বিলকুমারী বিলের মাছের মেলা
তানোর, রাজশাহী থেকে মিজানুর রহমান :
বিলটির নাম বিলকুমারী। আয়তন ১৫৭ হেক্টর। বর্ষায় বেড়ে হয় সাড়ে ৭০০ হেক্টর। জুলাই মাস থেকে কেউ মাছ ধরে না। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে মাছ ধরার উদ্বোধন হয়। প্রথম দিন মাছ ধরে বিলের ধারে মেলা শুরু হয়। তবে এ বছরের মেলা হয়েছে বুধবার ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮ সকালে। এদিন মেলায় মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, দেশে এমন মেলা শুধু তানোরেই হয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খাস খতিয়ানভুক্ত বিলটি একটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। ২০০৮ সাল থেকে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই বিলের মাঝখানে দুই হেক্টর এলাকা নিয়ে দুটি অভয়াশ্রম করা হয়েছে। বিলকুমারী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ৪৬৮ জন সদস্য এই বিলের দেখভাল করেন। জুলাই মাস থেকে বিলের পুরো দুই কিলোমিটার জলসীমায় কাউকে নামতে দেওয়া হয়না। শুধু ডিসেম্বর মাসের যেকোনো এক দিন আনুষ্ঠানিকভাবে মাছ ধরার উদ্বোধন করা হয়।
বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিলকুমারী বিলের ধারে তানোরের ডাকবাংলা ফুটবল মাঠে মেলা বসেছে। মেলায় বসানো হয়েছে প্রায় ১৬টি আড়ত। জেলেরা বিল থেকে মাছ ধরে আড়তে আসছেন। প্রতিটি আড়ত ঘিরে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সেখানে নিলামে মাছ বিক্রি হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ ও স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা মাছ কিনছেন। খুচরা বিক্রেতাদেরও মেলায় মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মেলার মাঠের প্রবেশপথে তৈরি করা হয়েছিল ফটক। মাঠ ঘিরে ছিল প্যান্ডেল ও এক প্রান্তে মঞ্চ। সকালে ওই মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা ও মৎস্যজীবিদের মধ্যে পরিচয়পত্র বিতরণ করেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। এসময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. শওকাত আলীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লূৎফর হায়দার রশিদ ময়না, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, আতাউর রহমান, থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম সহ দর্লীয় নেতা-কর্মীরা।
মেলায় রাজশাহী শহরসহ পাশ্ববর্তী উপজেলা থেকে শতশত মানুষ বিলের মাছ কেনার জন্য এসেছিলেন। বাহারী রকমের মাছ মেলায় উঠেছিলো। অন্য দিনের চেয়ে দামও বেশি ছিলো। তবুও লোকজন বেশি দাম দিয়ে মেলার মাছ কেনেন। কিন্তু মেলার মাঠে আসা অনেকে অভিযোগ করে বলেন, “এবছর মৎস্যজীবিরা বিলের মাছের পাশাপাশি পুকুরের মাছ মেলায় বিক্রি করছেন।”
মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি করিম প্রামাণিক বলেন, “আগামী জুন মাস পর্যন্ত তাঁরা বিলের দুই কিলোমিটার এলাকায় মাছ শিকার করবেন। গত কয়েক বছরে তাঁদের সমিতির অনেক সদস্যই বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন।” উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শরিফুল ইসলাম বলেন, “২০০৮ সাল থেকে এই মেলা চলছে। বাংলাদেশে আর কোথাও বিলের মাছের এমন মেলা বসে না। এ বছর এই মেলায় ১৩৫ মেট্রিক টন মাছ পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. শওকাত আলী বলেন, “মাছ মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিলো। এরইমাঝে বেশকিছু অনিয়মেরও অভিযোগ শুনেছি। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবো। তবে এ বছর সবমিলিয়ে মেলা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।”