ভিন্ন অভিজ্ঞতায় প্রান্তজনের মাঝে বিলবোর্ড স্থাপন

মো. নজরুল ইসলাম মানিকগঞ্জ থেকে
বিশ্ব বরেণ্য মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার অমর বাণী এবং মানুষের ন্যায্যতা ও অধিকার ভিত্তিক কিছু কথা সাথে নিয়ে মানিকগঞ্জ জেলার সদর,সিংগাইর,হরিরামপুর ও ঘিওর উপজেলায় বেসরকারি সংগঠন বারসিক সংশ্লিষ্ট কমিউনিটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে বিলবোর্ড লেখালেখি এবং ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সময়কালের মধ্যে নারীবান্ধব বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক চর্চা ও ন্যায্যতার সমাজের জন্য প্রচারমূলক বিলবোর্ড স্থাপন কর্মসুচি ২০২৩ বাস্তবায়ন করা হয়।

গত ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ মানিকগঞ্জ স্যাক কার্যালয় থেকে রওনা হয়ে সিংগাইর বায়রা ইউনিয়নের শিবপুর মোড় ও বাইমাইল কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিলবোর্ড টাঙানো শুরু করলাম। ঘোনাপাড়া মোরে এসে থামলাম এবং টাঙানোর সময় একজন যুবক বাণীগুলো পড়ে ইতিবাচক মন্তব্য করলেন এবং সব জায়গায় ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলে চলে গেলেন। তারপর সিংগাইর উপজেলা পরিষদ, সিংগাইর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সিংগাইর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সিংগাইর সরকারি কলেজ,বায়রা কলেজ এবং বায়রা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিলবোর্ড টাঙানোর সাময় আগ্রহী শিক্ষক ও বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত দপ্তরীদের সহযোগীতা আমাদেরকে বেশ প্রাণিত করে।

তারপর গত ৪ ফেব্রুয়ারি একইভাবে মানিকগঞ্জ স্যাক কার্যালয় থেকে রওনা দিয়ে বান্দুটিয়া আফতাব উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় শুরু করলাম। বান্দুটিয়া হাইস্কুল থেকে টাঙিয়ে আসার সময় শিক্ষকদের ডাক পেলাম। এদিকে স্কুলে এসেম্বলি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রায় শিক্ষক আমাকে চিনে বিধায় সাহসও আছে। মৌলভী স্যার হেসে বলেন, ‘বারসিক’র সৃজনশীল কাজ আমার পছন্দ হয়, তুমি স্কুলের ভিতরে বাল্য বিবাহের ওপর প্রদত্ত বিলবোর্ডটি টাঙিয়ে দাও।’ টাঙিয়ে দিয়ে বিদায় নিলাম। তারপর মানিকগঞ্জ পৌরসভার বর্ডার পৌলিতে টাঙানের সময়ও বেশ মানুষজন জড়ো হলো এবং সবাই লেখা পড়ে বেশ খুশি হলেন। তারপর তরা হাটে গিয়ে থামলাম এবং সহযাত্রী নিপেন দাস ও নাইলুদ্দিন নিয়ে চা নাস্তা করলাম। এরপর বানিয়াজুরীতে এসে সহকর্মী সুবীর কুমার সরকারের সাথে সাক্ষাত করে বানিয়াজুরী সরকারি স্কুল এন্ড কলেজে বিলবোর্ড টাঙানোর সময় দপ্তরি এগিয়ে এলেন এবং এগুলো দেখে স্যারকে ডাকলেন। স্যার এসেই আমাকে নাম ধরে ডাক দিয়ে বলেন প্রচারমূলক কাজ ভালো কওে টাঙাতে হবে। বিশেষ করে বেগম রোকেয়ার বাণীগুলো যতেœর সহিত টাঙাতে হবে। স্কুলের ভিতরে কিছু লাগিয়ে দিও, ওকে বলে বিদায় নিলাম। তারপর আমার এলাকা জাবরা শহীদ স্মরণিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় গেইটে দুটি বিলবোর্ড স্থাপন করে মুন্নু গেইটে চলে এলাম। একটু চা বিরতি নিয়ে মুন্নু ইন্টান্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ গেইটে বিলবোর্ড টাঙানোর সময় প্রতিষ্ঠান দপ্তরির সহযোগিতা পেলাম। তারপর জয়নগর মাঝিপাড়া ও জয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে টাঙানোর সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভিড় জমে গেলো এবং তাদের সহযোগিতায় মুগ্ধ হলাম। এভাবে নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, নবগ্রাম আশ্রয়ন প্রকল্প ও সরুপাই মোরে বিল বোর্ড টাঙিয়ে বিরতি নিলাম এবং বাজারে প্রান্তজনের সাথে সমকালিন বিষয়ে আলাপন হলো। এরপর দিঘুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘুস্তা দিদার মাহমুদ উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে পুটাইল বাজারে আসলাম। সামান্য বিরতির পর খাবাশপু আদর্শ কলেজে আসলাম। সহকর্মী মুকতার হোসেনের সাথে কথা বলে কলেজের ভিতরে ও বাইরে দুটি বিলবোর্ড স্থাপন করে ঘাটে দুপুরের খাবার খেয়ে বালিরটেক কালিগঙ্গা সেতু দিয়ে সানমান্দা ঘাটে চা বিরতি দিয়ে কাফাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মোড় ও লেমুবাড়ী বিনোদা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয় গেইটে দুটি ও রাস্তায় একটি বিলবোর্ড টাঙানোর সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উচ্ছাস আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে।


