দুর্যোগকালীন সময়ে চরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আউশ ধান

হরিরামপুর মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
চলতি মৌসুমে হরিরামপুর চরাঞ্চলে আউশধান চাষে কৃষকের সাফল্য হয়েছে। এ বছর চরে বন্যার পানি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকায় কৃষকরা তাদের আউশ কেটে ঘরে তুলতে পারছেন। হরিরামপুর লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রাম চর নটাখোলা বালিয়াচর গঙ্গাধরদি হরিহরদিয়া সেলিমপুর, জয়পুর গ্রামে ব্যাপক পরাঙ্গি ও কালামানিক আউশ চাষ হয়েছে। হরিরামপুর কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে লেছড়াগঞ্জ সুতালড়ী ও আজিমনগর ইউনিয়নে ৭০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছে, যা চরাঞ্চলের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে। হরিরামপুর চরাঞ্চলে বেশির ভাগ মাটির ধরন বেলে প্রকৃতির হওয়ার কারণে বোরো মৌসুমে ধান চাষ কম। তার কারণ হলো কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেশি হয়ে যায়। তাই চরাঞ্চলের কৃষকরা রবি শস্য যেমন গম, পায়রা, সরিষা, মাসকালাই, মুসরি কালাই, ধনিয়া সজ, সবজি, তিল, কাউন চাষের মাধ্যমে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন ।


হরিরামপুর উপজেলা একটি বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রতিবছর এই এলাকার কৃষকের ফসল চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই তাদের মোকাবেলার জন্য বৈচিত্র্যময় ফসল চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। তার বর্ষা মোৗসুমে আউশ ধানের চাষ তাদের অন্যতম একটি ফসল। প্রতিবছর বন্যার পানিতে আউশ আমন ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এ বছর চলতি আউশ মৌসুমে বন্যার পানি দেরিতে আসার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আউশ ধান ভালোভাবে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এবং বাজারে কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন।


হরিরামপুর চরাঞ্চলের নটাখোলা গ্রামের কৃষক এরশাদ আলী বলেন, ‘গত বছর ২০২২ সালে বন্যার পানি বেশি হওয়ার কারণে কিছু আউশ ধান পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু মৌসুমে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এ বছর বন্যার পানি একটু দেরিতে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিশেষ করে চরাঞ্চলের সকল কৃষকই ভালোভাবে ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি ৫ বিঘা জমিতে আউশ ধান পরাঙ্গি ও কালামানিক জাত চাষ করেছিলাম। আমরা মোট খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা এবং ধান পেয়েছি ৩৫ মণ যার বর্তমান বাজার বিক্রিমূল্য ৩৮ হাজার টাকা।’ নটাখোলা গ্রামের কৃষক সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা ৩ বিঘা জমিতে আউশ পরাঙ্গি ধান চাষ করে ২০ মণ ধান পেয়েছি। আবার এই গ্রামের মোতালেক হোসেন ৪০ মণ আউশ ধান পেয়েছেন। দিন দিন চরে আউশ ধান চাষ বাড়তেছে।’


লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের বালিয়াচর গ্রামের কৃষক শহিদ শেখ বলেন, ‘আউশধ ান চাষে আমাদের খরচ কম। আউশ ধান চাষে তেমন কোন রাসায়নিক সার বিষ প্রয়োজন হয় না। আউশের চাউল ভাত খেতে স্বাদ। আউশ ধান নিরাপদ খাদ্যর উৎস হিসেবে আমরা গ্রহণ করি। আগামীবছর হরিরামপুর চরাঞ্চলসহ মানিকগঞ্জ জেলার কৃষক পর্যায়ে আউশ ধান চাষ সম্প্রাসারণ করতে চাই, যা আমাদের দুর্যোগকালীন সময়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে।


উল্লেখ্য যে, বারসিক ২০১১ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় আউশ আমন জাতের ধান নিয়ে কৃষক পর্যায়ে প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, বৈচিত্র্যময় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ, আলোচনা সভা, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, স্থানীয়ভাবে বীজ সংরক্ষণ কার্যক্রম, আউশ ধানের খাদ্য উৎসব স্থানীয় বীজ ব্যাংক তৈরি কৃষকের মধ্যে বীজ বিনিময়সহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করে আসছে।

happy wheels 2

Comments