পূণ্যার্থীতে মুখরিত যমুনার তীর
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥
হিন্দু ধর্মীয় উৎসব বারুনীর পূণ্যস্নান করতে আসা পূণ্যার্থীদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাটের যমুনা নদীর পাড়। পঞ্জিকা অনুযায়ী বারুনী ন্সান নির্ধারিত দিন বুধবার। এ স্নানে উৎসব বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত চলতে থাকে। আরিচা ঘাটের যনুমা নদীর তীরে হিন্দু পূণ্যার্থীদের ভীড় সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। যথারীতি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে হাজার হাজার পূণ্যার্থী নারী-পুরুষ অংশ নিচ্ছেন এ স্নান উৎসবে। শ্রী-শ্রী গঁঙ্গা মাতার পুঁজো করে নদীতে নেমে স্নান করে পবিত্র হচ্ছেন হিন্দু ধর্মালম্বীরা। মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশ তিথি অনুযায়ী গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৭মিনিট থেকে বারুনি স্নান শুরু হয়ে বুধবার সকাল ১১টা পর্যন্ত স্নান উৎসব চলতে থাকে।
আরিচা ঘাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রী নেপাল কুমার দত্ত জানান, আরিচা ঘাটের যমুনা নদীর তীরে প্রায় আড়াইশ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথি অনুযায়ী বারুনী গঙ্গাস্নান উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা এবং ঢাকার ধামরাই, পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে পাপ মোচনের আশায় হিন্দু পূণ্যার্থীরা এখানে আসছে স্নান করতে। হিন্দু পুরুহিতরা যমুনা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে তাদের ভক্তদেরকে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে স্নান করিয়ে শুদ্ধ করাচ্ছেন। হাজার হাজার নারী-পুরুষ আবালবৃদ্ধাবনিতা পবিত্র এ স্নানে অংশ নিয়ে শুদ্ধ হচ্ছেন। স্নানের পূর্বে শ্রী শ্রী গঙ্গা মাতর পুঁজার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও লোকনাথ সেবা সংঘ শিবালয় উপজেলা শাখা। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে স্নানের পরে স্নান উৎসবে আগত পূণ্যার্থীদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে।
পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে শিবালয় থানা পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ বাহিনী। এছাড়া বারুনী স্নান ও মেলার সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদ ও বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতি। এদিকে এ স্নান উৎসবকে ঘিরে বুধবার থেকে তিন দিনব্যাপী মেল শুরু হয়েছে। প্রতিবছর তিন দিনব্যাপী এ মেলা হওয়ার কথা থাকলেও আবহাওয়া ও সার্বিক পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে সাতদিন পর্যন্ত মেলা চলতে থাকে। এবারও অনুকুল পরিবেশ থাকলে মেলা সাতদিন চলবে বলে জানা গেছে।
আরিচার যমুনা নদীর তীরে বসা ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য নাগরদোলা, ট্রেনগাড়ি, যাদু প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন রয়েছে। খেলনা, প্রসাধনী, সাজসজ্জার নানা দোকান, কাঠ, বেত, মাটি, লোহার তৈরি আসবাবপত্রসহ গৃহকাজে ব্যবহার্য্য সামগ্রীর দোকান, মিষ্টি, বিন্নিখৈই, সাজ, বাতাসাসহ নানা ধরনের খাদ্য সামগ্রীর দোকান বসেছে এ মেলায়।
শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতির পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ ও শিবালয় থানার পুলিশ প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করছেন। মেলায় আইন-শৃংখলা ঠিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরষদের গ্রাম পুলিশ ও বন্দর সমিতির নিয়মিত পাহারাদার দিয়ে দিনরাত টহল দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতির সদস্যরা দূর-দুরান্ত থেকে মেলায় আগত দোকানীদের সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং তাদের কোন সমস্যা হলে তা দ্রুত সমাধান করে দিচ্ছেন। শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতির প্রচার সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, মেলায় আগত দোকানী ও পূণ্যার্থীদের কাছ থেকে কেউ কোন প্রকার চাঁদাবাজি করলে এবং সেটা প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের নিকট সোর্পদ করা হবে।
এই উৎসব হিন্দু ধর্মালম্বীদের হলেও মেলাকে ঘিরে হিন্দু-মুসলমানদের সৌহার্দ্যপূর্ণ মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। সকলের সহযোগিতায় এ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রাণপন চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।