চরের দুর্যোগকালীন সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আউশ ধান

হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
সম্প্রতি মানিকগঞ্জ কৃষক-কৃষি ফোরাম ও বারসিক’র যৌথ উদ্যোগে ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় চরাঞ্চলে আউশ ধান চাষের সাফল্য ও কৃষকদের আগামী ভাবনা বিষয়ক” অনলাইন ভিত্তিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানিকগঞ্জ কৃষক-কৃষি ফোরামের কৃষক পর্যায়ে গবেষক ও সাংগঠনিক সদস্য সহিদ বিশ^াস এর সভাপত্বিতে আলোচনায় শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বারসিক মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সমন্বকারী বিমল রায়।


প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা মোকাবেলায় এবং আউশ ধান নিরাপদ খাদ্যর উৎস চলতি বছর আউশ মৌসুমে কৃষকদের সাফল্য ও আগামী ভাবনা নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন যুব জলবায়ু টিমের সদস্য ও তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রাসেল মিয়া, মানিকগঞ্জ কৃষক-কৃষি ফোরাম এর আহবায়ক ও কৃষক পর্যায়ে গবেষক মাসুদ বিশ^াস, লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শহিদ বিশ^াস, কৃষক যুব টিমের সভাপতি জাকির হোসেন, পদ্মাপাড়ের পাঠশালার তরুণ পরিবেশ উদ্যোক্তা মীর নাদিম, হরিরামপুর যুব টিমের সদস্য শাহিন টিটু, ঘিওর কেল্লাই ও গাংডুবি থেকে কৃষক সংগঠনের সদস্য আব্দুর রউফ, সাহেব আলী ও প্রফুল্ল কুমার, হরিরামপুর চরাঞ্চল থেকে দুর্যোগ মোকাবেলা কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেনও মামুন শিকদার, কৃষক আলামিন হোসেন এবং বায়রা জামালপুর থেকে কৃষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুসসামাদ খাঁ, কৃষক জুয়েল হোসেন ও রিদয় হোসেন।
আলোচনায় আলোচকবৃন্দ আউশ ধান চাষের সাফল্য, আগামী ভাবনা এবং দুর্যোগ মোকাবেলা এবং নিরাপদ খাদ্যর উৎস হিসেবে আউশ ধান চাষ কৃষক পর্যায়ে আরো সম্প্রাসারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।


হরিরামপুর চরাঞ্চলের হরিরহরদিয়া গ্রামের কৃষক রাসেল মিয়া বলেন, ‘গত বছর ২০২০ সালে হঠাৎ আগাম বন্যার পানি আসার কারণে আমরা আউশ ধান সম্পর্ন কেটে ঘরে তুলতে পারি নাই। অনেক ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু মৌসুমে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এ বছর বন্যার পানি একটু দেরিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে চরাঞ্চলের সকল কৃষকই ভালোভাবে ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি ৫ বিঘা জমিতে আউশ ধান পরাঙ্গি ও কালামানিক জাত চাষ করেছিলাম। আমার মোট খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা এবং ধান পেয়েছি ৩৫ মণ, যার বর্তমান বাজার বিক্রি মূল্য ৩৮ হাজার টাকা।’

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রামচর গ্রামের কৃষক ও ইউপি সদস্য শহিদ বিশ^াস বলেন, ‘আউশধান চাষে আমাদের খরচ কম। আউশ ধান চাষে তেমন কোন রাসায়নিক সার বিষ প্রয়োজন হয় না। আউশের চাউল ভাত খেতে স্বাদ। আউশ ধান নিরাপদ খাদ্যর উৎস হিসেবে আমরা ধরে নিতে পারি। আগামী বছর হরিরামপুর চরাঞ্চলসহ মানিকগঞ্জ জেলার কৃষক পর্যায়ে আউশ ধান চাষ সম্প্রাসারণ করতে চাই, যা আমাদের দুর্যোগকালীন সময়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে।’


মানিকগঞ্জ তথা হরিরামপুর উপজেলা একটি বন্যা প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে প্রতিবছর এই এলাকার কৃষককের ফসল চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই তাদের মোকাবেলার জন্য বৈচিত্র্যময় ফসল চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। বর্ষা মোৗসুমে আউশ ধানের চাষ তাদের অন্যতম একটি ফসল। প্রতিবছর বন্যার পানিতে আউশ আমন ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এ বছর চলতি আউশ মৌসুমে বন্যার পানি দেরিতে আসার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আউশ ধান ভালোভাবে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন এবং বাজারে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারছেন।

উল্লেখ্য, বারসিক ২০১১ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় আউশ আমন জাতের ধান নিয়ে কৃষক পর্যায়ে প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, বৈচিত্র্যময় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ, আলোচনা সভা, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, স্থানীয়ভাবে বীজ সংরক্ষণ কার্যক্রম, বীজ ব্যাংক তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহায়তা করে আসছে।

happy wheels 2

Comments