নীল রঙের হরকচ ফুল
সাতক্ষীরা থেকে এস.এম নাহিদ হাসান
কর্মময় জীবন থেকে ছুটি নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবনে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ ম্যানগ্রোভ বনে গাঢ় সবুজের সমারোহ। শুধু সবুজ আর সবুজের মেলা। হরেক রকমের জীবজন্তু, পাখ-পাখালি, আর কীট-পতঙ্গের সাথে দেখা মিলবে এখানে।
সুন্দরবনে বেড়াতে গিয়ে বরসা রিসোর্টে উঠেছিলাম। ছিমছাম পরিবেশ বেশ ভালোই লাগছিলো। বিকালে ঘুরতে বের হলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো হরকচ গাছ। এখানে যে হরকচ গাছ প্রথম দেখেছি এমনটি নয়। সুন্দরবন ঘেঁষা সাতক্ষীরা জেলাতে বাড়ি হওয়ার কারণে হরকচ গাছের সাথে আগেও দেখা হয়েছে। কিন্তু গাছের ফুল এবারই প্রথম দেখলাম।
সুন্দরবনের কলাগাছি ইকো পর্যটন কেন্দ্রে প্রচুর হরকচ গাছ দেখা যায়। হরকচ ফুলের সৌন্দর্য নান্দনিক। সবুজ বনে নীল রঙের ফুল দূর থেকে সবার নজরে আসে। দেখতে অসাধারণ এই হরকচ ফুল। গাছের শাখা থেকে বের হওয়া ছোট্ট শীষের মাথায় ফুল ফোটে। ফুলের রঙ নীল ও হালকা সাদা। হরকচের পাতা গাঢ় সবুজ।
হরকচ ফুল নীল হওয়াতে বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকাতে নীল ট্যাংরাকাঁটা নামে বেশ পরিচিত। এছাড়া হরকচের আরো কিছু নাম আছে হরগোজা, হাড়কুচ, হাড়গোজা গুল্ম, কটকি ইত্যাদি। এ গাছের পাতা খুব শক্ত হয়। হরকচ ফুলে প্রচুর উৎকৃষ্ট মানের মধু পাওয়া যায়। তাই মৌমাছির আনাগোনা চেখে পড়ার মত। নিজেকে রক্ষা করার জন্য গাছগুলোর পাতার গোড়ায় ও অগ্রভাগে কাঁটা থাকে। ফুল থেকে সবুজ রঙের ফল হয়। ফুল ও ফল মিলিয়ে দেখতে কিছুটা রজনীগন্ধা ফুলের স্টিকের মত লাগে। হরকচ গাছের কাটা অনেক শক্ত হয়।
হরকচ একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। লবণাক্ত জলের চলাচল আছে এমন খাল-বিল-নদী-নালার পাশে গাছটি চোখে পড়ে। অতিরিক্ত লবণাক্ততায় গাছটি বেড়ে উঠতে ও টিকে থাকতে পারে। এ গাছ কিছুটা সোজা হয়ে, লতার মত বা চারপাশে ছড়িয়ে বেড়ে উঠতে পারে। গাছটি সাধারণত উপকূলীয় ডোবা, জলাভূমি ও সমুদ্র সৈকতে গাছগুলো জন্মায়। বাংলাদেশে হরকচের দুটো প্রজাতি পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Acanthus illcifolius।
হরকচ কেবল ভারতীয় উপমহাদেশেই নয় এশিয়া মহাদেশের প্রায় প্রতিটি দেশে এবং অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগিনিতেও এর দেখা মেলে। সমুদ্র উপকূলে খালে নালায় লোনা পানির ধারে গাছটির জন্ম হয়। হরকচ গাছ লাগাতে দেখা যায় না। নিজে জন্মে ফুল, ফল দিয়ে অনেক দিন পর মারা যায়।
কলবাড়ি মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় শাহদাৎ হোসেন বলেন, “হরকচ পাতার রস বাতের ব্যথা সারতে পারে। এছাড়া এ গাছের কা- কাশি, হাঁপানি দূর করে। অনেক উঝা সাপের বিষ নামাতে এর শিকড় কাজে লাগান।”