হরিরামপুর চরে আউশ ধানের চাষে ঝুঁকে পড়ছে কৃষক

হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন ও সত্যরঞ্জন সাহা

চরের দূর আকাশে তাকালে দেখা যায় মাঠে ধানের সমারোহ। এক সময় মাঠে মাঠে আবাদ হতো আউশ ধান, কালের পরিবর্তনে আউশ ধান চাষ মাঠ থেকে হারিয়ে গেলেও চরের মাঠ থেকে হারায়নি। বর্ষা মৌসুমে চকের দিকে তাকালে আউশের পাকা ধান খেত দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। মাঠে কৃষকরা মাথায় গামছা বেধে হাতে কাস্তে নিয়ে দলগতভাবে মনের আনন্দে আউশ ধান কাটার ধুম লেগেছে।

হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে আউশ ধান কেটে মাঠ থেকে বাড়ি আনলে বাড়ির বউ-ঝিয়েরা আউশ ধান সংগ্রহ করতে দেখা যায়। হরিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর হরিরামপুরে ২৮০ হেক্টর জমিতে পরাঙ্গি আউশ ও রোপা আউশ ধান চাষ হয়েছে। লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে হরিহরদিয়া, গঙ্গাদরধি, সেলিমপুর, জয়পুর, নটাখোলা মাঠে বোনা আউশ ধান চাষ করা হয় বেশি। হরিরামপুর উপজেলার, লেচড়াগঞ্জ ইউনিয়নের গঙ্গাধরদি গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন (৫৫) বলেন, ‘চর এলাকায় বৈশাখ মাসের শুরু থেকে পরাঙ্গি আউশ ধান জাত বোনার জন্য জমিতে ৩ টি চাষ দিয়ে আউশ ধান বোনা শুরু করেন। শ্রাবণ মাসের শেষে পরাঙ্গি আউশ ধান কাটা হয়।’

Exif_JPEG_420

এ বছর আগাম বন্যা না হওয়ার কারণে কৃষকগণ ভালোভাবে ধান কেটে ঘরে তুলতে পেরেছেন। চরাঞ্চলে বোনা আউশ ধানে খরচ কম এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, রোগ বালাই কম হওয়ার কারণে কৃষকগণ আউশ ধান চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষক নিজাম উদ্দিন আরোও বলেন, ‘আমি ১০ বিঘা (এক বিঘা সমান ৩৩ শতক) জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি। আশা করঠি ৬০ মণ ধান পাব।’ কৃষাণী ইয়াছমিন বেগম বলেন, ‘আউশ ধান চাষে কোন প্রকার সার বিষ ও পানি দিতে হয় না। সম্পূর্ণ রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত খাবার। জমিতে পরাঙ্গি আউশ ধান বোনে রাখলে আলো বাতাসে বড় হয়ে ধান হয়। এই ধান ভাত চরের মানুষ জন সবচেয়ে বেশি খায়।’

Exif_JPEG_420

পরাঙ্গি আউশ ধানের সাথে আমন হিজল দিঘা ধান মিশ্র হিসেবে অনেক কৃষক চাষ করছেন। কৃষকগণ জমি থেকে পরাঙ্গি আউশ ধান কেটে নিয়ে আসলে বন্যার পানিতে হিজল দিঘা ধান বড় হয়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে হিজল দিঘা ধান পাকলে কৃষকগণ ধান সংগ্রহ করেন। এ বছর আগাম বা হঠাৎ পানি না আসার কারণে কৃষকরা তাদের চাষকৃত ধান সম্পর্ন মাঠ থেকে সংগ্রহ করতে পারছেন। এলাকায় আউশ ধান কাটা শুরু হওয়ার কারণে কৃষক কৃষাণীরা মাঠে ধান কাটা, ধান মাড়াই, ঝাড়াই, শুকানো এবং বীজ ধান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় পার করছেন।

Exif_JPEG_420

অপরদিকে ঝিটকা, নয়ারহাট, ফরিদপুর এলাকার স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণ আউশ ধান সংগ্রহ করছেন। স্থানীয় জাতের আউশ ধান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারে। কৃষকদের নিজস্ব জ্ঞান, দক্ষতা, নিজেদের আয়ত্বের চাষ পদ্ধতি, বীজ সংরক্ষণ করে চাষাবাদ সম্প্রসাণ করছেন। এলাকায় প্রচলিত আছে, আউশ ধানের খিচুরি খেতে খুব স্বাদ, আউশ ধানের ভাত, আর মুড়ি খেতে যেমন মজা, তেমনি পুষ্টিগুণে অতুলনীয়।

বারসিক এলাকা পর্যায়ে আউশ ধান চাষ করার জন্য কৃষক ও কৃষাণী পর্যায়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে তথ্য আদান-প্রদানে সহায়তা দিচ্ছে। হরিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘চরাঞ্চলে কৃষকদের আউশ ধান চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ও মাঠ পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। তাছাড়াও রোপা আউশ ধান চাষ করে ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকগণ চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন।’

happy wheels 2

Comments