নেদারল্যান্ডের জারবেরা এখন মানিকগঞ্জের মাটিতে
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক
ভারত ও নেদারল্যান্ডের প্রিয় ফুল জারবেরা এখন ফুটছে মানিকগঞ্জের মাটিতে। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা এই ফুল রাজধানীর বিভিন্ন ফুলের দোকানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। গন্ধহীন হলেও এই ফুলের নান্দনিক সৌন্দর্য্যে অভিভূত ফুল প্রেমিকরা ।
২০১২ সাল থেকে স্পেক্ট্রা ফ্লাওয়ার গার্ডেনে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন। তাঁর ফোটানো নজরকাড়া জারবেরা রাজধানীর ফুলের দোকানগুলোতে শোভা পায়। গন্ধহীন হলেও জারবেরার নান্দনিক সৌন্দর্য্যে অভিভূত ফুল প্রেমিরা।
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন ধুতরাবাড়ি এলাকায় ৫ একর জমির ওপর আফতাব উদ্দিনের এ গার্ডেন । শুরুতে বাগানে নানা বৃক্ষরাজি-ফুল ও ফলের গাছ চাষ করেন। কিন্তু বছর শেষের আগেই জারবেরার প্রতি ঝুকেন তিনি। প্রথমে ১ বিঘা জমিতে গ্রিনহাউজ তৈরি করেন। এরপর মাটি প্রস্তুত করে ফুলের চারা রোপণ করে প্রয়োজনীয় তাদারকি শুরু করেন আফতাব। শুরুতে খরচ হয় ১৫ লাখ টাকা। বর্তমানে বাগানে আড়াই বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন এ বাগান থেকে ২ হাজার ফুল রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে যাচ্ছে। প্রতিটি ফুল বিক্রি হচ্ছে ১৫/২০ টাকায়।
বিয়ে, জন্মদিন, বসন্ত উৎসব, পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফাস্ট নাইটসহ নানা উৎসবে এ ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় প্রতি পিস ফুল বিক্রি হয় ১৪-১৫ টাকায়। শীত মৌসুম জারবেরা চাষের উপযুক্ত সময়। এ ফুলের প্রধান শত্রু বৃষ্টি। সোম থেকে বৃহস্পতি সপ্তাহে চার দিন ফুল তোলা হয়। এ ফুলের পাইকার বাজার রয়েছে শাহবাগ, গুলশান ও বনানীতে।
বাগানের ইনচার্জ মো. আমিরুজ্জামান চৌধুরী জানান, বাগানে হলুদ, সাদা, কমলা, পিংক রঙ মিলে এগারো প্রজাতির জারবেরা ফুল রয়েছে। এর মধ্যে ব্যালাঞ্চ, ইনট্রান্স, ডেনা, ইলেন, গোল্ড স্মিথ, রোজালিন, ফিরোজা, কুল্ড, রিয়েল, ডুনি, আর্টিষ্ট, এ্যডেন চূড়া প্রধান আকর্ষণ।
তিনি বলেন, “জারবেরা ফুল চাষ করতে প্রথমে গ্রিন হাউজ বানাতে হয়। এরপর জৈব ও রাসায়নিক সার দিয়ে মাটি প্রস্তুত, ফুলের চারা রোপণ করে তা পরিচর্যা করতে হয়। এজন্য বেড বানাতে হয়। প্রতি বেডের দৈর্ঘ্য ২৪ ইঞ্চি। বেডের মাঝখানে ১৫ ইঞ্চি দুরত্ব রাখতে হয়। আর চারার লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি হয়। প্রতি চারার মাঝখানে ১৩ ইঞ্চি দূরত্ব রেখে চারা রোপণ করতে হয়। জারবেরা ফুলের চারা রোপণের ২/৩ মাসের মধ্যে ফলন শুরু হয়। একাধারে ৩ বছর পর্যন্ত ঐ গাছে ফুল ধরে।
তিনি জানান, নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত ফুল কোম্পানি ফ্লোরিষ্ট ও ভারতের এ কুমার যৌথভাবে কে এফ বায়ুপ্ল্যান্ট নামের টিস্যু কালচার জারবেরা ফুলের উৎপাদন করে। মূলত তাদের কাছ থেকে চারা কিনে এ ফুলের বাগান করা হয়েছে। প্রতিদিন এ বাগান দেখতে ভিড় করছে অনেকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলিমুজ্জামান মিয়া জানান, জারবেরা ফুল চাষে মূলধন বেশি লাগে। এ ফুল চাষে আগ্রহীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হবে।