরটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।’
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জের আকাশলীনায় অবস্থিত আব্দুস সামাদ ফিস মিউজিয়ামে দেশীয় অনেক বিলুপ্ত প্রায় অনেক মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। মাছের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। যেসব মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এগুলো বাঁচাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। গণসতেচনতা সৃষ্টির কাজ চলছে। জেলার নদী-নালা-পুকুর-খাল-জলাশয় বেদখল উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দের কবিতার নামে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জে সুন্দরবনসংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে ২৫০ বিঘা জমির ওপর জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ও শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিসের আওতায় গড়ে উঠেছে আকাশলীনা ইকোট্যুরিজম সেন্টার।