আমরাও লিখতে, পড়তে চাই
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
“খালি দস্তখত পারি। ভাবতাম এইডাই অনেক। কিন্তুু স্বামীর নাম, গ্রামের নাম, ঠিকানা এইডিও জানার দরকার আছে আগে বুজতাম না। আমি চোখ থাকতেও অন্ধ। পড়তে পারি না। আমার মাইয়া ইস্কুলে পড়ে। সন্ধ্যায় পড়তে বইলে আমারে পড়া দেখায়া দিতে কয়। আমি পারি না। মাইয়া কয়, মা তুমি অতো বড় অইছো তাও পড়তে পারো না, নিজের কাছেই শরম লাগে”। মাথা নিচু করে এই কথাগুলো বলছিলেন দুলেনা আক্তার। মেয়ের কথায় লজ্জা পেয়ে আজ তিনি লেখাপড়া শুরু করেছেন। ‘আমরাও লিখতে ও পড়তে চাই’Ñএমনই প্রত্যয় ব্যক্ত করে নতুনভাবে পড়তে শুরু করেছেন দুলেনা আক্তারসহ কয়েকজন প্রবীণ নারী। এই নারীদের পড়ালেখা শেখাতে এগিয়ে এসেছে গ্রামের কয়েকজন যুব সদস্য।
লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের সুলতানগাতী একটি গ্রাম। এই গ্রামে আছে নানা বয়সের মানুষের বসবাস। জানুয়ারি মাসে এই গ্রামের ২০জন যুব শিক্ষার্থী মিলে একটি সংগঠন গড়ে তুলে। তারা নিজেদের গ্রামের সামাজিক কার্যক্রম ছাড়াও গ্রামীণ জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা, জ্বালানি সাশ্রয় চুলা তৈরি ও ব্যবহারে প্রচারণা, বিভিন্ন দিবস ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলী সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মাঝে ধারণা প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম তারা শুরু করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ শে ফেব্রুয়ারি বেলাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তারা ভাষা বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এই আয়োজনে সুলতানগাতী ও বেলাটি গ্রামের ১২ জন প্রবীণ নারী নিজেদের নাম ঠিকানা লেখার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ৪জন নারী সঠিকভাবে নিজেদের নাম ও ঠিকানা লিখতে পারে, বাকি ৮জন এখনও সেভাবে লিখতে পারেননি।
তাই যুব সংগঠনের সদস্যরা সিদ্বান্ত নেয় যে, যারা লিখতে বা পড়তে পারে না তাদেরকে পড়ালেখা শেখাবে। নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতিমধ্যে সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। তারা প্রতি সপ্তাহে একদিন ওই নারীদের নিয়ে পড়া শেখাতে বসছেন। নারীরা ঘরের কাজ শেষ করে সবাই একত্রিত হয়। খাতা কলম নিয়ে বসে যায়। তারপর অ, আ লেখার চর্চা করেন। এ সম্পর্কে গ্রামের শিক্ষানবীশ একজন নারী মাফিয়া আক্তার বলেন, “পড়া লেহায় কোন লজ্জা নাই। বয়স অইছে দেইখা কোন দোষ আছে ? আমি পড়া লেহা শিখবাম এইডা অইলো বড় কথা। ৩০ বছর পরে কলম ধরছি, মনে অনেক আনন্দ লাগতাছে”। যুব সদস্যরা পালাক্রমে তাদের পড়ান। শিক্ষক শরীফা আক্তার বলেন, “সবার মাঝেই শেখার আগ্রহ অনেক। ঘরের কাজ শেষ করে কখন পড়তে আসবে, কে আগে আসবে, কে সবার আগে লিখতে পারবে এ নিয়ে তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা হয়”।
শেখার কোন বয়স নেই। আগ্রহ আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোন বয়সেই পড়া লেখা শুরু করা যায়।