কৃষিপ্রতিবেশ সুরক্ষায় সবুজ সংহতি
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা চর্চা, জলবায়ু নায্যতা ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কৃষক-কৃষাণি, শিক্ষক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংষ্কৃতিক কর্মী, উন্নয়ন কর্মী, যুব প্রতিনিধি নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিগণের অংশগ্রহণে প্রাণ, প্রকৃতি ও সংষ্কৃতি সৃরক্ষায় সবুজ সংহতি গঠনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি।
সিংগাইর উপজেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষনা সংস্থা বারসিক মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করে। মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি করম আলী মাস্টারের সভাপতিত্বে বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল রায়ের সঞ্চালনায় বারসিক কর্মকর্তা শিমুল কুমার বিশ্বাসের ধারণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে মতবিনিময় সভায় বীর মুক্তিাযোদ্ধা অলক সাহা বলেন, ‘প্রকৃতি ও পরিবেশ নষ্ট করে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতিহাস ও সংষ্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে দেশব্যাপি এমন শতবর্ষী বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। আমরা পরিবেশ বিনাসী উন্নয়ন চাই না। প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে সবুজের বাংলাদেশ চাই।’
সিংগাইর ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ চন্দ্র মালো বলেন, ‘পৃথিবী সবুজ রাখতে সবুজ মনের মানুষ প্রয়োজন। আমি মনে করি প্রকৃতির রক্ষার জন্য সবুজ মনের মানুষগুলোই আজকের সভায় এসেছেন। প্রকৃতিই মানুষের পরম বন্ধু। প্রকৃতির সাথে সংহতি তৈরির মাধ্যমেই আমাদের বাঁচতে হবে। প্রকৃতি রক্ষায় আমাদের সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রাণ প্রকৃতি ও সংষ্কৃতি সুরক্ষায় সবুজ সংহতি গঠনের উদ্যোগের জন্য বারসিককে আমি ধন্যবাদ জানাই।’ কালিয়াকৈর খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ যুবায়ের হোসেন খান বলেন, ‘বারসিক’র অনেক কাজের সাথেই যুক্ত থাকি। প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে বারসিক’র ভাবনা আমাকে দায়িত্বশীল করে তুলে। আমরা দেখছি দিন দিন পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে। জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে সকল প্রাণ ও প্রকৃতির উপর।অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার কীটনাশক এর ব্যবহার এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে মাটি, পানি, বাতাস দুষিত হচ্ছে। সবুজ সংহতির কাজ আমি আমার বিদ্যালয় থেকেই শুরু করতে চাই। আমার বিদ্যালয়কে একটি সবুজ ক্যাম্প্যাস হিসেবে গড়ে তুলবো।’
সংষ্কৃতি শিল্পী উজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি বারসিক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে গ্রামে প্রবীণ অধিকার, বাল্য বিয়ে, নারী নির্যাতন রোধে মানুষকে সচেতন করে থাকি। আমি এই সবুজ সংহতির মাধমে নদী দূষণ দখল, প্লাষ্টিক বর্জন, কীটনাশকের ব্যবহার ক্ষতিকর দিক গানে গানে তুলে ধরবো।’ কৃষিপ্রতবেশবিদ্যা চর্চকারী কৃষক মজিবর রহমান বলেন, ‘আমি আমার গ্রামকে সবুজ রাখতে চাই। সকল প্রাণের জন্য নিরাপদ খাদ্য দরকার। মাটি, পানি, বাতাস সুস্থ রাখতে আমার জমিতে কোন ধরনের রাসায়নিক সার কীটনাশক ব্যবহার করি না। সবুজ সংহতির মাধমে আমরা রাসায়নিক সার কীটনাশকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরবো এবং কৃষিপ্রতিবেশ বিদ্যা চর্চা বৃদ্ধি করবো।’
সভাপতির বক্তব্যে করম আলী মাষ্টার বলেন, ‘বাংলাদের প্রাণ হচ্ছে কৃষক। কিন্তু কৃষক আজ তাঁর নিজস্ব কৃষিতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছেন। দিন দিন বাড়ছে ইটভাটা। ইট ভাটার কারণে প্রচুর কালো ধোঁয়া হচ্ছে। গরম বাড়ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় কৃষি ফসল নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে কৃষি প্রতিবেশ। তাছাড়া ইটভাটার কারণে কৃষকের কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। কৃষি জমির সংকট দেখা দিচ্ছ। কৃষক অধিক উৎপাদনের আশায় জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে মাটির নিচের অণুজীব মারা যাচ্ছে, মরে যাচ্ছে উপকারি কীটপতঙ্গও। সকল প্রাণের টিকে থাকার জন্য সবুজ সংহতি জোরদার করতে হবে।’
আলোচনা শেষে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নারী নেত্রী আনোয়ারা খাতুনকে আহবায়ক ও কালিয়াকৈর খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ যুবায়ের হোসেন খানকে যুগ্ম আহবায়ক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট সিংগাইর উপজেলা সবুজ সংহতি কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল রায় কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা, জলবায়ু নায্যতা, খাদ্য সার্বভৌমত্ব বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য বিস্তারিত ধারণা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সিংগাইর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু বকর সিদ্দিকী, বায়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন, সিংগাইর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সাইফ সুজন, সিংগাইর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোবারক হোসেন, নিরাভরন থিয়েটার এর সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সিংগাইর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ঝর্ণা খানম, কৃষাণি নাজমা বেগম, বলধারা ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য সুফিয়া বেগম, কৃষিপ্রতিবেশ বিদ্যাচর্চাকারি কৃষক মোঃ ইব্রাহিম মিয়া, স্বপন কুমার রায়সহ যুব প্রতিনিধি লিজা আক্তার, নাইম হোসেন মুদাচ্ছির হোসেন প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বারসিক সিংগাইর উপজেলায় পরিচালিত সকল প্রকল্পের কর্মকতাবৃন্দ।