তারপর বেতিলা ইউনিয়ন পরিষদে এসে টাঙানোর সময় গ্রাম পুলিশ চৌকিদার ভিন্ন জায়গায় লাগানোর জায়গা করে দিলেন তারপর বেতিলা স্কুল এন্ড কলেজে সহকর্মী গাজী শাহাদত হোসেন বাদল এর সাক্ষাত ও বাকিগুলো তার নেতৃত্বে বেতিলা, বাঙড়া, বিপ্র বেতিলা ও আউটপাড়ায় টাঙানো হয়। পরদিন গত ৫ ফেব্রুয়ারি একইভাবে মানিকগঞ্জ শহরস্থ স্যাক কার্যালয় থেকে রওনা দিয়ে খানবাহাদুর কলেজ স্তাপন করে মত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের টাঙানোর সময় স্কুলের একজন শিক্ষক হাজির হলেন এবং বারসিক’র নাম দেখে টাঙানোর জায়গা করে দিলেন এবং ড. অমর্ত্য সেন স্মৃতি বিজড়িত মত্তের মঠের পাশেও একটি বিলবোর্ড স্থাপন করে বেশ ভালো লাগলো। তারপর মত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে জেকে উচ্চ বিদ্যায়, এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত বাসুদেবপুর মুক্তিযুদ্ধ উচ্চ বিদ্যলয়ের শিক্ষক মো.ফারুক স্যার সহায়তায় বিলবোর্ড স্থাপন করে বাসুদেবপুর টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষক মো.কায়সার হোসেনের সাথে সাক্ষাত ও বিলবোর্ড স্থাপন করে বিকেজি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিলবোর্ড স্থাপন করে অরঙ্গবাদ নতুন বাজারে দুপুরের বিরতি দিয়ে নবারুন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কমরেড মজিবুর রহমান স্যার এর সাথে কথা বলে বিদ্যালয়ে বিলবোর্ড স্থাপন করে মেতুরা উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে আউটপাড়ায় এসে সহকর্মী গাজী শাহাদত হোসেন বাদল কে দায়িত্ব দিয়ে বিদায় নিলাম।


তারপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ একইভাবে স্যাক কার্যালয় ও দাশরা চার রাস্তার মোর থেকে শুরু করে দাশরা, সরুন্ডি ও উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্য নির্মাতা হীরালাল সেন স্মৃতি বিজড়িত বকজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নালরা ও বেতিলা জমিদার বাড়ি রোডে হয়ে আফরোজা রমজান বালিকা মাদ্রাসায় দপ্তরির সহযোগীতায় বিলবোর্ড স্থাপন করে কুশেরচর ইসমাইল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিলবোর্ড স্থাপন করে সামান্য চা বিরতি নিয়ে উরিয়াজানি ও বার্থা মোড়ে একটি করে বিলবোর্ড টাঙিয়ে কেওরজানি সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হুরুননাহার উচ্চ বিদ্যালয় এবং বাঙ্গরায় বারসিক নিয়ন্ত্রিত জাত গবেষণা প্লট এলাকায় কয়েকটি বিলবোর্ড স্থাপন করে সহকর্মী ইউসুফ আলীর বাড়িতে দুপুরের বিরতি নিয়ে নয়াকান্দি মোর, দোয়াত আলী দাখিল মাদ্রাসা ও বেগম জরিনা কলেজে বিলবোর্ড স্থাপন করে চা বিরতি দিয়ে বেউথা কালিগঙ্গা ব্রীজে আসলাম। বেউথায় কারিগঙ্গা নদীর পারে আশ্রয়ন এলাকা ও দিশারী স্কুল হয়ে আন্ধামানিক ও পাছবারইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিলবোর্ড টাঙানোর সময় বেশ কিছু নারীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে একজন নারী বলেন নারীদের অধিকার ও সম্মান কি শুধু বাইরেই থাকবে না ভিতরেও হবে। অর্থাৎ তারা ঘরে বাইরে সর্বত্রই নারীর অধিকার নিশ্চিতের দাবি করেন। তারপর চর বেউথায় বারসিক কমিউনিটি ও চর বেউথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিলবোর্ড স্থাপন করে বেউথা ব্রীজ সংলগ্ন চা স্টলে সমাপনি বিরতি দিয়ে বিদায় নিলাম।


বিশাল এই কর্মযজ্ঞে মাঠ পর্যায়ের মানুষের ব্যাপক সারা উচ্ছ্বাস পেয়েছি। বলতে গেলে কারো দ্বারা তেমন কোন নেতিবাচক আচরণের শিকার হইনি বরং যথেষ্ট ইতিচবাচক আচরণ ও সহযোগিতায় আমাদেরকে তারা মুগ্ধ করেছেন। আমরা আশা করি, প্রচারমুলক এই বিলবোর্ডের মাধ্যমে সকল মানুষ তথা নারীর ক্ষমতায়ন জানতে ও অধিকার আদায়ের সচেতনতার পথ আরো বেগবান করবে। সর্বোপরি সচেতনতামূলক বিলবোর্ডগুলোতে নারীবান্ধব বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক চর্চার সমাজ বিনির্মাণের পথকে আরো আলোকিত করবে।

happy wheels 2

Comments