শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসনের কথা কেউ ভাবেন না

ঢাকা থেকে হেনা আক্তার রূপা

ঢাকা শহরে বস্তি ও নিম্ন আয়ের বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। প্রায় কয়েক হাজার বস্তি রয়েছে এ শহরে। ১৯৭৪ সালে এ শহরে বস্তিবাসীর সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ, যা ২০০৫ এ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখে এবং বর্তমানে তা প্রায় ৫০ লাখে পৌছেছে। ঢাকা নগরীতে প্রতি একরে বসবাস করে ১২১ জন, যা বস্তি এলাকায় ৮৫০ জন। এই শহরের বস্তিবাসী ও নি¤œ আয়ের মানুষরা চরম মানবেতর জীবনযাপন করলেও তাদের আবাসনের কথা কেউ ভাবেন না বলে আজ ঢাকায় বস্তিবাসীদের এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথা বলেছেন। গতকাল বিশ^ বসতি দিবস উপলক্ষে ঢাকার পশ্চিম ধানমন্ডির বেড়িবাঁধ এলাকায় বস্তিবাসীদের উদ্যোগে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেসরকাররি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র আয়োজনে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বস্তিবাসী নেত্রী হোসনে আরা বেগম রাফেজা। সমাবেশে অরও বক্তব্য রাখেন বারসিক’র প্রজেক্ট ম্যানেজার ও পরিবেশ আন্দোলন কর্মী ফেরদৌস আহমেদ, বস্তিবাসী নেতা হারুন অর রশিদ, বারসিক’র সহযোগী সমন্বয়ক নাজমা আক্তার, হেনা আক্তার রূপা, রুনা আক্তার প্রমূখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আজ বিশ্ব বসতি দিবস। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার পালন করা হয় বিশ্ব বসতি দিবস বা ওয়ার্ল্ড হ্যাবিট্যাট ডে। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবারকে বিশ্ব বসতি দিবস হিসেবে ঘোঘণা করে, তার পরের বছর থেকেই বিশ্বব্যপী পালন হয়ে আসছে দিবসটি। প্রতিবছরই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বসতি দিবস। প্রথমবারের প্রতিপাদ্য ছিলো, ‘বাসস্থান আমার অধিকার’। কিন্তু ঢাকা শহর আজ এক মেগাসিটি হলেও বাসস্থানকে অধিকার হিসেবে দেখা হচ্ছেনা, বরং নি¤œ আয়ের মানুষকে পেছনে ফেলে ঢাকার সকল উন্নয়ন অগ্রযাত্রা সূচিত হচ্ছে।’ তারা আরও বলেন, ‘বিশ^ বসতি দিবসে এবছর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। কিন্তু আমাদের নগরকে একটি বৈষম্যপূর্ণ নগর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে দিনদিন, যেটা না টেকসই, না আর্ন্তভূক্তিমূলক। এ থেকে বস্তিবাসী ও নি¤œ আয়ের মানুষরা মুক্তি চায়।’

মানবন্ধনে ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘বারসিক’র বস্তির প্রায় সব ঘরই এক কক্ষ বিশিষ্ট। বস্তিবাসীর অধিকাংশ পরিবারই একটিমাত্র ঘর বা রুম ভাড়া নিয়ে তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। ছোট একটি ঘরে তিন বা চার সদস্য বিশিষ্ট্য পরিবার বসবাস করা, খাবার খাওয়া করা, কাপড় চোপড় রাখা, রান্নার জ¦ালানি রাখা, পরিবারের জিনিসপত্র রাখা খুবই কঠিন কাজ। ভাড়া ২০০০-৩০০০ টাকা। বস্তিবাসীরা যে আয়তনের জন্য ৩০০০ টাকা ভাড়া দেন, আয়তনের দিক থেকে হিসাব করলে তা বনানী-গুলশানের এপার্টমেন্টের ভাড়ার চেয়েও বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারাবছর থাকে মশার উৎপাত। অধিকাংশ বস্তিতে বর্ষাকালে পানি উঠে যায়। তাদের চলাচল করতে হয় পানি কাদা পানির ভেতর দিয়ে। যখন বেশি বৃষ্টিপাত হয় তখন বস্তিবাসীদের ঘরের মধ্যে ময়লা আবর্জনাসহ পানি উঠে যায়। এই মানবেতর জীবন থেকে বস্তিবাসীদের বাঁচাতে হলে তাদের জন্য একটি নিরাপদ আবসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’


বস্তিবাসী নেত্রী হোসনে আরা বেগম রাফেজা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা বস্তিবাসীরা যুগের পর যুগ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি সবার জন্য একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য আবাসনের দাবিতে। কিন্তু সরকার আসে সরকার যায় আমাদের দাবি বাস্তবায়িত হয়না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী নানানভাবে কাজ করছে নানান মানুষের জন্য। আর তাই আমরাও দাবি জানাই ঢাকা শহরের নি¤œ আয়ের মানুষদের জন্য তিনি যেন স্থায়ী আবাসনের একটি ব্যবস্থা করবেন। আর বস্তিবাসীদের আবাসন ব্যতিরেকে কোনভাবেই ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করা সম্ভব না।’
তিনি অবলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে সতেরো শ’ মানুষ ঢাকায় আসে এবং হিসাব করে দেখা গিয়েছে প্রতিবছরে প্রায় ৬ লাখ মানুষ ঢাকা শহরে নতুন করে যুক্ত হয়। নগরের মোট জনসংখ্যার মোট দরিদ্র ৩৫ ভাগ দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র ১০ ভাগ যাদের আয় সাত হাজার টাকার নিচে। এই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে ডিজিটাল বা স্মার্ট কোন বাংলাদেশই সম্ভব না।’
মানববন্ধনে সবার জন্য বসতির দাবিতে নানান প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শতাধিক বস্তিবাসী অংশগ্রহণ করেন। তাদের সকলেরই একটাই বক্তব্য “সবার জন্য শহর” এই স্লোগানকে সর্বজনীন করা এবং বস্তিবাসীদেরও শহরে থাকার অধিকার রয়েছে সে বিষয়কে নিয়ে কাজ করা । মানুষ হিসেবে বসবাসের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার সেটা যেন বস্তিবাসী মানুষের জন্য কার্যকর হয় তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

happy wheels 2

Comments