সাম্প্রতিক পোস্ট

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিকল্পিত কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে

সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সকলের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সরকার সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করে। এই লকডাউনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উপর। সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকায় স্থবিরতা তৈরি হয়। মাঝে করোনা শনাক্তের হার কমে আসলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে নানা ধরনের কাজে নিজেদেরকে যুক্ত করেন। তবে চলিত বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় পুনরায় দেশে লকডাউ ঘোষণা করে সরকার। তারপর থেকে আবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা।


চলমান লকডাউনে বারসিক’র কর্ম এলকার জনসংগঠনগুলোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও এক ধরনের স্ববিরতা তৈরি হয়। পরবর্তীতে সরকার চলমান লকডাউন শিথিল করে করোনা নিয়ন্ত্রণে কিছু স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা করে। সরকার ঘোষিত সেই স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে কাজের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের বাংগালা গ্রামে কৃষকের অধিকার কর্মসূচি প্রকল্পের অগ্রগতি ও কৃষক সংগঠনের সাথে বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয় সম্পৃতি।

বাংগালা নব কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সভাপতি মোঃ তমিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে বারসিক কর্মকর্তা শাহীনুর রহমানের সঞ্চালনায় বলধারা ইউনিয়নের কাস্তা ,নবগ্রাম,বাংগালা,সোলাই, ব্রী-কালিয়াকের নয়াপাড়া, ছোট কালিয়াকৈর, গোলাাই কৃষক কৃষাণি সংগঠনের ১৭ জন সদস্য অংশ্রগহণ করে নিজ নিজ সংগঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করেন। প্রত্যেক সংগঠন থেকে অংশগ্রহণকারীগণ আলাদাভাবে তাদের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাত্রা তুলে ধরেন।
বাংগালা নব কৃষক কৃষাণি সাংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরের মত এ বছরের শুরুতে ও বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা গত পাঁচ মাসে আমাদের পরিকল্পনার সব কাজ বাস্তবায়ন করতে পারিনি। বড় কাজের মধ্যে নুরানী গঙ্গা নদী খননের জন্য জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডর নিকট স্মারকলিপি প্রদান, প্রাণী সম্পদের টিকা কার্যক্রম,স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজন, নিয়মিত মাসিক সভা করা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা কৃষি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদের সাথে আমাদের নিয়মিত যোগায়োযোগ ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুষ্টি ও পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা কৃষি কাজের প্রতি বেশি জোর দিয়েছি। আমদের সদস্যরা ধান চাষ, পারিবারিক সবজি বাগান, আদা হলুদ চাষ, হাঁস, মুরগি পালন বৃদ্ধি, পাট চাষ, করেছি। তাছাড়া উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে পাটের বীজ সংগ্রহ ,পারিবারিক সবজি বাগানের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী পেয়েছে। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে সরকারি প্রনোদোনা ৫০০ টাকা করে ৫ কৃষক জন পেয়েছে।’

কাস্তা বারোওয়ারি কৃষক সংগঠনের সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, ‘কৃষিপণ্য পরিবহনে সহজ করার জন্য ব্রীজ নির্মাণের জন্য বিএডিসিতে দরখাস্ত জমা দেওয়া আমাদের সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল কিন্তুু করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজটি করতে পারিনি। তবে সংগঠনের সদস্য, সরকারি বেসরকারি সেবাপ্রতিষ্ঠানে বারসিক প্রতিনিধিদের সাথে মোবাইল ফোনে আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে আমাদের পরিকল্পনার কাজগুলো সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে করবো।’ ব্রী-কালিয়াকৈর নয়াপাড়া কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সভাপতি হয়রত আলী বলেন, ‘সকল সংগঠনের মতই আমাদের সংগঠনের পরিকল্পনার সকল কাজ বাস্তবায়ন করতে পারিনি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিকল্পিত কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।’
বারসিক কর্মকর্তা শিমুল বিশ^াস বলেন, ‘বর্তমান সময় সবার জন্যই একটি সংকটময়। এই সময়ে নিজেদেরকে প্রথমে সুরক্ষিত রাখতে হবে। নিজেরা সুরক্ষিত থাকলে পরিকল্পিত কাজগুলো বাস্তাবায়ন করা যাবে। করোনা পরিস্থিতি শুরু থেকেই মানুষকে সচেতন করতে মাস্ক বিতরণ, লিফলেট প্রদান, বিলবোর্ড প্রদান, বীজ বিনিময়, শতবাড়ি তৈরি, মৌসুমভিত্তিক ধানজাত গবেষণা পরিচালনা করা বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ বৃদ্ধি, নারীর আয়বৃদ্ধিমূলক কাজে যুক্ত হওয়া, নারীর নেতৃত্ব সক্ষমতা তৈরি, কৃষক কৃষক বীজ বিনিময়, অনলাইন সভা পরিচালনা করা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সরকারি বেসরকারি সেবাপ্রাপ্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।’


আলোচনা সভায় আরও অংশগ্রহণ করেন বাংগালা নব কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সহ-সভাপতি সুভাষ মন্ডল,কাস্তা বারোওয়ারি কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা বেগম, ছোটকালিয়াকৈর কৃষক শ্রমিক সমাজ সেবা সংঘের মো: দারোগ আলী, সোলাই রাজবংশী উন্নয়ন সংগঠনের সদস্য হেনা রাজবংশী, লক্ষি রাজবংশী, নবগ্রাম কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সভাপতি সভাপতি নবু সরদাার সদস্য রাশেদা বেগম, গোলাই কালিগঙ্গা কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সভাপতি সেলিনা বেগাম, সহ-সভাপতি মনোয়ারা বেগম বারসিক কর্মকর্তা শারমিন আক্তার প্রমুখ।

happy wheels 2

Comments