বীজ সংরক্ষণ পাঠশালা করতে চান চরের ইয়াসমিন

হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন

সকালে ঘুম থেকে উঠে বাজারে যাওয়ার চিন্তা প্রতিটি পরিবারের। তারপর বাজারে গিয়ে চোখ ছোটে যায় দেশী/স্থানীয় মাছ, মাংস, তরুতরকারী, ফলমূল, সবজি কেনার জন্য, দাম যাই হোক না কেন। কৃষক যদি বলেন ‘আমার সবজি বা ফলমুলে কোন প্রকার রাসায়নিক সার বিষ নাই।’ তাহলে তো দামের সাথে তেমন একটা বাড়াবাড়ি থাকে না। জৈব সারের উৎপাদিত সবজি একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কম অন্যদিকে বাজারেমূল্য বেশি থাকে।

দিন দিন বহুজাতিক কোম্পানির উচ্চ ফলনশীল বীজের কারণে স্থানীয় জাত স্থানীয় জাতের লাউ, কুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, শশা, করল্লা, পিয়ারা, কলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফলমূল হারিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা আর মা দাদীর কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি। তরুণ প্রজন্ম তো জানেনা কিভাবে বীজ সংরক্ষণ করতে হয়, কতদিন শুকাতে হয়, কোন সময় কোন সবজি লাগাতে হয়, কিভাবে প্যাকেট জাত করতে হয়।

IMG_20190409_1hh
স্থানীয় বীজের জাতবৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণ বিষয়ে সম্প্রতি হরিরামপুর চরাঞ্চলে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে গঙ্গাধরদি গ্রামের ইয়াসমিন আক্তার (৪২) গড়ে তুলতে চান বীজ সংরক্ষণের পাঠশালা। মৌসুমভিত্তিক সরাসরি ফলমূল এবং সবজি সংগ্রহ করে স্কুলে গিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে স্থানীয় জাতের বীজ কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, কতদিন শুকাতে হয়, কিভাবে প্যাকেট জাত করতে সেই বিষয়ে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা করেন। এছাড়া রাসায়নিক সার বিষ দিয়ে উৎপাদিত খাদ্য দ্রব্যের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন। এবং জৈবসারের মাধ্যমে উৎপাদিত খাদ্য গুনাগুণ নিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোচনা করেন।

IMG_20190409_13www
হরিরামপুুর চরাঞ্চল কুটিমিয়া স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি এই বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা আয়োজন করেন সম্প্রতি। এই আয়োজনে সহযোগিতা করে বারসিক। আলোচনায় অংশ নিয়ে কুটিমিয়া স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তামান্না আক্তার বলে, ‘ইয়াসমিন আপার ক্লাস আমার কাছে ভালো লেগেছে, আমরা সবাই কিভাবে বীজ রাখতে হয়, শুকাতে হয়, কিভাবে ঘরে রাখতে হয়, রোপণ বিষয়ে শিখতে পেরেছি।’ উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিনা আক্তার বলেন, ‘কৃষকের কাছ থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীরা শিখতে পেরেছে। লেখাপড়া করার পাশাপাশি কৃষি বিষেয় জানতে হবে, যা সংসার জীবনে গেলে শিশুদের অনেক কাজে লাগবে। এবং এলাকায় স্থানীয় জাতের বীজ বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে।’

ইয়াসমিন আক্তার যে এলাকার স্কুলে ক্লাস নেন সেই এলাকায়/ গ্রামে কি ধরনের সবজি চাষ করেন তা জানার চেষ্টা করেন। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরাসরি ফলমূলের সংগ্রহ করে এসব ফসলের বীজ সংরক্ষণ করেন। সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পর তিনি স্কুলে অথবা স্কুলের পাশের বাড়িতে একজন শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে ক্লাস আয়োজন করেন।
এই প্রসঙ্গে ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘চরের চরাঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ধারাবাহিকভাবে এই ধরনের ক্লাস আয়োজন করবো। আমি ছোট ছেলেমেয়েদের শিখাতে অনেকআনন্দ পাই। কারণ তারা অনেক প্রশ্ন করে। আমার কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জানতে চায়। ছোটবেলা থেকে যদি শিশুদের স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ, কিভাবে লাগাতে হয়, কোন বীজ কখন, কোন মাসে সংরক্ষণ করতে হয় সে সম্পর্কে যদি তাদের ভিতরে ধারনা তৈরি করে দিতে পারি তাহলে চরাঞ্চলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে। আমরা নিরাপদ খাবার খেতে পারব।’

IMG_20190409_133132
বারসিক কর্মকর্তা মুকতার হোসেন বলেন, ‘আমরা ইয়াসমিন আক্তারের মত উদ্যোগী ব্যক্তি খুঁজে বের করি। তাদেরকে উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে থাকি। যদি কারিগরি কোন সহায়তার প্রয়োজন হয় সেই বিষয়ে বারসিক সহায়তা করে থাকে।’

happy wheels 2

Comments