লোকায়ত পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো
সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল আলীম
প্রকৃতিনির্ভরতা কমে গিয়ে প্রাণীকুলের অস্তিত্ব সংকট যখন চরম পর্যায়ে তখন মানুষ বিভিন্ন প্রাণ-ও প্রাণীর সাথে এক অনবদ্য আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলার অভ্যাস তৈরি করছেন। বিভিন্নভাবে পদ্ধতিতে টিকিয়ে রাখার নিরন্তর চেষ্টা করছেন প্রাণী সম্পদসমুহ। এরকম একটি লোকায়ত পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশি মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা তৈরি করে সফল হয়েছেন গ্রামীণ নারীরা।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিামাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কুলতলী গ্রামের আবেদা বেগম। এই গ্রামের প্রতিটি পরিবার কৃষি কাজের সাথে জড়িত। যেমন-সবজি ও ফল বাগান, গরু, হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়া ও কবুতর প্রভৃতি। গুটি কয়েক পরিবার ব্যতিত প্রায় সকল কৃষক পরিবার দেশি হাঁস-মুরগি লালন-পালন ইত্যাদি প্রাণীসম্পদ লালন পালন ও সংরক্ষণ করে। গ্রামের কৃষাণীরা মুরগি ও হাঁসের ডিম ফুটানোর জন্য হাজল (মুরগির ডিম ফুটানোর লোকায়ত মাটির পাত্র যা ইনকিউবিউটর হিসেবে পরিচিত) ব্যবহার করছেন।
আবেদা বেগম ২০২১ সালে নেটজ বাংলাদেশের অর্থায়নে বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্পের ধুন্দল সিএসওতে যুক্ত হন। প্রকল্পের আওতায় ২০ জন নারী একই ইউনিয়নের ধুমঘাট গ্রামের কৃষি পদকপ্রাপ্ত অল্পনা রানীর কাছ থেকে এই হাজল বানানোর প্রশিক্ষণ নেন। সে অভিজ্ঞতার আলোকে আবেদা বেগম প্রথমবারের মত হাজলে ২০টি মুরগির ডিম দেন বাচ্চা ফোটানোর জন্য। তিনি সেখান থেকে নির্দিষ্ট সময় পরে ২০টি বাচ্চা নিতে সক্ষম হন। তাতে তিনি অনেক খুশি হন।
আবেদা বেগম বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে আমি মেলা ধরনের সুবিধা পাইছি। সবগুলো ডিম ফোটে বাচ্চা হয়। মুরগির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কারণ হাজলে মুরগির খাবার ও পানি থাকে। এজন্য মুরগি হাজল থেকে খাবারের জন্য বাইরে যায় না। ডিমে ভালো ওম পায়। বাচ্চাও সুস্থ-সবল হয়। মা মুরগি আবার বিশ থেকে পঁচিশ দিন পর পুনরায় ডিম দিয়ে থাকে। আগে ডিম দিয়ে বাচ্চা তুলতে সময় নিত সত্তর থেকে আশি দিন। আর এখন ঐ সময়ে ৪ বার বাচ্চা তুলতে পারি।’
আবেদা বেগম ২০২১ সালের শেষে নেটজ বাংলাদেশের অর্থায়নে বারসিক’র পরিবেশ প্রকল্পের ধুন্দল সিএসওতে যুক্ত হয়ে তিনি আয়বৃদ্ধিমূলক সম্পদ হিসেবে দশ হাজার টাকা সিট কাপড়, ৬ টাকার ৭ প্রকার বীজ, ১১৫ টাকার দুইটি ছফেদা ও কদবেলের চারা, ৩৩৭৯ টাকার হাঁস, মুরগি নেন। তিনি হাঁস, মুরগী নিয়ে আগেও ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতেন কিন্তু অনেকগুলা ডিম নষ্ট হত এবং মুরগি একবারের পরে দ্বিতীয় বার ডিমে বসতেন না।’ হাজলে তার খুবই উপকার হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আবেদা বেগমের মত পরিবেশ প্রকল্পের বিভিন্ন সিএসওর নারীরা হাজলে ডিম থেকে হাসমুরগীর বাচ্চা ফোটানোর সিদ্ধান্ত পরিকল্পনা নিয়েছেন। তারা মনে করেন এভাবে ডিম ফুটানোর মাধ্যমে পারিবারিক আয় বাড়ানোর একটা দারুণ সুযোগ।
হাজল ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে যেমন পারিবারিক আয় সাশ্রয় হবে অপরদিকে তেমন পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি দেশীয় প্রাণী সম্পদ সম্পসারণ ও সুরক্ষা পাবে।